বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীতার খবরটি তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে মাশরাফির ভক্ত-সমর্থক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে। রোববার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল রাজনীতিতে মাশরাফির যোগ দেয়ার খবরটি।
নড়াইল-২ আসন থেকে নির্বাচন করার জন্য আওয়ামী লীগের ধানমন্ডির কার্যালয়ে গিয়ে মনোনয়নপত্র নেন মাশরাফি। তার এই সিদ্ধান্তকে অনেকে সাধুবাদ জানালেও সামাজিক মাধ্যমে তাঁর সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ক্ষোভ, দু:খ বা হতাশা প্রকাশ করার মানুষের সংখ্যাই ছিল বেশি।
নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করা অধিকাংশ মানুষই মনে করেন, ক্রিকেট থেকে পুরোপুরি ‘অবসর’ নিয়ে রাজনীতিতে যোগ দেয়া উচিত ছিল মাশরাফির। যদিও পেশাদার খেলা চালিয়ে যাওয়া অবস্থাতেই সরাসরি রাজনীতিতে যোগ দেয়ার উদাহরণ বিশ্বের ক্রীড়াবিদদের মধ্যে নতুন নয়।
ক্রিকেটারদের মধ্যে শ্রীলঙ্কার সনাথ জয়সুরিয়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর না নিয়েই শ্রীলঙ্কার ২০১০ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন; পরবর্তীতে তিনি ঐ নির্বাচনে বিজয়ীও হন।
মাশরাফিকে ঘিরে আলোচনা-সমালোচনা
বিবিসি বাংলার ফেসবুক পেইজে ফারজানা রিমি মন্তব্য করেন, ‘দেশ যখন ভয়ানকভাবে বিভক্ত, এক ক্রিকেটই ছিল সবার অভিন্ন ভালবাসার জায়গা। রাজনীতির বাইরে থেকে এক মাশরাফি একটা কথা বললে সবার মাঝে যে প্রতিক্রিয়া ঘটতো, এখন কি তা হবে? দেশকে তো মাশরাফির আরও অনেক কিছু দেয়ার ছিল। সবকিছুকে কেন আমরা রাজনীতিকরণ করে ফেলি?’
‘রাজনীতি তোমার মত ব্যক্তির জন্য না বস’
অনেকেই মাশরাফির আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। আলী মোহাম্মদ হোসেন নামে একজন লিখেছেন, ‘নেতা যদি হতেই চাও ইমরান খানের মত আলাদা দল গঠন করে প্রধানমন্ত্রী হও, আমরা আছি তোমার সাথে।’
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটভূমির বিচারে রাজনীতিবিদদের ভাবমূর্তি ও সাধারণ মানুষের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন সময়ে। অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, রাজনীতি যোগদান করলে মাশরাফির যেই ভাবমূর্তি সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে তা অনেকাংশে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
রমজান রাজ নামের একজন লিখেছেন, ‘আমি চাইনা মাশরাফি বুড়ো বয়সে জেলে যাক, আমি চাই না দেশের সবচেয়ে বড় সুপারস্টার, ক্লিন ইমেজের মানুষটির দিকে আংগুল তাক করে কেউ কটু কথা বলুক!’
পরিশেষে তিনি যোগ করেছেন, ‘দেশের রাজনীতি তোমার মত ব্যক্তির জন্য না ‘বস’। প্লিজ ফিরে এসো ১৬ কোটি মানুষের হৃদয়ে।’
‘রাজনীতিতে আসা উচিত, এরাই দেশকে বদলাবে’
তবে বিপুল সংখ্যক মানুষ সমালোচনা করলেও মাশরাফির সিদ্ধান্তের সমর্থন দেয়ার মানুষও কিন্তু কম না। অনেকেই মাশরাফির রাজনীতিতে যোগ দেয়ার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, মাশরাফির মত জনপ্রিয় একজন ব্যক্তিত্ব রাজনীতিতে যোগ দিলে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের ধারা পাল্টে যাবে।
আরমান মালিক লিখেছেন, ‘মাশরাফির মত ভাল লোকগুলো রাজনীতিতে আসা উচিত, এরাই দেশকে বদলাবে!’
আরেকজন মন্তব্য করেছেন, ‘একজন ভালো মানুষ দলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এতো চিন্তার কিছু নেই। আমরা তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি, যাতে সবার সামনে থেকে দেশের জন্যে নেতৃত্ব দিতে পারে।’
২০১৯ বিশ্বকাপ ও রাজনীতি
অনেকে আবার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ২০১৯ বিশ্বকাপের আগে মাশরাফি রাজনীতিতে যোগদান করলে খেলায় তাঁর মনোযোগ ব্যহত হতে পারে।
তবে নির্বাচন করলে বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স প্রভাবিত হবে কি না, এবিষয়ে ভক্ত-সমর্থকরা যতটা চিন্তিত তার চেয়ে বেশি মাথাব্যাথা নিশ্চয়ই বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের। আর এনিয়ে যতই আলোচনা-সমালোচনা হোক না কেন, রাজনীতিতে যোগ দেয়া বা না দেয়া যে আসলে মাশরাফির একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়, এটিও দিনশেষে মনে রাখা উচিত সবার।