বাংলাদেশে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সরকারের সংলাপকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)৷ বাংলাদেশে ইইউ-র হেড অফ ডেলিগেশন রেন্সজে তেরিংক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা নির্বাচনের জন্য একটি ভালো অগ্রগতি৷”
নির্বাচনে ইইউ-র পর্যবেক্ষক দল না পঠানোর বিষয়টিও আবারো নিশ্চিত করেন তিনি৷ বাংলাদেশে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের অভিযোগ সম্পর্কে ডয়চে ভেলেকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ইইউ দূত বলেন, ‘‘আমার পক্ষে একজন দর্শক হিসেবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিতর্ক নিয়ে মন্তব্য করা কঠিন৷ প্রত্যেক পক্ষেরই তাদের নিজস্ব বক্তব্য আছে৷ কিন্তু আমার কাছে যেটা ইতিবাচক মনে হয়েছে যে বিরোধী দলগুলো সরকারের সঙ্গে ১ নভেম্বর সংলাপে বসছে৷ এটা অনেকে ভালো একটি অগ্রগতি৷ এই সংলাপকে আমরা স্বাগত জানাই৷”
তিনি যোগ করেন, ‘‘আমি এক বছর হলো বাংলাদেশে এসেছি৷ তখন থেকেই নির্বাচনের কথা শুনছি৷ শুনেছি বিক্ষোভ হবে৷ রাস্তায় প্রতিবাদ হবে৷ সেই নির্বাচনের সময় এসে গেছে৷ আমরা নির্বাচনকে স্বাগত জানাই৷ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনকে স্বাগত জানাই৷ বিরোধীরা নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ আমরা আশা করি এবং বিশ্বাস করি বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য এবং স্বচ্ছ নির্বাচন হবে৷ এবং আমরা গভীর আগ্রহের সাথে এই নির্বাচনি প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করছি৷
কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল না পঠানোর বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করে বলেন, ‘‘একটি কার্যকর নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠানো বড় একটি কাজ৷ এতে অনেক সদস্য থাকেন এবং এর প্রস্তুতি নিতে মাসের পর মাস সময় লাগে৷ এটা অনেক ব্যববহুল, সময়সাপেক্ষ এবং দীর্ঘ প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়৷ কিন্তু এটা এবার বাংলাদেশের জন্য আমাদের পক্ষে করা সম্ভব হয়নি৷ কিন্তু এর মানে নয় যে আমরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছি না৷ আমাদের দু’জন প্রতিনিধি থাকবেন, তাঁরা দেখবেন৷ আপনাদের স্থানীয় পর্যবেক্ষক থাকবেন৷ তাঁরা হয়ত অনেক ভালো কাজ করবেন৷ তাঁরা দেখবেন আসলে নির্বাচনের সময় আসলে কী ঘটে৷”
বাংলাদেশের নির্বাচনের দিকে শুধু আমরা কেন, সারাবিশ্ব নজর রাখছে৷কারণ এই নির্বাচনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ ১০ কোটি ভোটার এই নির্বাচনে ভোট দেবেন, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷”
এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে সদ্য পাশ হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়৷ এই উদ্বেগের কারণ জানতে চাইলে রেন্সজে তেরিংক বলেন, ‘‘ডিজিটাল নিরপত্তা আইন নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন মহলের কাছ থেকে আমরা তাদের উদ্বেগের কথা শুনেছি৷ সংবাদমাধ্যম, সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী, প্রাতিষ্ঠানিক লোকজন – তাদের উদ্বেগ প্রত্যক্ষ করেছি৷”
তিনি বলেন, ‘‘আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরা বাংলাদেশের আইনমন্ত্রীর কাছে আইনটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়েছি৷ আমাদের সঙ্গে আইনমন্ত্রীর এবং পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে৷ আমাদের জাননো হয়েছে, আইনটি এখনো সংশোধনের সুযোগ আছে৷ সেটা আমাদের কাছে ইতিবাচক মনে হয়েছে৷ আমরাও মনে করি, আইনটি এখনো পরিবর্তনের সুযোগ আছে৷ আমার মনে হয়, এই আইনটি নিয়ে কী করা হচ্ছে বাংলাদেশের সবাই তা লক্ষ্য রাখছেন৷ আমরাও খেয়াল রাখছি৷ বাকস্বাধীনতা, মুক্ত গণমধ্যম এখন বিশ্ব মূল্যবোধের অংশ, যা এখানেও নিশ্চিত করা প্রয়োজন৷”
রেন্সজে তেরিংক বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সুসম্পর্ক অনেক দিনের৷ আমরা দীর্ঘদিনের উন্নয়ন সহযোগী৷ ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্পর্কও অনেক গুরুত্বপূর্ণ৷ বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় গন্তব্য ইউরোপ৷ আমাদের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্কও অনেক ভালো৷ আমরা একসঙ্গে মানবাধিকার, সুশাসন, উন্নয়ন, শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজ কাজ করি৷ আমাদের আরো অনেক কিছু করার আছে৷ আমরা এরই মধ্যে একসঙ্গে অনেক সময় পার করেছি৷”
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চমৎকার৷ আরো অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে৷ আমরা আশা করি, বাংলাদেশ তার স্থিতিশীলতা বজায় রেখে আরো সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাবে৷”