ফেনীর মেয়ে খালেদা- গর্ব মোদের আলাদা’ এমন অসংখ্য রাজপথ কাঁপানো শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হতো ফেনীর প্রত্যন্ত এলাকা। সময় পাল্টেছে । রাজনীতি আর রাজপথে নানা মেরুকরণে বর্তমানে বিএনপি নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে বন্দিদশায় জীবন কাটছে । বিপুল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে বার বার পরাজিত করে চার বার ফেনী ১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি । আসন্ন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেও তিনি কারাবন্দি। কারাবন্দি জীবন থেকে মুক্ত খালেদা জিয়াকে নিয়েই আগামী নির্বাচনে ওই আসনে নির্বাচন করতে চায় বিএনপির নেতাকর্মীরা । রোববার ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণার পর থেকে সাধারণ নেতাকর্মীরা ধানের শীর্ষ প্রতীকের প্রার্থী নিয়ে উদ্বিগ্ন। তবে, তাদের দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বাইরে অন্য কোনো প্রার্থীর কথা তারা ভাবছেন না বলেই নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। তারা এখনো আশাবাদী তাদের নেত্রীকে প্রার্থী হিসেবে পাবেন, অবাধ নিরপেক্ষ ভোটের মাধ্যমে ফেনী ১ আসনে ধানের শীর্ষ প্রতীককে বিজয়ী করে আনবেন তারা ।
ওই আসনে বিএনপির ব্যাপক জনসমর্থন থাকলেও মামলার বেড়াজালে রাজপথে তাদের অনুপস্থিতি যেন নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে । তফসিল ঘোষিত হলেও পুলিশি তৎপরতায় বাড়ি-ঘর থেকে নেতাকর্মীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ বিএনপি নেতাকর্মীদের । অনেকে কারাগারে অন্তরীণ রয়েছেন । বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, এখনো ফেনী ১ আসনে খালেদা জিয়াই তাদের এমপি প্রার্থী। কিন্তু তিনি আদো নিবার্চন করতে পারবেন কিনা এ নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যেও নেতাকর্মীরা দলের অন্য কোনো প্রার্থীর ব্যাপারে ভাবতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন। বিপুল জনসমর্থন থাকলেও দেড় দশকের বেশি সময় ধরে বিএনপির উপজেলা পর্যায়ের কিছু সদস্যের কমিটি থাকলেও অঙ্গ-সংগঠনের কার্যকর কমিটি নেই বললেই চলে। জেল-জুলুম পুলিশি হয়রানির পরও ফেনী ১ নির্বাচনী এলাকায় এখনো ভোটের মাঠে বিএনপির জনসমর্থন মহাজোট থেকে বেশি বলে বিএনপির নেতাকর্মীরা দাবি করেছেন।
অপর দিকে, বর্তমান সরকারের টানা দুই মেয়াদে ব্রীজ, পুল-কালভাট নিমার্ণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভবন নির্মাণ, রাস্তাঘাট তৈরিসহ বিভিন্ন উন্নয়নের কারণে আওয়ামী লীগের জনসমর্থন বেড়েছে বলে এবার বিএনপিও ভোটের মাঠে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন বলে অনেকের আশঙ্কা ।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে গঠিত বিএনপির প্রতি বরাবরাই ব্যাপক জনসমর্থন, ভালোবাসা আর সহানুভূতি রয়েছে ফেনীর মানুষের । ৯০ দশকে গণআন্দোলনে এরশাদ সরকারের পতনের পর থেকে ফেনী ১ আসনে ( ছাগলনাইয়া-পরশুরাম-ফুলগাজী) বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে চার বার বিপুল ভোটের ব্যবধানে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করেছে ফেনী ১-এর মানুষ । আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথ ছিল তাদের সরব উপস্থিতি। এখানকার ভোটারা প্রতীক দেখে ভোট দিতে অভ্যন্ত বলে সংশ্লিষ্ঠরা জানিয়েছেন । আগামী একাদশ নির্বাচন ঘনিয়ে এলেও এখনো ভোটের মাঠে নেই বিএনপি। বরং গ্রেফতারের ভয়ে অনেক বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা বাড়ি-ঘর ছাড়া বলে জানা গেছে । নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে পরিস্থিতির উন্নতি হলে তারা ভোটে মাঠে সরব হয়ে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে সক্ষম হবেন বলে দাবি করেছে কয়েকজন নেতা। এত দিন তারা সিদ্ধান্তের জন্য কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে ছিলেন । কেন্দ্র থেকে নির্বাচনের সবুজ সংকেত পেলেই তারা নির্বাচনী মাঠে নামবেন এমনটি নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন । বেগম খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিএনপি থেকে কে প্রার্থী হবেন তা রোববার বিকেল পর্যন্ত জানাতে পারেনি স্থানীয় বা কেন্দ্রিয় নেতৃত্ববৃন্দ।
