রিফাত আহমেদ রাসেল, নেত্রকোনা প্রতিনিধি : নেত্রকোণার সিমান্তবর্তী উপজেলা দুর্গাপুর। উচু উচু পাহাড় আর নীল জলরাশির সোমেশ্বরী নদী তির খেসা এই স্থানটিতেই যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছে আদিবাসীরা। বর্তমানে প্রায় ২০ হাজারের বেশি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস করছে এখানে। এদের মাঝে রয়েছে গারো, হাজং, কোচ, বানাই, হুদি সহ বিভিন্ন স¤প্রদায়ই। এরা বাংলা ভাষায় কথা বললেও এদের রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি ও ভাষা। বেশি ভাগ সময়ই এরা এদের নিজের ভাষাই কথা বলে।
তবে আদিবাসীদের নিজস্ব ভাষার নেই কোন বর্ণমালা। ফলে কালের বিবর্তনে আদিবাসীদের জীবনে বাংলা- ইংরেজির আধিপত্যের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নিজস্ব এই মাতৃভাষা। আদিবাসীদের একটি সম্প্রদায় হলো গারো। গারো সম্প্রদায়ের যে ভাষার প্রচলন আছে তাকে তাদের ভাষায় মান্দি বা আদিক বলে থাকে । যার অর্থ হলো মানুষ।
আদিবাসীদের এই ভাষা তাদের মাঝে টিকিয়ে রাখতে সরকার ২০১৯ সাল থেকে প্রাথমিক শাখার প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণী থেকে ২য় শ্রেণী পর্যন্ত সরকারী ভাবে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা গুলোতে বই সরবরাহ করা শুরু করে। গত বছর সারাদেশের ন্যায় নেত্রকোণার দুর্গাপুরের বিরিশিরি মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সেন্ট জেভিয়ার্স বিদ্যালয় সহ আদিবাসী অধ্যুষিত মোট ২০ প্রাথমিক স্কুলের শুধু মাত্র গারো সম্প্রদায়ের প্রায় ৩ শতাধিক শিক্ষার্থীর মাঝে বই ও শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করে। আর এই সামগ্রী দিয়েই স্কুল গুলো চলছে পাঠদান। তবে ভাষা শিক্ষার প্রয়োজনীয় শিক্ষকের অভাবে বই পেয়েও ভাষার চর্চা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আবার চলতি ২০২০ শিক্ষা বর্ষে এখন পর্যন্ত আদিবাসী অধ্যুষিত স্কুল গুলোতে দেওয়া হয়নি আদিবাসী সম্প্রদায়ের ভাষা শেখার বই। ফলে উপজেলা আদিবাসী শিক্ষার্থীরা বাংলা বই নিয়েই চলছে পাঠদান।
তবে এই বছর অত্র উপজেলায় গারো সম্প্রদায়ের পাশাপাশি বিভিন্ন ভাষাভাষীর বই বিতরণ করা হবে। চলতি ২০২০ শিক্ষা বর্ষে ২য় শ্রেণীর সাথে নতুন করে ৩য় শ্রেণীতেও আদিবাসীদের বই দেওয়া হবে বলে শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেচ্ছে।
সেন্ট জেভিয়ার্স বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানায়, বিদ্যালয় গুলোতে আমরা বাঙালি,গারো,হাজং সবাই একত্রে বাংলা ভাষায় পড়াশোনা করি। কিন্তু আমাদের নিজস্ব ভাষার তেমন কোন বই না থাকায় অনেক সময় বাংলা ভাষায় বই পড়তে সমস্যা হয়। যদি সরকারিভাবে মাধ্যমিক শাখা পর্যন্ত আদিবাসীদের জন্য বই সরবরাহ করা হয় তাহলে যেমন সহজে আমরা পড়তে পারবো তেমনি আমাদের ভাষাকেও ধরে রাখতে পারবো।
অভিভাবকরা জানায়, এই ভাষার মাসে বাংলা ভাষার পাশাপাশি এই অঞ্চলের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষাও সংরক্ষণ করা জরুরি। যারা ভাষা নিয়ে যারা গবেষণা করছেন তাদের কাছে অনুরোধ এই ভাষাগুলো সংরক্ষণের সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন ।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবু তাহের ভূঁইয়া জানায়, আদিবাসীদের ভাষা সংরক্ষণে আমরা ইতিমধ্যে ভাষার বই সরবরাহ করে আসছি । তবে চলতি শিক্ষাবর্ষে এখন পর্যন্ত আদিবাসীদের ভাষার বই আমরা হাতে পাইনি । বই পাওয়া মাত্রই আমরা বিদ্যালয় তা সরবরাহ করবো। আর আদিবাসীদের ভাষা শিক্ষার জন্য স্কুলগুলোতে শিক্ষক সংকট রয়েছে । এই সংকট কাটাতে পার্ট টাইম শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনাও আমাদের আছে ।