করোনাভাইরাস! শুধু দেশে নয়, এই মুহূর্তে বিশ্বব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। করোনা এখন একটি আতঙ্কের নামও বটে। এই করোনাভাইরাসের ঝুঁকিতে কাঁপছে পুরো পৃথিবী। তবে নিম হাকিম নামে পরিচিত বাংলাদেশের বিখ্যাত নিম বিশেষজ্ঞ ড. এম এ হাকিম বিশ্ববাসীকে শোনাতে চান আশার কথা।
করোনাভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে নিমের তেল ও ক্যাপসুল ব্যবহার বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। গতকাল রোববার নয়া দিগন্তের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি তার নিম নিয়ে গবেষণার নানা দিক তুলে ধরেন।
বাংলাদেশ নিম ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং ওয়ার্ল্ড নিম অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান ও এশিয়া চ্যাপ্টারের পরিচালক ড. এম এ হাকিম তার গবেষণার মাধ্যমে দাবি করেন, শুধু করোনাভাইরাসই নয়, যেকোনো ধরনের ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রান্ত রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে নিমতেল ও নিম ক্যাপসুল। দুই হাতে নিমের তেল মাখলে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত যে কেউ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকতে পারেন। অর্থাৎ করোনাভাইরাসের শতভাগ ঝুঁকি কমাবে এই নিমতেল।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস বর্তমান সময়ে একটি অন্যতম বার্নিং ইস্যু। সারা পৃথিবীর মানুষ এখন করোনা নিয়ে আতঙ্কিত। অবশ্য আতঙ্কের একটি যৌক্তিক কারণও আছে। করোনাভাইরাসই শুধু নয়, এর আগেও বিভিন্ন দেশে অনেক ভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। এ মুহূর্তে আমরা যারা সাধারণ মানুষ তারা অনেকটা ধূম্রজালের মধ্যে আছি।
কারণ ভাইরাস কী, বা এটা দেখতে কেমন তা আমরা জানি না। ভাইরাসের উৎপত্তি কিভাবে বা কোথায় সেটা আমরা জানি না। আবার কোনটা ব্যাকটেরিয়াল ডিজিজ, সেটাও জানি না। এখন বড় যে সমস্যাটি কাজ করছে সেটি হলো রাশিয়ার কিছু নিউজ পেপারে প্রকাশ হয়েছে করোনাভাইরাস আমেরিকার ল্যাবরেটরিতে তৈরি করা একটি ভাইরাস। কিন্তু এটারও সত্যতা কতটুকু, সেটা কেউ জানি না।
ফলে হাওয়ার ওপরেই মানুষ কথা বলছে। আবার সন্দেহ করার কারণও কিছু আছে। কেননা ব্যকটেরিয়াল এবং ভাইরাস ডিজিজ ল্যাবরেটরিতে তৈরি করা যায়। আমার ক্ষুদ্র গবেষণায় দেখেছি- আমেরিকা, রাশিয়া এবং চীনের কাছেও প্রচুর জীবাণু অস্ত্র আছে।
চীন বলছে, সেদেশে সামুদ্রিক মাছের বাজার থেকে এই রোগের জীবাণু ছড়িয়েছে। তবে মাছের বাজার থেকে যদি ছড়িয়ে থাকে তাহলে এখানে কিন্তু এর সাথে অন্যান্য পশুপাখির বাজারও আছে। অর্থাৎ ঝুঁকি কিন্তু কোনোভাবেই কমছে না।
ড. হাকিমের মতে, কেমিক্যাল দুর্ঘটনা আর জীবাণু দুর্ঘটনা দু’টি ভিন্ন জিনিস। সিনথেটিক কেমিক্যাল দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা যায়, কিন্তু জীবাণু দুর্ঘটনা কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। জৈবিক বা জীবাণু ভাইরাস বেশি ভয়ঙ্কর। কেমিক্যাল ভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হলে ওই একজন ব্যক্তিই মারা যাবে, কিন্তু জীবাণু ভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হলে তার থেকে অন্যরাও আক্রান্ত হবে। এভাবে কোনো জনপদের অসংখ্য ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারে। ঘটতে পারে বড় ধরনের বিপর্যয়।
ড. নিম হাকিম উল্লেখ করেন, আমেরিকার সাথে চীনের একটি বাণিজ্য যুদ্ধ চলছে। এটাও অমূলক নয় যে, আমেরিকার ল্যাবরেটরিতেও এটা তৈরি হতে পারে। ইতোমধ্যে রাশিয়ার কিছু পত্রিকা এই তথ্য দিয়েছে। অবশ্য আমেরিকার দু’টি ইস্যু সামনে রয়েছে। একটি হলো বাণিজ্য অন্যটি ইরানের সাথে তাদের যুদ্ধ।
আমেরিকা বিশ্ববাসীর দৃষ্টি ইরান যুদ্ধ থেকে অন্য দিকে সরিয়ে নেয়ার একটি অপচেষ্টার ষড়যন্ত্র থেকেই এটা করছে কি না, সেটিও ভাবনার অবকাশ আছে। এটা হলো একটি প্রেক্ষাপট, যাতে এমনটি হলেও হতে পারে।
