নিজস্ব সংবাদদাতা : কিশোরগঞ্জের নিকলীতে ফুটন্ত তেলের কড়াইয়ে ফেলে মো. খলিল মিয়া (৩৫) নামে এক ডালের বড়া বিক্রেতাকে দগ্ধ করার চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে।
এ অভিযোগে রোববার দুপুরে উপজেলার গুরুই ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার ও পূর্বপাড়া গ্রামের শহর আলীর ছেলে শিশু মিয়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এ দিকে ফুটন্ত তেলের কড়াইয়ে দগ্ধ ডালবড়া বিক্রেতা উপজেলার জারইতলা ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের জলিল মিয়ার ছেলে খলিল মিয়াকে অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো যাচ্ছে না। বর্তমানে নিজ বাড়িতেই অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করে দুঃসহ সময় কাটাচ্ছেন খলিল।
জানা গেছে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি গুরুই শাহী মসজিদের মেলায় খলিল মিয়া সিদ্ধ ডিম ও ডালের বড়া বিক্রির অস্থায়ী দোকান বসিয়েছিলেন। রাতে ওই ইউপি মেম্বার শিশু মিয়া তার দোকানে এসে ডালের বড়ায় মরিচ নেই কেন জিজ্ঞেস করে গালিগালাজ শুরু করেন।
এ সময় মরিচ শেষ হয়ে গেছে জানালেও ইউপি মেম্বার আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে তাকে লাথি মেরে খলিলকে ফুটন্ত তেলের কড়াইয়ে ফেলে দেন। এতে তার ডান হাত, ডান পা ও মুখের ডান পাশ ঝলসে যায়। তীব্র যন্ত্রণায় সে চিৎকার করলেও ইউপি সদস্যের ভয়ে কেউ এগিয়ে এসে তাকে সহায়তা করেননি।
ইউপি মেম্বার শিশু মিয়া চলে যাওয়ার পর একজন গ্রাম পুলিশ তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে পৌঁছে দেন। পরদিন ১৯ ফেব্রুয়ারি তাকে বাজিতপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। কিন্তু অর্থাভাবে সেখানে চিকিৎসা শেষ না করেই তাকে নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে ভর্তি করা হয়।
সেখান থেকে তাকে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল থেকেও তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। কিন্তু ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য না থাকায় খলিলকে বাড়ি ফিরিয়ে আনেন স্বজনরা। উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে বাড়িতেই যন্ত্রণায় ছটফট করছেন দগ্ধ খলিল।
খলিল মিয়ার স্ত্রী নুরুন্নাহার জানান, স্বামীর আয়েই তাদের পরিবারের আট সদস্যের সংসার চলে। স্বামীর এ অবস্থায় এখন চিকিৎসা তো দূরে থাক, তাদের সংসারই চলছে মানুষের সাহায্য-সহযোগিতায়।
রোববার নিকলী থানার ওসি মো. শামসুল আলম সিদ্দিকী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, অগ্নিদগ্ধ খলিলের ছোট ভাই জুয়েল মিয়া বাদী হয়ে এজাহার দায়ের করার পরই শিশু মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গুরুই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবু তাহের দাবি করেন, বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সালিশ করা হয়েছিল। খলিল মিয়ার চিকিৎসার খরচ ও সংসার চালানোর খরচ ইউপি সদস্য শিশু মিয়া বহন করবেন- এ রকম সিদ্ধান্তও হয়েছিল। আর এ জন্য সাত হাজার টাকাও খলিলকে আগাম দেয়া হয়েছিল।