রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ ঠেকাতে টঙ্গীতে ঢাকামুখী বাস-ট্রেন থামিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছে আইন শৃংখলা বাহিনী ও সরকারি দলের কর্মীরা। টঙ্গী রেলওয়ে জংশনে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে ট্রেনের প্রত্যেক যাত্রীকে তল্লাশি করা হচ্ছে। প্রতিটি ট্রেন আধা ঘণ্টা থেকে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত বিনা কারণে টঙ্গী জংশনে আটকে রাখা হচ্ছে।
টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী গাজীপুর জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, তিনি জেলা প্রশাসনের রুটিন মাফিক নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনার অংশ হিসেবে টঙ্গী স্টেশনে সকাল ৭টা থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। রেলের জমিতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও বিনা টিকেটের যাত্রীদের জরিমানা করছেন। ভৈরব থেকে আসা সুরমা ট্রেনের কয়েকজন যাত্রীকে স্টেশন মাস্টারের কক্ষে আকটে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিনা টিকেটে ভ্রমণ করায় আমি তাদেরকে আটক করেছি। আটককৃতরা ছাত্র হওয়ায় আমি এখনো তাদের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নিইনি।
স্টেশন মাস্টার আব্দুল হালিম জানান, সুরমা ট্রেনটি সকাল ৯টা ৩৩ মিনিটে টঙ্গী স্টেশনে প্রবেশ করে। সকাল পৌনে ১১টায় স্টেশন মাস্টারের সাথে কথা বলার সময় সুরমা ট্রেন প্লাটফর্মে অবস্থান করছিল। দীর্ঘক্ষণ ট্রেনটিকে স্টেশনে দাঁড় করিয়ে রাখার কারণ জানতে চাইলে স্টেশন মাস্টার আব্দুল হালিম বলেন, আমার কিছু করার নেই। উপরের নির্দেশে ট্রেন থামিয়ে রেখেছি। কনট্রোল রুমের নির্দেশ ছাড়া ট্রেন ছাড়ার ক্ষমতা আমার নেই। যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, সকাল থেকেই প্রত্যেকটি ট্রেনের যাত্রীদের এভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। সকাল থেকে টিকিট বিক্রিও বন্ধ রাখা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি সরকারি দলের লোকজন ট্রেন থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছে। দীর্ঘক্ষণ ট্রেন থামিয়ে রাখায় অনেকে বিকল্প পথে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
এদিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কেও যাত্রীবাহী বাস চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে পুলিশ। গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তা থেকে আব্দুল্লাপুর ব্রিজ পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে যাত্রীদের নামিয়ে তল্লাশির নামে কৃত্রিম যানজট সৃষ্টি করা হচ্ছে। সন্দেহজনক যাত্রীদের বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বোর্ড বাজার এলাকায় ৩৫ জন যাত্রীসহ একটি বাস আটক করে স্থানীয় গাছা থানায় হস্তান্তর করেছে ডিবি পুলিশ। আটককৃতদের মধ্যে গাজীপুর মহানগরির গাছা থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন ভূইয়াও রয়েছেন। এর আগে গত শনিবার রাতে উত্তরা থেকে গাজীপুর মহানগর যুবদলের সভাপতি ও আসন্ন সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশি প্রভাষক বশির উদ্দিনকে আটক করে পুলিশ।
এদিকে আইনশৃংখলা বাহিনী ও সরকারি দল কর্তৃক পথে পথে পরিবহনে বাধা সৃষ্টি এবং বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ যাত্রীদের হয়রাণীর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার। মোবাইল ফোনে তিনি নয়া দিগন্তকে জানান, সকালে মহাসড়কে তার গাড়িও আটকে দেয়া হয়েছিল। অবশেষে তিনি বিকল্প পথে সমাবেশে যেতে বাধ্য হন। তিনি এসব ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, সরকারের এমন আচরণ স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে, তারা গণত্রান্ত্রিক প্রক্রিয়া নস্যাৎ করে আবারো একতরফা পাতানো নির্বাচন করার ষড়যন্ত্র করছে।