ময়মনসিংহে দেশের সর্ববৃহৎ সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের ৮৫ ভাগ কাজ সমাপ্ত

বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের যৌথ উদ্যোগে প্রায় আটশত কোটি টাকা ব্যয়ে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলাধীন সুতিয়াখালীতে ব্রহ্মপুত্র নদের তীর ঘেঁষে দেশের সর্ববৃহৎ ৫০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের ৮৫% কাজ প্রায় শেষ হওয়ার পথে। চলতি বছরের জুন মাসে এ প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করার আশা ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

এখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর তা ময়মনসিংহ শহরের কেওয়াটখালী জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের বিদ্যুৎ সেক্টরে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে। বৃহত্তর ময়মনসিংহ বাসী এর সুফল পাবেন। স্থানীয় ভাবে প্রায় তিনশত লোকের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র গুলো জানায়, সরকারের বার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় নবায়ন যোগ্য জ্বালানী বিশেষ করে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে ময়মনসিংহের সুতিয়াখালীতে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। বাংলাদেশ মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের যৌথ প্রতিষ্ঠান এইচ,ডি,এফ,সি সিনপাওয়ার লি. প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ শুরু করে। প্রকল্পের তদারকিতে রয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বর্তমানে প্রকল্পের ৮৫ ভাগ কাজই শেষ। আগামী জুন মাসের মাঝে প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু এর আগেই এর কাজ শেষ হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।

এদিকে এখানে উৎপাদিত ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হবে ময়মনসিংহ শহরের কেওয়াটখালীস্থ জাতীয় গ্রিডে। প্রকল্প স্থান থেকে জাতীয় গ্রিডের দূরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার। ৫ কিলোমিটার ট্রান্সমিশন লাইন এর ১ কিলোমিটার যাবে টাওয়ারের মাধ্যমে। বাকী ৪ কিলোমিটার যাবে মাটির নীচ দিয়ে। ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণের কাজও দ্রুত এগিয়ে চলছে। প্রকল্প স্থানে স্থানীয় প্রকৌশলীদের সাথে যুক্ত আছেন বিদেশী প্রকৌশলীরাও। ভবিষ্যতে প্রয়োজনে প্রকল্পের মাধ্যমে আরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগও রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। প্রকল্পটির কারণে সুতিয়া খালীর ঐ এলাকায় আর্থ সামাজিক পরিবর্তনেরও সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। বেড়ে গেছে জমির দাম। এখানে স্থানীয় লোকজন কাজের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়নের পর তিনশত শ্রমিকের স্থায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রকল্পটিকে ঘিরে এলাকাতে ব্যবসা বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটবে। ময়মনসিংহ শহর তলীর এ এলাকাটি ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিণত হবে বলেও অনেকের ধারণা।

সম্প্রতি (৬ ফেব্রুয়ারি ) উক্ত মেগা প্রকল্পে বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ, বাংলাদেশ পাওয়ার ম্যানেজম্যান্ট ইন্সটিটিউট( বিপিএমআই) সরকারি বিভিন্ন সেক্টরের ৩২ জন প্রকৌশলী কর্মকর্তাদের সরেজমিনে অন জব প্রশিক্ষনের জন্য সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রজেক্ট এর বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রদানের জন্য সয়েল টেস্ট ইরেক্টরস অ্যান্ড স্ট্রাকচারাল ইসুজ অব সোলার পাওয়ার জেনারেশন সিস্টেম বিষয়ে সম্যক ধারণা প্রদান করা হয়।

এইচ.ডি.এফ.সি সিন-পাওয়ার লি. এর পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শেখ মো. শফিকুল ইসলাম, পিএসসি (অব.) জানান, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের যৌথ উদ্যোগে প্রায় আটশত কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারের সকল নিয়ম নীতি মেনে এ কাজ শুরু হয়েছে। পরিবেশ বান্ধব এ বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে আগামী জুনের মধ্যে উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পটির কারণে স্থানীয় ভাবে অনেক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে স্থানীয় কয়েক শতাধিক ব্যক্তি এখানে কাজ করছেন। তিনি বলেন বাংলাদেশে সৌর বিদ্যুৎ বাস্তবায়নের পথে চলমান প্রকল্প গুলোর মাঝে এটিই সবচেয়ে বড় প্রকল্প।

সরকারের পক্ষ থেকে এ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে আছেন ময়মনসিংহ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (দক্ষিণ) এর নির্বাহী প্রকৌশলী ইন্দ্রজিত দেবনাথ এবং জেনারেল ম্যানেজারের দায়িত্বে রয়েছেন মির্জা আল মামুন। তারা বলেন বেসরকারি বিনিয়োগ ও সরকারী তদারকিতে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। সৌর বিদ্যুৎ পরিবেশের জন্য উপযোগী। এটাকে গ্রিন এনার্জিও বলা হয়ে থাকে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ময়মনসিংহের গ্রাহকরা বিশেষ ভাবে উপকৃত হবেন। সূত্র:  ইত্তেফাক

Share this post

scroll to top