স্থানীয় ও কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দের এক কথা তারা খালেদা জিয়ার আসনে খালেদা জিয়াকেই প্রার্থী হিসেবে চান । ভিআইপি আসন হিসেবে পরিচিত ফেনী ১ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন কিনেছেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রটোকল অফিসার আলা উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। তিনি ইতিপূর্বে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার ব্যাপারে আগ্রহ না দেখালে ওই আসনে তৃণমূল আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় প্রার্থী হিসেবে ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেলে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়া অনেকটা নিশ্চিত ছিল বলে ব্যাপকভাবে শোনা যায় । ফেনী আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত নাসিম শেষ মুহূর্তে দলীয় মনোনয়ন কেনায় সোহেল চৌধুরী তার প্রতি সম্মান দেখিয়ে দলীয় মনোনয়ন কেনা থেকে বিরত থেকেছেন । সোহেল চৌধুরীর দলীয় মনোনয়ন না নেয়ায় তার নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা মনক্ষুন্ন হয়েছেন এবং তাদের মতে গুরু নাসিম চৌধুরীর জন্য শারকেত সোহেল চৌধুরী বলির পাঁঠা হয়েছেন কয়েকজন কর্মীর অভিযোগ।
অপরদিকে, বর্তমান এমপি জাসদের কেন্দ্রিয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার ফেনী ১ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন নিয়েছেন। তাকে আওয়ামী লীগ থেকে মেনে না নেয়ার ঘোষণা দিলেও ফেনী ১ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নাসিম চৌধুরীর দলীয় মনোনয়ন পাওয়া ক্ষেত্রে শিরীন আখতার বড় চ্যালেঞ্জ বলে অনেকের অভিমত । এ ছাড়া এক সময়ের আলোচিত সমালোচিত ফেনী আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল হাজারী ফেনী ১ আসনসহ অপর দুটি আসন থেকেও দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন, দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন পরলোকগত আওয়ামী লীগ নেতা ওয়াজি উল্যাহ ভূঞার ছেলে আবদুল কাদের ভূঞা, ব্যবসায়ী সাইফুল্লাহ বাহার ও আবদুল্লা আল মাহমুদ রাসেল।
ঐক্যফ্রন্ট থেকে এখনো বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াই ধানের শীর্ষ প্রতীকের প্রার্থী বলে নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। তিনি নির্বাচন না করতে পারলে সেই ক্ষেত্রে কারা প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেই ব্যাপারেও কেউ খালেদা জিয়ার বাইরে কারো নাম বলতে চাননি । চেয়ারপার্সনের অনুপস্থিতিতে বিএনপি থেকে প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে চেয়ারপার্সন বেগম খালেজা জিয়ার বড় ছেলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সহধর্মীনী ডাঃ জোবেদা রহমান, কেন্দ্রীয় সংসাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) ও ছাগলনাইয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দিন মজুমদার, তিনি কয়েক দিন আগে ঢাকায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন ।
এছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক বেলাল আহম্মদ ও ছাগলনাইয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুর আহম্মদ মজুমদারের নাম নেতাকর্মীদের কাছে শোনা যাচ্ছে। তবে, এ ব্যাপারে কেউ মুখ খুলতে চাননি। তারা কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে যাকে প্রার্থী দেয়া হবে তার পক্ষেই নির্বাচনী মাঠে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন।
গতকাল রোববার বিকেলে বিএনপির কেন্দ্রিয় কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক ও ছাগলনাইয়া উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক নেতা বেলাল আহম্মদ জানান, তারা এখনো পর্যন্ত ফেনী ১ আসনে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া অন্য কাউকে প্রার্থী হিসেবে ভাবছেন না।