বিশেষ প্রতিবেদক : ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ভাষা শহীদ আবদুল জব্বারের স্মৃতি নিয়ে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাঁচুয়ায় (জব্বার নগর) ১২ বছরেও মেলেনি জব্বার নগরের স্বীকৃতি। অথচ সারা বিশ্বে জাকঝমকভাবে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। দিবসটি উপলক্ষ্যে বাংলাদেশেও বড়বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। স্থানীয় জেলা প্রশাসনও পালন করবে দিবসটি। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে ভাষা শহীদদের বিষয়ে সরকারের জোরালো অবস্থান না থাকায় নীরবেই অবহেলিত হচ্ছে তারা। এজন্য দরকার ভাষা শহীদদের নিয়ে সরকারী-বেসরকারী প্রচারপ্রচারণা। সারাদেশে স্থাপন করা দরকার স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়। ভাষা শহীদদের স্থানীয় জেলা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের নামকরণ করলেও সহজে মনে রাখতে পারবে নতুন প্রজন্ম।
ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার রাওনা ইউনিয়নের পাঁচুয়া (জব্বার নগর) গ্রামে অবস্থিত ভাষা শহীদ আবদুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরটি সারা বছরই দর্শক শূন্য থেকে যায়। বায়ান্নের ভাষা আন্দোলনের শহীদের স্মৃতি রক্ষায় ২০০৮ সালে ১৯ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয় উপদেষ্টা আনোয়ারুল ইকবাল এবং ভাষা সৈনিক আবদুল মতিন, ভাষা সৈনিক বেগম রওশন আরা ও ভাষা সৈনিক ডাঃ হালিমা খাতুন গফরগাঁওয়ের পাঁচুয়া গ্রামে ভাষা শহীদ আবদুল জব্বারের বসতবাড়ির আঙ্গিনায় নির্মিত জব্বারের নামে গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরটি উদ্বোধন করেন।
৪ হাজার ১৩৫টি বই নিয়ে যাত্রা শুরু করা গ্রন্থাগারে বারো বছরেও আর কোনো বই যোগ হয়নি। এই জাদুঘরে নেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটিও। জাদুঘরেও নেই ভাষা শহীদের কোনো স্মৃতি চিহ্ন। নানা অব্যবস্থাপনায় দর্শনার্থী ও পাঠকদের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না এটি। এখানে নেই ইন্টারনেট সেবা।
এখানে মাঝে মাঝে সরকারি বিভিন্ন সেবামুলক কর্মসূচি পালন করা হয়। বছরের বেশীর ভাগ সময়ই ফাঁকা পড়ে থাকে গ্রন্থাগারটি। শুধু ফেব্রুয়ারি মাস আসলেই দর্শনার্থীদের ভিড় এবং প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের কর্মব্যস্থতা চোখে পড়ে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভাষা শহীদের নামে বিশ্ববিদ্যালয় করা হলে জব্বার নগর পরিপূর্ণতা পাবে। জাদুঘরের গ্রন্থাগারিক মোঃ কায়সারুজ্জামান জানান, জাদুঘরে ভাষা শহীদের স্মৃতি সংরক্ষণ এবং বইয়ের সংখ্যা বাড়ানো গেলে পাঠক-দর্শনার্থীদের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।
ভাষা শহীদ আবদুল জব্বারের একমাত্র ছেলে নুরুল ইসলাম বাদল বলেন, ভাষা শহীদের নামে এখানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করা হলে গ্রন্থাগারটির প্রাণ সঞ্চার হবে।
ভাষা শহীদ আবদুল জব্বারের স্মৃতি গাঁথা নিদর্শনগুলো জাদুঘরে সংরক্ষণ এবং গ্রন্থাগারে তথ্যপ্রযুক্তি সুবিধা চালু করার দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। সেই সাথে ২০০৮ সালে ভাষা শহীদের গ্রামের নাম জব্বার নগর রাখা হলে ও এত দিনেও সরকারি গেজেট প্রকাশ করা হয়নি।
গফরগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মাহবুব উর রহমান জানান, আমরা অবগত আছি কি করলে ভাষা শহীদ আবদুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরটি আরো পরিপূর্ণতা পায় এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।