আজ বৃহস্পতিবার সারা দেশে একযোগে এ বছরের (২০১৮) জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা শুরু হবে। চলবে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক গতকাল নয়া দিগন্তকে জানান, পরীক্ষার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে ও প্রশ্নপত্রের জন্য একধরনের নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
পরীক্ষা প্রতিদিন সকাল ১০টায় শুরু হয়ে বেলা ১টা পর্যন্ত চলবে। প্রথম দিনে সাধারণ বোর্ডে বাংলা প্রথমপত্র এবং মাদরাসা বোর্ডে কুরআন মাজিদ ও তাজবিদ বিষয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলা দ্বিতীয পত্র ও ইংরেজি ১ম বা ২য় পত্র ছাড়া সব বিষয়ে সৃজনশীল প্রশ্নে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তাদের সাতটি বিষয়ে ৬৫০ নম্বরের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, কর্মমুখী শিক্ষা এবং চারু ও কারুকলা বিষয়ে শিার্থীদের ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রাপ্ত নম্বর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে সরবরাহ করতে হবে। চলতি বছর থেকে অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার চাপ কমানোর জন্য বিষয় ও নম্বর পুনঃবণ্টন করা হয়েছে। সে কারণে বাংলা ও ইংরেজির ২য় পত্র বাদ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা এবং কৃষি শিক্ষা ও গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বিষয়ের পাঠ্যক্রম বিজ্ঞান বিষয়ের সাথে একীভূত করা হয়েছে।
এবারের পরীক্ষার সবচেয়ে ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত হচ্ছে, কেন্দ্র পরিদর্শনে বিশেষ টিম সক্রিয় থাকবে। কেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে কোনো জটলা করতে দেয়া হবে না। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা পুলিশকে সে ব্যাপারে নির্দেশনা ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। কেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে শিক্ষক-কর্মচারী, ছাত্রছাত্রী বা অভিভাবকেরা মোবাইল, মোবাইল ফোনের সুবিধাসহ ঘড়ি, কলম এবং কোনো ধরনের ইলেকট্রনিকস ডিভাইস ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকবে। রাজধানীর প্রতিটি কেন্দ্রের ও জেলা শহরের বড় বড় পরীক্ষা কেন্দ্রের প্রবেশ মুখে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। পরীক্ষা চলাকালে ও পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সিসি ক্যামেরায় মনিটরিং অব্যাহত থাকবে। এবার পরীক্ষা চলাকালে ও এর আগে বা পরে পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট নন, এমন কারো কেন্দ্রে প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পরীক্ষা চলাকালে কেন্দ্রে অননুমোদিত ব্যক্তিরা প্রবেশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ছাড়া গতবারের মতো এবারো পরীক্ষার্থীদের ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশ বাধ্যতামূলক। কোনো পরীক্ষার্থী তা না করলে, তাকে নজরদারির আওতায় আনা হবে। পরবর্তী দিন থেকে তার নাম, রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বরসহ বোর্ডে প্রতিবেদন দিতে হবে।
আন্তঃবোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটি জানায়, সারা দেশে শান্তিপূর্ণ ও নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা নেয়ার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস রোধে কোচিং সেন্টার ও ফেসবুক নজরদারিতে থাকবে। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর সদস্যদের ছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ে গোয়েন্দা নজরদারি চলছে এবং প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এবারের পরীক্ষায় ২৬ লাখ ৭০ হাজার ৩৩৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে জেএসসিতে ২২ লাখ ৬৭ হাজার ৩৪৩ জন এবং জেডিসিতে ৪ লাখ ২ হাজার ৯৯০ জন। এর মধ্যে নিয়মিত হচ্ছেন ২৩ লাখ ৮৯ হাজার ৩৬২ জন। অনিয়মিত হচ্ছে ২ লাখ ৮০ হাজার ৫৪৮ জন। এ ছাড়া এবারের পরীক্ষায় উভয় স্তরে (সাধারণ ও মাদরাসায়) ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীসংখ্যা ২ লাখ ২২ হাজার ৮৬৯ জন বেশি।
জেএসসির পরীক্ষা সূচি
১ নভেম্বর বাংলা প্রথম, ৪ নভেম্বর ইংরেজি, ৮ নভেম্বর গণিত, ১০ নভেম্বর বিজ্ঞান, ১২ নভেম্বর বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, ১৪ নভেম্বর ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, ১৫ নভেম্বর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের জন্য বাংলা ১ম পত্র ১ নভেম্বর, ৩ নভেম্বর বাংলা ২য় পত্র, ৪ নভেম্বর ইংরেজি ১ম পত্র এবং ৫ নভেম্বর ইংরেজি ২য়পত্র, ১১ নভেম্বর কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা, ১৩ নভেম্বর কৃষি শিক্ষা ও গার্হস্থ্য বিজ্ঞান অনুষ্ঠিত হবে।
জেডিসির পরীক্ষার সূচি
১ নভেম্বর কুরআন মাজিদ ও তাজবিদ, ৩ নভেম্বর আরবি ১মপত্র, ৪ নভেম্বর আরবি ২য় পত্র, ৫ নভেম্বর আকাইদ ও ফিকহ, ৮ নভেম্বর গণিত, ১০ নভেম্বর ইংরেজি নিয়মিত ও অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য, বেলা ২টায় ইংরেজি ২য় পত্র শুধু অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের জন্য। ১১ নভেম্বর বাংলা নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের জন্য আর একই সময়ে অনিয়মিতদের জন্য বাংলা ১ম পত্র এবং বিকেলে বাংলা ২য় পত্র। ১২ নভেম্বর বিজ্ঞান, ১৩ নভেম্বর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। অনিয়মিতরা বিকেলে কৃষি শিক্ষা এবং গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বিষয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়।