ছেলে রুশদী, স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসীকে নিয়ে শহিদুল কিরমানি রনির ছিল ছোট্ট একটি সাজানো গোছানো পরিবার। স্বামী-স্ত্রীর বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি পাশাপাশি হাসিখুশি-স্বাচ্ছন্দ্যেই কেটে যাচ্ছিল দিন। কিন্তু ভয়াবহ এক আগুন একে একে কেড়ে নিলো ওই ৩ তাজাপ্রাণ। নিভে গেল একটি পরিবারের আলোর প্রদীপ। সবশেষ সোমবার (২ মার্চ) সকালে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলেন শহিদুল কিরমানি রনি।
তার মরদেহ নিতে এসে স্বজরা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলো, ইস্কাটনের দিলু রোডের বাসায় পরিবারটি শুধু স্মৃতিই রেখে গেল। যা আমাদের অনন্তকাল কাঁদিয়ে বেড়াবে। বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন রনি। অনেক স্বপ্ন নিয়ে ময়মনসিংহে গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় আসেন। কষ্টে করে চাকরিটি পেয়েছিলেন। এক সময় বিয়েও করেন। বিয়ের পর তাদের ঘর আলো করে আসে ছোট্ট রুশদী। ভালোই কেটে যাচ্ছিল তাদের ছোট্ট সংসার। বোঝাপড়া থেকে পরিবারটির তেমন অভাব-অনটনও ছিল না। কিন্তু কে জানে তাদের এভাবে পৃথিবী থেকে চলে যেতে হবে।
সরেজমিন সোমবার (২ মার্চ) দুপুরে মগবাজার দিলু রোডের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, আসবাবপত্র থেকে এমন কোনো কিছু নেই যা আগুনে পোড়েনি। পোড়া গন্ধ এখনও যায়নি। নিহতের স্বজনদের জন্য স্মৃতি রাখার মতো কিছুই নেই।
ওই বাসার দারোয়ান বলছিলেন, স্যার খুব ভালো মানুষ ছিলেন। সকালে অফিসে যেতেন, আর আসতেন রাতে। পরিবার-পরিজন নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করতেন। কোনদিন তাদের ঝগড়াও শুনিনি।
২৭ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) মগবাজার নিউ ইস্কাটন দিলু রোডের ৫তলা ভবনের গ্যারেজ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে আগুন তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটেও ছড়িয়ে পড়ে। এতে শহিদুল কিরমানি ও তার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস দগ্ধ হন। পরে ওই ভবনের সিঁড়ি থেকে শিশু রুশদীর মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এরপর রোববার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসী (৩৪) মারা যান।
গত কয়েকদিন আগেই শহিদুল কিরমানি রনি হাসপাতাল বেডে শুয়ে স্বজনদের কাছে কান্না জড়িত কণ্ঠে নিজেই বলছিলেন, বাবু তো নেই আমি জানি। জান্নাতও মারা যাবে, আমিও হয়তো বাঁচবো না। আমার জন্য দোয়া করো। এমন কথার একদিন পরেই গতকাল সকালে অগ্নিদগ্ধ শহীদুল কিরমানি রনি চলে গেলেন স্ত্রী সন্তানদের কাছে। না ফেরার দেশে।