বাকৃবির বাউ সয়েল টেস্টিং কিট ব্যবহারে ফসলের উৎপাদন বেড়েছে দেড়গুন

তানিউল করিম জীম : দেশের অধিকাংশ কৃষক শুধুমাত্র অনুমানের উপর ভিত্তি করে মাটিতে সার প্রয়োগ করে থাকে। যার ফলে মাটির উর্বরতা যেমন কমে যায় তেমনি ফসলের আশানুরুপ ফলনও হয় না। কিন্তু বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের উদ্ভাবিত মাটি পরীক্ষার বিশেষ যন্ত্র ‘বাউ সয়েল টেস্টিং কিট’ ব্যবহার করে কৃষিজাত ফসল উৎপাদনে অধিক লাভবান হচ্ছে কৃষকরা। এ যন্ত্র ব্যবহার করে মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে মাটির গুণাগুণ ও সারের পরিমাণ সম্পর্কে ধারণা পাচ্ছে তারা। যার ফলে পরিমিত সার ব্যবহার করে কৃষকরা পূর্বের তুলনায় একই জমিতে একর প্রতি দেড়গুন বেশি ফসল উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছে। মাটি পরীক্ষার এ যন্ত্র ব্যবহার করে ইতোমধ্যে অধিক ফলন পাওয়ায় উচ্ছাসিত ও আনন্দিত ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষক।

অস্ট্রেলিয়ার দাতা সংস্থা এসিআইএআর এবং বাংলাদেশের কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে ধানসহ অন্যান্য ফসলের পরিমিত মাত্রায় সার ব্যবস্থাপনার উপর একটি প্রকল্প (নিউম্যান) পরিচালনা করা হয়। প্রকল্পের একটি অংশ হিসেবে ময়মনসিংহ সদরের সুতিয়াখালী গ্রামের কৃষকরা এ সয়েল টেস্টিং কিট ব্যবহার করে আমন ধান ও অন্যান্য শস্যজাত ফসল চাষবাদ করে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকদের নিজস্ব চাষ পদ্ধতির চেয়ে ‘বাউ সয়েল টেস্টিং কিট’ ব্যবহার করে কম খরচে ও কম সময়ে মাটি পরীক্ষা করে এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ করে অধিক লাভবান হয়েছেন।

প্রকল্পের আওতায় থাকা ময়মনসিংহের সুতিয়াখালি গ্রামের কামরুল হাসান নামের এক কৃষক বলেন, আমি আগে অনুমান স্বাপেক্ষে জমিতে সার দিতাম। এতে বেশি সার পরিমাণ প্রয়োগ করেও ভালো ফলন পেতাম না। পরে আমি এই যন্ত্রের মাধ্যমে আমার জমিতে সারের পরিমাণ জানতে পারি ও সে অনুযায়ী প্রয়োগ করি। আমার ২ একর জমিতে আগের মৌসুমে ১২০ মন ধান পেয়েছিলাম। কিন্তু এবার এই পদ্ধতি মেনে ওই একই জমিতে ১৮০ মন ধান পেয়েছি।

ময়মনসিংহের কুষ্টিয়া ইউনিয়নের আরেক কৃষক মো. দুলাল উদ্দিন বলেন, আমার ২৪ বিঘা জমির অর্ধেকে আমি অনুমান নির্ভর সার প্রয়োগ এবং বাকি অর্ধেকে এই যন্ত্রের মাধ্যমে সারের পরিমাণ জেনে তা প্রয়োগ করি। পরিমিত সার প্রয়োগের জমিগুলো থেকেই আমি অধিক ফলন পেয়েছি। যারা একবার এই যন্ত্র ব্যবহার করবে, তারা বারবার এটা ব্যবহারে আগ্রহ দেখাবে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে কৃষি সুরক্ষা সেবাদানকারী সংগঠন (কাসপা) আয়োজনে সুতিয়াখালী গ্রামে নিউম্যান প্রকল্পের প্রদর্শণী মাঠ পরিদর্শন ও আলোচনা সভায় তারা এসব তথ্য জানান। বাকৃবির গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ওয়াকিলুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান দাতা সংস্থা এসিআইএআর প্রতিনিধি ড. রবিন জনস্টোন। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে আরেক প্রতিনিধি ড. জেমস কুইল্টি ও অস্ট্রেলিয়ার মারডক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রিচার্ড বেল উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও এলাকার কৃষকেরা ওই সভায় অংশ নেয়। এর আগে নিউম্যানের প্রকল্প সমন্বয়কারী ড. এনামুল হকের নেতৃত্বে তারা ওই এলাকার বিভিন্ন ফসলি জমি পরিদর্শন করেন।

Share this post

scroll to top