পরপর দুই দিনে পৃথক মামলায় কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে আরও বড় দন্ডের রায়কে নিয়ে রাজনীতির ময়দানে নানা হিসাব-নিকাশ চলছে। তবে এই রায় নিয়ে মোটেও বিচলিত নন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে বিএনপির পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচীর সমাপনি বক্তব্যে বেগম খালেদা জিয়ার এই বার্তার কথা জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেছেন, আমরা দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। যে নির্বাচনে মানুষ তাদের ভোট দিয়ে পছন্দের সরকার নির্বাচন করবে। কিন্তু সরকার পরিস্থিতিকে জটিল করছে। আমাদের চেয়ারপারসনের সাজার মেয়াদ বাড়িয়ে দেয়া হলো। বিষয়টি নেত্রীকে জানানোর পর তিনি বলেছেন, ‘সাজা যত দেয়ার দিক। তবুও মাথা নত করবো না।’
ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে পরাজিত করা হবে এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন,‘আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে পরাজিত করবো।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বন্ধুগণ, আমরা মাথা নত করবো না। আমরা নিজেদের অধিকারের আন্দোলন ও লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে তা আদায় করবো আমাদের বেঁচে থাকার অধিকার। ১৯৭১ সালের যে চেতনা নিয়ে স্বাধীনতার যুদ্ধ করেছিলাম, সেই অধিকার আমরা প্রতিষ্ঠা করবোই করবো।’
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘সরকারের নিয়ন্ত্রণে এখন বিচার ব্যবস্থা চলছে। তার প্রমাণ গত দুই দিনে বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায় হয়ে গেছে। সরকার প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশের বিচার ও প্রশাসন ব্যবস্থাকেও তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। আজকে দেশ আর গণতান্ত্রিক দেশ নেই, স্বৈরতান্ত্রিক দেশে পরিণত হয়েছে।’
গণতন্ত্রের সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়া ওতপ্রতোভাবে জড়িয়ে আছেন মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গণতন্ত্র মানেই বেগম খালেদা জিয়া। তাই আজকে তার মুক্তির দাবিতে অনশন করছি।’
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির পুনরাবৃত্তি এ দেশের জনগণ হতে দেবে না, ইনশাআল্লাহ। তাই আজকে বলতে চাই, আমরা যে সাত দফা দাবি প্রণয়ন করেছি, তা এ দেশের জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী। অনেক কথাবার্তা হচ্ছে লোক দেখানো এ সংলাপ, আমাদের ফাঁদে ফেলানোর সংলাপ, আমরা বাংলাদেশে অনেক দিন ধরে রাজনীতি করি। যারা আজকে আমাদের সঙ্গে বসবেন, তাদেরও আমরা চিনি। তাই আপনারা আমাদের ফাঁদে ফেলবেন, ধোঁকা দিবেন আর এটা সম্ভব হবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিষ্কার কথা। যদি এই দেশে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হয় এই সাত দফাকে মানতে হবে। আজকে ৭ দফা উপস্থাপন করবো, সাত দফাকে বাস্তবায়ন না করে ইনশাআল্লাহ এদেশে সংসদ হতে দেবো না। হওয়া সম্ভব হবে না। ’
গণঅনশনে অংশ নিয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায় ৭ দিনের মধ্যে ধূলোর মতো উড়ে যাবে।’
মান্না বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার সাজা ৫ বছর থেকে ১০ বছর করা হয়েছে। নতুন করে আরেকটি মামলায় ৭ বছর সাজা দেয়া হয়েছে। এসব টিকবে না।’
সংলাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে কোনো নির্বাচন হবে না। আমাদের দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত তফসিল ঘোষণা করা যাবে না। সংলাপের নামে কোনো ধাপ্পাবাজি চলবে না।’
নেতাকর্মীদের শারীরিক ও মানুসিকভাবে আন্দালনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘শুধু স্লোগান দিলে কি আমাদের নেত্রীর মুক্তি হবে?, (এসময় নেতাকর্মীরা না সূচক উত্তর দেন, নেতাকর্মীরা আন্দোলন আন্দোলন বলে স্লোগান দেন) তাহলে আন্দোলনের জন্য শারীরিক ও মানুসিকভাবে আন্দালনের প্রস্তুতি নিন। সেটি করলেই নেত্রী মুক্তি পাবেন।’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, মো. শাহজাহান, বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক,আমান উল্লাহ আমান, আতাউর রহমান ঢালী, আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নূরে আরা সাফা, সহ-মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আফরোজা আব্বাস, শিক্ষা বিষয়ক সহ-সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, সহ-জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার প্রমুখ।
এছাড়াও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন, জাগপার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা মোস্তাফিজুর রহমান ইরান।
গণঅনশনে বিএনপি এবং বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলাদল, শ্রমিকদল কৃষকদল, ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিট ও শাখার হাজার হাজার নেতাকর্মী-সমর্থক যোগ দিয়েছেন। তারা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার এবং সাজা বাতিলের দাবিতে মুহুর্মুহু স্লোগান দেন। তীব্র রোদ উপেক্ষা করে কয়েক হাজার নেতাকর্মী-সমর্থক মহানগর নাট্যমঞ্চের সামনের চত্বরে অনশন পালন করেন।