মালয়েশিয়ার সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহীম ঘোষণা দিয়েছেন, ক্ষমতাসীন জোট পাকাতান হারাপান তাকে দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেছে।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দেশটির জাতীয় দৈনিক মালয় মেইল ও কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা বলছে, আনোয়ার ইব্রাহীমের এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে টালমাটাল মালয়েশিয়ার রাজনীতি নতুন দিকে মোড় নিল। এর আগে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী ডা. মাহাথির মোহাম্মদ কোনো কারণ না জানিয়ে পদত্যাগ করেন। এরপর দেশটির রাজা তাকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন। আনোয়ার ইব্রাহীমের পিপলস জাস্টিস পার্টি (পিকেআর) সদস্যরাও ঘোষণা দিয়েছেন যে, তারা দেশনেতা হিসেবে আনোয়ার ইব্রাহীমকেই মনোনীত করেছেন।
আনোয়ার ইব্রাহিমের এক সময়ে গুরু ছিলেন মাহাথির মোহাম্মদ। গুরু শিষ্যের আপ্রাণ চেষ্টায় ১৯৮১ সালে ক্ষমতায় আসে দল ইউনাইটেড মালায়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন। প্রধানমন্ত্রী হন মাহাথির মোহাম্মদ। কিন্তু ধীরে ধীরে দলের মধ্যে শক্তিশালী হয়ে ওঠে আনোয়ার ইব্রাহিম। মাহাথিরের পরে অবসম্ভাবী হয়ে ওঠেন তিনি। ১৯৯৮ সালে আনোয়ারকে বরখাস্ত করেন মাহাথির। পরে তাঁর বিরুদ্ধে আনা হয় সমকামিতা ও দুর্নীতির অভিযোগ। নেয়া হয় কারাগারে। গুরু-শিষ্যের এই বিচ্ছেদ থেকে শুরু হয় আনোয়ারের একক সংগ্রামী জীবন।
প্রায় ২০ বছর সংগ্রাম করে নিজের রাজনৈতিক ভিত্তি গড়ে তোলেন আনোয়ার। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আনোয়ারের দল প্রিবুমি বেরসাতু মালয়েশিয়া ও জোট পাকাতান হারাপান এগিয়ে থাকে। এমন সময় মাহাথির বিরোধী রাজনীতির জনপ্রিয়তার মুকুটটি নিজের মাথায় পরিয়ে নেন। আনোয়ারের ২০ বছরের লাগানো গাছের ফল ভোগ করতে শুরু করলেন মাহাথির। এতো কিছুর পরও নিজের প্রতিশ্রুতি রাখলেন না এই প্রবীণ রাজনীতিক।
প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ক্ষমতা ছাড়ার বিষয়ে শুরু করেন টালবাহানা। নিজের প্রতিশ্রুতি বেমালুম অস্বীকারও করেছেন তিনি। কিন্তু আনোয়ারের রাজনৈতিক জোটে এই অবস্থায় থাকতে পারছিলেন না। ভেতর থেকে প্রচন্ড চাপ ছিল মাহাথিরের ওপর। আনোয়ারের কাছে প্রধানমন্ত্রী হস্তান্তরের পক্ষেই ছিল দলের বেশিরভাগ সদস্য। তাই আবারও ভেলকিবাজীর আশ্রয় নিলেন মাহাথির। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) হঠাৎ করেই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।
গুঞ্জন উঠলো আনোয়ার ইব্রাহীমকে বাদ দিয়ে নতুন জোট করে ফের প্রধানমন্ত্রীর পদে বসছেন তিনি। তবে এমন আভাস কিছুদিন ধরেই পাওয়া গেলেও আনোয়ার ইব্রাহীমের এ ঘোষণা মাহাথিরের ফের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বাসনাকে প্রশমিত করলো। এদিকে এর আগে ক্ষমতাসীন জোট পাকাতান হারপান থেকে মাহাথিরের দলের আইনপ্রণেতারা ইতোমধ্যে পদত্যাগও করেছেন। মাহাথির এখন অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অচলাবস্থার জন্য সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন আধুনিক মালয়েশিয়ার গড়ার কারিগর হিসেবে পরিচিত ডা. মাহাথির মোহাম্মদ। বুধবার সকালে জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আমারও ভুল হতে পারে। আমার পদত্যাগ যদি ভুল হয়ে থাকে তাহলে আমি ক্ষমা চাচ্ছি।
আনোয়ার ইব্রাহীম বলছেন, পাকাতান হারাপান জোট পুনর্গঠনের জন্য আয়োজিত এক বৈঠকে মাহাথির মোহাম্মদকে সভাপততিত্ব করার অনুরোধ করে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, কিন্তু তিনি গতকাল মঙ্গলবারের ওই বৈঠকে উপস্থিত হতে অস্বীকৃতি জানান।