তবে এ কথা পরিষ্কার যে, করোনাভাইরাস হয় চীনের ল্যাবরেটরি থেকে ছড়িয়েছে অন্যথায় আমেরিকার ল্যাবরেটরি থেকে গেছে। যদি কোনো জায়গা থেকেই না ছড়িয়ে থাকে তাহলে তো কোনো না কোনোভাবে এটার জন্ম হয়েছে। এটা তো অস্বীকার করার কিছু নেই। আমরা দেখতে পাচ্ছি, করোনাভাইরাসের কারণেই অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছে।
ড. হাকিম বলেন, রাশিয়া বলছে তারা করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কার করে ফেলেছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলছেন, তারা চীনকে ১০ কোটি ডলার ঋণ দেবেন সহায়তার জন্য। অথচ এ মুহূর্তে সবচেয়ে ঋণগ্রস্ত দেশ হচ্ছে আমেরিকা। তারা কিভাবে ঋণ দেবে? আমেরিকার লোকজন বাংলাদেশীদের চেয়ে বেশি ঋণগ্রস্ত।
সবাই প্রশ্ন করছে- নিজেরা যেখানে ঋণগ্রস্ত সেখানে আমেরিকা কিভাবে চীনকে ঋণ দেবে? অনেকে এমনটি বলছেন, ট্রাম্প যেহেতু বিশ্বসুন্দরীদের মাথায় করোনা নামের মুকুট পরিয়েছিলেন, সে কারণেই এই ভাইরাসের নাম দেয়া হয়েছে করোনা। তবে এগুলো সব আন্দাজ বা অনুমাননির্ভর কথা। এই ভাইরাসের কোন দেশে উৎপত্তি, সেটা নিশ্চিত করতে হলে এই ভাইরাসের ডিএনএ টেস্ট করে নিশ্চিত হওয়া যায়। সত্যিকার অর্থেই এই ভাইরাস কোন দেশের কোন ভূখণ্ডে উৎপত্তি হয়েছে এবং কারা করেছে তা এভাবে বের করা যায়। কিন্তু এটাও তো কেউ করছে না।
করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কার নিয়েও নানা কথা শোনা যাচ্ছে। কানাডা বলছে, তারা আবিষ্কার করে ফেলেছে। আমিরেকানরা বলছে, তারা আবিষ্কার করেছে। আসলে কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে হলে তো তার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় লাগে। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে যেটা মনে হয়েছে, সেটা হলো প্রতিষেধক আবিষ্কার নিয়েও একটা ধূম্রজাল সৃষ্টি করা হয়েছে। কোনো কিছু আবিষ্কার করতে হলে তো তার জন্য সময় ও লোকবল লাগে। এখানে কারা কিভাবে বা কত দিনে এই প্রতিষেধক আবিষ্কার করল তার কোনো তথ্যই কেউ দিচ্ছে না; অথচ এটা আবিষ্কার করতে হলে কমপক্ষে ছয় মাস এর কিনিক্যাল ট্রায়াল করতে হয়। এখানে কিন্তু কোনো কিছুই করা হয়নি। আমার মনে হয়, এগুলোর সব কিছুই বোগাস। এটাকে বিশ্বাস করা যাবে না।
তবে আমার গবেষণায় একটি জিনিসি আছে। সেটা হলো আমি ৪০ বছর ধরে নিম নিয়ে কাজ করি। এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে এমন কোনো ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের জন্ম হয়নি যেটা নিমের রেজিস্ট্যান্স বা যেখানে কোনো ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে নিম প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে না। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি, নিমতেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধী এবং নিমের ক্যাপসুল যদি খাওয়ানো হয় তাহলে আক্রান্ত ব্যক্তিও ভালো হয়ে যাবে।
নিমতেলে এমন এজাডিরেকন্টিন আছে, যা যেকোনো ধরনের ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস শতভাগ ধ্বংস করে এবং প্রটেক্ট করে। নিমের তেল যদি কেউ হাতে মেখে রাখে তাহলে ওই ব্যক্তির পাঁচ স্কয়ার মিটারের মধ্যে কোনো ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া আসবে না। এটা বায়োলজিক্যালভাবে পরীক্ষিত। আমার এই তথ্য আইসিডিডিআর,বি গ্রহণ করতে পারে। তারা আমার কাছ থেকে নিমের তেল নিয়ে পরীক্ষা করে দেখুক এটা কার্যকর কি না?
বিশ্ব স্থাস্থ্য সংস্থার দেয়া নির্দেশিকার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তিনি হাত ধোয়ার ধর্মীয় দিক নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে বারবার হাত ধুতে হবে। আমরা মুসলিম হিসেবে দৈনিক পাঁচবার নামাজ পড়তে গিয়ে অজু করছি। অজুতে অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সাথে আমাদের হাত ধোয়াও হয়ে যাচ্ছে।
অর্থাৎ মুসলিমরা শুধু করোনাভাইরাসই নয়, যেকোনো ধরনের ভাইরাস-জাতীয় রোগ থেকেও তারা অনেকাংশে ঝুঁকিমুক্ত। দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশপথগুলোতে নিমের তেল স্প্রে করা হলে তা করোনাভাইরাসের ঝুঁকি শতভাগ কমাবে। বিশেষ করে বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে নিমের তেল স্প্রে করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।