জামালপুরে রাণীগঞ্জ পতিতাপল্লীতে মাদকবিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলাকালে হামলার ঘটনা ঘটেছে। হালিম নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটকের পর ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে থাকা প্রাইভেটকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ, গাড়ি ভাংচুর করে মাদক ব্যবসায়ীরা।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ফাঁকা গুলিবর্ষণ ও পতিতাদের লাঠিচার্জ করে আইনশৃংখলা বাহিনী। লাঠিচার্জে মাদক ব্যবসায়ী পতিতা সর্দরনী কবিতা, ডলি, রজু, ঝানু, বিলকিস, নাসিমা, জুঁইসহ ১০-১২ জন আহত হয়েছে।
সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ ও আনসার বাহিনী নিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু আব্দুল্লাহ খানের নেতৃত্বে মাদকবিরোধী অভিযান চলাকালে এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে মারধর, ফাঁকা গুলিসহ গাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়েছে পতিতা ও পুলিশ প্রশাসন।
পতিতাদের দাবি, তল্লাশির নামে তাদেরকে বেধড়ক মারধর করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় ৭ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করা হয়।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দাবি, পতিতারা মাদকবিরোধী অভিযানে হামলা ও একটি মাইক্রোবাস ভাংচুর করেছে। তবে কোনো গোলাগুলির ঘটনা ঘটেনি।
মাদকবিরোধী অভিযানে হালিম (৪০) ও আলম নামে দুজন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। তবে আলমের বিরুদ্ধে কোনো তথ্যপ্রমাণ না থাকায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু আব্দুল্লাহ খান জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালতে হালিমকে ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন। হালিম শহরের মুসলিমাবাদের মকবুল হোসেন ড্রাইভারের ছেলে।
তিনি আরো বলেন, অভিযান চলাকালে গুলিবর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
ঘটনার পর দুপুর দেড় টার দিকে জামালপুর প্রেসক্লাবে এসে অভিযোগ করেন মারধরের শিকার পতিতারা। তারা বলেন, আমরা রাস্ততায় এলে আমাদের মারধর করা হয়। টেনেহিচঁড়ে জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলা হয়। কিল, ঘুষি, বন্দুকের লন দিয়ে আঘাত করা হয়। এ সময় পতিতাপল্লীর ৩ নম্বর বাড়ির রাজু, ৪ নম্বর বাড়ির জানু ও বিলকিস, ৫ নম্বর বাড়ির নাসিমা, ৮ নম্বর বাড়ির জুঁই ও ৯ নম্বর বাড়ির কবিতা আহত হন।
কবিতা বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ইন্সপেক্টর হুমায়ূনসহ পুলিশের লোকজন মদের কাউন্টারে বসে কাউন্টার মালিকের সাথে কথাবার্তা বলে। ইন্সপেক্টর হুমায়ূন আমাদের প্রতিজনের কাছে মাসে ২০ হাজার টাকা চান। আমরা টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় তিনি বলেন, টাকা যখন দিবিই না তাহলে পরে বুঝমুনি তগো কিভাবে শায়েস্তা করা লাগে। তগোরে মাদক ব্যবসায়ী বানাইয়া আমরা চালান করমু। আর কিভাবে এখানে থাকস, সেইডাও আমারা দেখমু। আমাদের কথা, আমরা নিজেরাই কইরা খাইতে পারতাছি না, আমরা তাগো টেকা দিমু কিভাবে? আমগরে টেকা দেওনের কোনো রাস্তা নাই। একটাই রাস্তা আছে, হয় আমগরে যে ৭টা গুলি করছিল যেভাবে, হেইভাবেই মাইরা ফালাক একবারে, আর নয় কি করব কইরে দেইক। আমরা হামলা করব ক্যা? আমার চিল্লাচিল্লি করছি, যহন আমগরে মারতাছে।
শিল্পী নামে পতিতা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমরা নিজের শরীল বিক্রি কইরে খাই। মাদক বিক্রি করি না। তারপরেও পুলিশ বলতাছে আমরা মাদক ব্যবসা করি। পুলিশ যখনই ধরে তহনই বলে এত টেকা দেও, এত দেকা দেও। আমরা টেকা দিমু কইত্তে? আবগারির হুমায়ূন স্যারই তো কাউন্টারে আসে। কাউন্টারের মালিক শিশিরের সাথে কবিতার ঝগড়া। হের লাইগ্যা হুময়ায়ূন স্যার টেকা চাইছে। দুইডে ভাতের লাইগ্যা আমরা ইনু থাকি। এহন আমগরেই পেট চলে না, তাগো টেকা দিমু কিবেই? শিউলি বলেন, সবাই দৌড়াদৌড়ি করতাছে আর বলতাছে ব্লক পরছে, রেট পরছে। আমরা বাইরাইছি। দেহি আসলেই গাড়ি ঢুকছে। ওদের কাজ ওরা করব, আমগো কী। আমরা তো মাদক ব্যবসা করি না, দেহ বিক্রি করি। ওরা বলতাছে আমরাও নাকি মাদক ব্যবসা করি। এজন্য আমগরে মারে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. হুমায়ূন কবীর ভূঁইয়া বলেন, পতিতাদের কাছে টাকা দাবির অভিযোগ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। অভিযান চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছে পতিতারা। ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে তারা একটি মাইক্রোবাস ভাংচুর করেছে। মাদক বিরোধী অভিযানে পতিতাদের হামলা ও গাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
সদর থানার ওসি মো. সালেমুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি পতিতাদের সাথে এ বিষয়ে কথাবার্তা বলেছেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় মামলা দেয়া হলে নেয়া হবে।