উৎস কর খাতে ব্যাপক ফাঁকি দেয়া হচ্ছে

বাংলাদেশে উৎস কর খাতে ব্যাপক ফাঁকি দেয়া হচ্ছে। এই অভিযোগ করেছে খোদ অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি)। ব্যাপক এই ফাঁকির বিষয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্নও এই বিভাগ। অর্থমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখে এ বিষয়টি উল্লেখ করেছেন আইআরডির সিনিয়র সচিব মো: মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। তিনি এই ফাঁকি রোধে একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী ইলেকট্রনিকস উৎস কর ব্যবস্থাপনা ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা জরুরি বলে অর্থমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। আইআরডি ও অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে উৎস কর খাতে ব্যাপক ফাঁকি রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বাংলাদেশে বেতনভাতা খাতে উৎস করের মাত্র ৪ থেকে ৫ শতাংশ আদায় করা হয়। কিন্তু উন্নত দেশগুলোতে এ হার ৩০ শতাংশের ওপরে। বেতনসহ অন্যান্য উৎস কর খাতের কর ফাঁকি হ্রাসের লক্ষ্যে বিশ্বের অগ্রসর কর প্রশাসনসমূহ আধুনিক ও ডিজিটাল উৎস কর ব্যবস্থাপনা প্রচলন করেছে।’ অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্যের উদ্ধৃৃতি দিয়ে চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, ‘অর্থমন্ত্রী ২০১৬ ও ২০১৭ সালের বাজেট বক্তৃতায় দেশে ইলেকট্রনিক উৎস কর ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। কার্যকর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উৎস করের ফাঁকি রোধ করার জন্য একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী ইলেকট্রনিক উৎস কর ব্যবস্থাপনা ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।’

এ বিষয়ে মন্তব্য করতে যেয়ে এনবিআরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর উৎস কর খাতে শত শত কোটি টাকা ফাঁকি দেয়া হচ্ছে। এটি নতুন কোনো ঘটনা নয়, আধুনিক ব্যবস্থাপনা না থাকার কারণে এই ফাঁকি রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। অনেকে অফিস তাদের চাকুরেদের বেতনের সঠিক তথ্য না দিয়ে কর ফাঁকি দিচ্ছে। অনেকে আবার ব্যাংকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বেতনের কিছু অংশ পাঠিয়ে কর ফাঁকি দেয়।

আইআরডির পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রীকে বলা হয়েছে, বিগত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বাংলাদেশের আয়কর খাতে প্রবৃদ্ধি কাক্সিত মাত্রার চেয়ে কম হচ্ছে। দেশের কর ব্যবস্থা যুগোপযোগী না হওয়ায় তা কাক্সিত পর্যায়ে রাজস্ব সংগ্রহে সমর্থ হচ্ছে না। কর জিডিপি অনুপাত মধ্য মেয়াদে ১৬ শতাংশ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ২০ শতাংশে উন্নীত করতে হলে দেশের কর ব্যবস্থাকে আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ ও যুগোপযোগী করতে হবে। দেশে একটি সমৃদ্ধ কর সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে হলে একদিকে কর সেবার সামর্থ্য বাড়াতে হবে, অন্য দিকে দক্ষ কর তথ্য ব্যবস্থাপনা ও জোরাল এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রমের মাধ্যমে কর ফাঁকির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, কর বিভাগের সর্বশেষ কাঠামোগত সংস্কার সম্পন্ন হয়েছিল ২০১১ সালে। সে সময় আয়কর রিটার্ন দাখিলকারী করদাতার সংখ্যা ছিল মাত্র আট লাখ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে শেষ নাগাদ এ সংখ্যা ২২ লাখ অতিক্রম করবে বলে আশা করা যায়। অর্থাৎ এ কয়েক বছরে আয়কর রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা প্রায় তিন গুণ বেড়েছে, কিন্তু কর ইউনিট বা জনবলের আর কোনো সম্প্রসারণ হয়নি। ফলে একই সংখ্যক ইউনিট ও জনবল নিয়ে বিপুল বর্ধিতসংখ্যক করদাতাকে করসেবা দেয়া ও তাদের কর পরিপালন নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে কর আদায়ের প্রবৃদ্ধির গতি কমছে এবং কর ফাঁকি বাড়ছে।

কর ফাঁকি রোধে কর প্রশাসন কর গোয়েন্দা, তদন্ত ও প্রসিকিউশন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য স্বতন্ত্র প্রশাসনিক ইউনিট গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে আইআরডির প্রতিবেদনে। এ ছাড়াও আয়করের ই- রেজিস্ট্রেশন, ই-রিটার্ন ফিলিং ও ই-পেমেন্টসহ সব ধরনের ই-ট্যাক্স কার্যক্রম কার্যকরভাবে পরিচালনার জন্য স্বতন্ত্র ফাংশনাল ইউনিট থাকা জরুরি। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ই-টিআইন রেজিস্ট্রেশন, ই-ফিলিং ও ই-পেমেন্ট কার্যক্রম চালু করলেও এসব কার্যক্রম পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার জন্য কোনো ফাংশনাল ইউনিট গঠন করা হয়নি। ফলে ই-ট্যাক্স কার্যকরভাবে পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না।

অর্থমন্ত্রীর ২০১৮ সালের বাজেট বক্তৃতার কথা উল্লেখ করে আইআরডির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের মধ্যে নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা হবে এক কোটি এবং রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা হবে ৮০ লাখ। এ লক্ষ্য বাস্তবায়ন এবং অর্জিত লক্ষ্যের আওতায় যে বিপুলসংখ্যক করদাতা হবে তাদের উপযুক্ত করসেবা প্রদান ও কর পরিপালন নিশ্চিত করার জন্য মাঠপর্যায়ের কর অফিসগুলোর উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ প্রয়োজন হবে। এ ছাড়া বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী দেশের গুরুত্বপূর্ণ জেলা ও উপজেলায় কর অফিস স্থাপনের বিষয় উল্লেখ করেছেন।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top