তাবলিগ জামাতের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে তৈরি হওয়া শঙ্কার বিষয়গুলো স্পষ্ট করতে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের সরকারি কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হলো ওয়াজাহাতি জোড়। এতে দেশের শীর্ষ স্থানীয় উলামায়ে কেরাম ও তাবলিগের মুরব্বিরা বয়ান পেশ করেন।
মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে জোড় শেষ হয় দুপুর দেড়টায়। বয়ান শেষে সংক্ষিপ্ত মুনাজাতে তাবলিগের চলমান পরিস্থিতি নিরসনে সবাইকে ইখলাসের সঙ্গে কাজের পরামর্শ দেয়া হয়।
জোড়ে বক্তব্য দেন মুফতি কেফায়াতুল্লা আজহারী, মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ সাদী, মাওলানা আব্দুস সামাদ, হাফিজ উদ্দিন, মুফতি জুবায়ের আহমেদ, মাওলানা আব্দুর রহিম, আল্লামা মুফতি হামিদ জাহেরী, মাওলানা নুরুল আলম, হাফেজ আহাম্মদ আলী, মাওলানা ঈসাখান মুজাহেদী, মাওলানা আবুল ফজল, মাওলানা মুস্তাফিজুর রহমান, মাওলানা আবুল কালাম, মাওলানা মঞ্জুরুল হক, মাওলানা শরিফুর রহমান, মাওলানা মুফতি মহিব্বুল্লাহ, হাজি আব্দুস সাত্তার প্রমুখ।
জোড়ে আলেমরা ছাড়াও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, উপজেলা প্রশাসনসহ গণ্যমান্য ব্যাক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
জোড় থেকে ৯টি ঘোষণা সম্মলিত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এগুলো হলো-
১। জমহুর উলামায়ে কেরাম একমত হয়েছেন তিনটি মৌলিক কারণে :- ক. কুরআন ও হাদিসের মনগড়া ব্যাখ্যা। খ. তাবলীগের গুরুত্ব বুঝাতে গিযে তাবলীগ ব্যতীত দ্বীনের অন্যান্য মেহনতকে যথা দ্বীনি শিক্ষা ও তাসাউফ ইত্যাদিকে হেয় প্রতিপন্ন করা। গ. পূর্ববর্তী তিন হযরতজীর উসূল ও কর্মপন্থা থেকে সরে যাওয়ার কারণে বর্তমানে মাওলানা সা’দ সাহেবকে অনুসরণ করা সম্পূর্ণভাবে বর্জনীয় ও নিষিদ্ধ।।
২। মাওলানা সা’দ সাহেব হযরত মাওলানা এনামুল হাসান রহ. এর রেখে যাওয়া শুরায়ী নেযামকে উপেক্ষা করে নিজেই নিজেকে আমীর দাবি করেছেন, যা শরীয়তবিরোধী। তাই তার কোন সিদ্ধান্ত এবং ফায়সালা বা নির্দেশ কাকরাইল তথা বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করা যাবে না।।
৩। দারুল উলুম দেওবন্দ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, মাওলানা সাদ সাহেব আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতাদর্শ থেকে সরে গিয়ে নতুন কোনো ফেরকা গঠনের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।
এহেন পরিস্থিতিতে বালাদেশের কোনো জামাত বা ব্যক্তিকে নিযামুদ্দীনে পাঠানো বা যাওয়া মুনাসিব হবে না। অনুরুপভাবে নেযামুদ্দিন থেকে আগত কোনো জামাতকে কোনো জেলায়/থানা/ইউনিয়নে কাজ করার সুযোগ দেওয়া যাবে না।
৪. মাওলানা ইলিয়াস রহ., মাওলানা ইউসুফ রহ. ও হযরত মাওলানা এনামুল হাসান রহ এর বাতলানো পদ্ধতিতে তাবলিগের কাজ সারা দুনিয়ায় সমা সমাদ্ভূত ও গৃহীত হয়েছে। তাই বাংলাদেশে এই তিন হযরতের পদ্ধতিতে এবং উলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে তাবলিগের কাজ পরিচালিত হবে। নতুন কোনো পদ্ধতি চালু করা যাবে না। কাকরাইল ও টঙ্গী ময়দান এবং জেলা মারকাযসহ সকল মারকায এই নীতিতেই পরিচালিত হবে।
৫। কাকরাইল মসজিদের যে সকল শুরা সদস্য আমরণ মাওলানা সা’দ সাহেবের ভ্রান্ত আকীদা অনুসরণের শরীয়ত পরিপন্থী হলফ নামা করেছেন, তারা শুরাসদস্য থাকার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছেন। অতএব তাদেরকে তাবলীগের কাজে শুরা ও ফায়সাল না রাখার আহ্বান জানানো যাচ্ছে।
৬। ২০১৮ সানের বিশ্ব ইজতেমার পূর্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ের সভাপতিত্বে ত্রিপক্ষীয় তথা ১. কাকরাইলের আহলে শুরা ২. শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কেরাম ৩. স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখার জোর আহ্বান জানানো যাচ্ছে।
সিদ্ধান্তগুলো নিম্নরূপ –
ক. মাওলানা সা’দ সাহেব দারুল উলুম দেওবন্দের সাথে মতপার্থক্য দূর করে দারুল উলুম দেওবন্দের আস্থা অর্জন না করা পর্যন্ত বাংলাদেশে আসতে পারবেন না।
খ. নিযামুদ্দীনের যে সকল আকাবির উলামায়ে কেরাম মাওলানা সা’দ সাহেবের সাথে দ্বিমত পোষণ করে মারকায ত্যাগ করে চলে গেছেন, তাদের সাথে সমস্যা নিরসন করে একসাথে বাংলাদেশে আসবেন, একা আসবেন না।
৭। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশ ও জাতির শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার্থে উল্লেখিত বিষয় দু’টির সমাধান না হওয়া পর্যন্ত মাওলানা সা’দ সাহেবের কোনো পরামর্শ ও নির্দেশনা তাবলীগের সাথী ভাইগণ এদেশে চালানোর চেষ্টা করবেন না; বরং এদেশের দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনত কাকরাইল মারকাযের মুরুব্বীদের পরামর্শক্রমেই চলবে।
৮। এবারের পাঁচ দিনের জোড় ৭,৮,৯,১০,১১ ডিসেম্বর ২০১৮ অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৮-এর টঙ্গী ইজতেমায় সরকারের সাথে পরামর্শক্রমে আগামী ২০১৯-এর টঙ্গী ইজতেমার জন্য নির্ধারিত তারিখ প্রথম পর্ব ১৮,১৯,২০ জানুয়ারি ও দ্বিতীয় পর্ব ২৫,২৬,২৭ জানুয়ারির সাথে আজকের মজমা ঐকমত্য পোষণ করছে।
৯। ২০১৯ সালের ইজতেমার আগে ও পরে কোনো জেলাওয়ারী ইজতেমা হবে না। উপরোক্ত ঘোষণাগুলো যথাযথ বাস্তবায়নে এবং বর্তমানে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলারোধে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করা হয়।