খেলা হলো মাঠে, পরীক্ষার হলে নয়…

শামসুন্নাহার ময়মনসিংহের কলসিন্দুর হাই স্কুলমাঠে খেলার পাশাপাশি লেখাপড়ায় মনোযোগী আঁখি-তহুরারা। বর্তমানে মেয়েদের ফুটবল লিগ চলছে। আর ওরা তিনজন এসএসসি পরীক্ষা শেষ করেই খেলতে নেমেছেন! সদ্যই (শনিবার) এসএসসি পরীক্ষা শেষ করে আজই মাঠে নেমেছেন। ডিফেন্ডার আঁখি ও বড় শামসুন্নাহার এবং স্ট্রাইকার তহুরা খাতুনের কাছে খেলার পাশাপাশি লেখাপড়াটাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।

এসএসসি পরীক্ষার জন্য তারা ঠিকমতো অনুশীলনও করতে পারেননি। পরীক্ষা শেষ হতেই যতটুকু ফিটনেস আছে তা নিয়েই প্রতিপক্ষের ওপর চড়াও হয়ে খেলেছেন তিনজন। এর মধ্যে আঁখি ও তহুরা তো লিগে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই জোড়া গোল পেয়েছেন।

বিকেএসপিতে বছর কয়েক আগে ভর্তি হয়েছেন আঁখি। মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। পরীক্ষার টেবিলে লিগ নিয়েও কম চিন্তা করতে হয়নি। কখন পরীক্ষা শেষে মাঠে নামবেন, এ নিয়ে ছিলেন উদগ্রীব। স্পার্টান এমকে গ্যালাকটিকো সিলেট এফসির বিপক্ষে জোড়া গোল করে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। আঁখি নিজেই বলেছেন, ‘পড়াশোনা করছি। যতটুকু পারছি ভালো পরীক্ষা দেওয়ার। অনেক সময় পাশের জনের কাছ থেকে সাহায্য নিয়েছি! আসলে খেলাধুলার সঙ্গে লেখাপড়াটা চালিয়ে নিতে পারলে নিজের জন্যই ভালো। তাই পরীক্ষা শেষ করেই মাঠে খেলতে পেরে ভালো লাগছে।’

আঁখির লক্ষ্য আরও বড়, ‘পরিবার ও আমার স্বপ্ন সেনাবাহিনীতে চাকুরি করবো। যতদূর সম্ভব লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চাই।’

বড় শামসুন্নাহার ময়মনসিংহের কলসিন্দুর হাই স্কুল থেকে পরীক্ষা দিয়েছেন। পরীক্ষার হলে তাকে মজার কথাও শুনতে হয়েছে। তার ভাষায়, ‘আমি যখন পরীক্ষা দিয়েছি। তখন স্যাররা আমাকে চিনতে পেরেছে। আমি যে একজন ফুটবলার। কিন্তু অন্য কারও কাছ থেকে প্রয়োজনে সাহায্য নেওয়ার সুযোগটা দেননি স্যাররা। স্যাররা বলেছেন,“খেলা হলো মাঠে। এখানে নয়।” তাই আমাকে দেখার সুযোগ দেওয়া হয়নি! তবে স্যাররা এমনিতে বেশ উৎসাহ দিয়েছেন।’

ফল কেমন হবে, তা নিয়ে চিন্তিত এই ডিফেন্ডার, ‘আগে সব সময় ক্যাম্পে ছিলাম। অনুশীলন শেষে পড়তে হতো। অনেক সময় ঘুম চলে আসতো। তবে এবার পরীক্ষা ভালো হয়েছে। রেজাল্ট আসার পর ঠিক করবো ভবিষ্যতে কী করতে চাই। পরীক্ষার জন্য আমি লিগের প্রস্তুতিও ঠিকমতো নিতে পারিনি।’

একই জেলার ধোবাউড়া থেকে মানবিক বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিয়েছেন তহুরা খাতুন। তারও রয়েছে মজার অভিজ্ঞতা,‘পরীক্ষার কারণে অনুশীলন ঠিকমতো হয়নি। পরীক্ষা মোটামোটি হয়েছে। সেখানেও স্যাররা বলেছেন, ‘পরীক্ষার সময় পরীক্ষা। খেলার মধ্যে খেলা।” রেজাল্ট কী হবে তা ওপরওয়ালা জানে। ছোটবেলা থেকে খেলা পছন্দ আমার। যদি ফেলও করি তাহলে ফুটবল খেলে যাবো। সব বাবা-মা চায় সন্তান ভালো করুক। আমিও সেটি চাই।’

Share this post

scroll to top