গ্রন্থমেলায় পাওয়া যাচ্ছে সায়ফুজ্জামান শিখনের ‘দিতে পারো একশ ফানুস এনে’

বৃহত্তর ময়মনসিংহের সন্তান সায়ফুজ্জামান শিখনের গল্পগ্রন্থ ‘দিতে পারো একশ ফানুস এনে’ বইটি পাওয়া যাচ্ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০-এ এক রঙ্গা এক ঘুড়ি প্রকাশন থেকে । গ্রন্থটির প্রচ্ছদ করেছেন নবী হোসেন।

‘দিতে পারো একশ ফানুস এনে’ গল্পগ্রন্থের ভূমিকা কথন
তুমি কোনো পড়ুয়া মেয়ের সাথেই প্রেম করো। এমন মেয়ের প্রেমে পড়ো যে কাপড়ের বদলে বই কিনে টাকা শেষ করে ফেলে। অতিরিক্ত বই রাখতে গিয়ে যার আলনার জায়গা শেষ হয়ে যায়। এমন মেয়ের সাথে প্রেম করো, যার কাছে সবসময়েই পড়তে-চাওয়া বইয়ের তালিকা থাকে, বারো বছর বয়স থেকেই যার একটা লাইব্রেরি কার্ড আছে। এমন এক মেয়েকে খুঁজে বের করো যে পড়ে। কীভাবে বুঝবে? তার ব্যাগে সবসময়েই একটা না-পড়া বই থাকবে। বইয়ের দোকানের তাকগুলোর ওপর দিয়ে মুগ্ধ চোখ বুলিয়ে নিয়ে যাবে যে, আর পছন্দের বই দেখলে নিঃশব্দে চিৎকার করে উঠবে। পুরনো বইয়ের দোকানে একটা বই হাতে নিয়ে তার পাতা শুঁকতে দেখছো যেই অদ্ভুত মেয়েটাকে- ওই হচ্ছে পড়ুয়া। ওরা কখনোই বইয়ের পাতার গন্ধ না শুঁকে থাকতে পারে না পাতাগুলো হলদেটে হলে তো কথাই নেই।

রাস্তার ধারের কফির দোকানটায় অপেক্ষা করতে করতে বই পড়বে সে। তার মগে উঁকি দিলে দেখবে সেখানে ক্রিম ভাসছে, কারণ এর মধ্যেই ডুবে গেছে সে বইয়ের মধ্যে। লেখকের তৈরি পৃথিবীতে হারিয়ে গেছে। সেখানে বসে পড়লে তোমার দিকে কঠিন চোখে তাকাতে পারে সে পড়ার মাঝখানে কেউ বাগড়া দিলে পছন্দ করে না যে ওরা! বইটা তার ভালো লাগছে কিনা জিজ্ঞেস ক’রো। আরেক কাপ কফি কিনে দিও তাকে। মুরাকামিকে নিয়ে তুমি সত্যি সত্যি কী ভাবো সেটা তাকে জানিও। ‘ফেলোশিপ’-এর প্রথম অধ্যায় সে শেষ করতে পেরেছে কিনা জেনে নিও। যদি বলে যে সে জেমস জয়েসের ‘ইউলিসিস’ বুঝতে পেরেছে- ধরে নিও যে নিজেকে বুদ্ধিমতী প্রমাণ করার জন্যই কেবল এ কথা বলছে সে।

জিজ্ঞেস করো- সে এলিসকে ভালোবাসে, নাকি এলিসের মতো হতে চায়। পড়ুয়া মেয়ের সাথে প্রেম করা সহজ। জন্মদিন, বড়দিন, বার্ষিকী যে কোনো উপলক্ষ্যেই তাকে বই উপহার দিও। কথার মালায় গাঁথা উপহার দিও তাকে- গানে, কবিতায়। নেরুদা, পাউন্ড সেক্সটন, কামিংস- এর বইও দিতে পারো। কথা মানেই ভালোবাসা সেটা যে তুমি বোঝো তা তাকে জানিও।

বই আর বাস্তবের পার্থক্য সে জানে- এটুকু বুঝে নিও; তবে নিশ্চিত থাকতে পারো- নিজের জীবনকে সে একটু হলেও তার প্রিয় বইয়ের মতো করে গড়ে নিতে চাইবে। যদি চায়- তাতে তোমার দোষ নেই কিন্তু! তাকে কোনো না কোনোভাবে চেষ্টাটুকু তো করতে হবে। তার সাথে মিথ্যে বলো। সে যদি ব্যাকরণ বোঝে, তাহলে এটাও বুঝে নেবে যে তোমার মিথ্যে বলার প্রয়োজন ছিল। কথার বাইরেও আরও অনেক কিছু থাকে: প্রেরণা, মূল্যবোধ, বিরোধ, সংলাপ। পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে না তুমি মিথ্যে বললে। তাকে হতাশ ক’রো। কারণ যেই মেয়ে পড়ে সে জানে যে ব্যর্থতা থেকেই এক সময় পরম পাওয়া আসে। কারণ সে জানে সবকিছুরই শেষ আছে। জানে, তুমি সবসময়েই একটা নতুন পর্ব লিখতে পারবে। জানে, তুমি যতবারই শুরু করো না কেন প্রতিবারই জয়ী হয়ে ফিরে আসতে পারবে।

জীবনে একজন-দুজন খলনায়ক থাকবেই এ কথাও জানে সে। তুমি যা কিছু হতে পারো নি সেগুলোতে ভয় কীসের? যেসব মেয়ে পড়ে, তারা এও জানে- বইয়ের চরিত্র যেমন গড়ে ওঠে, মানুষও তেমন, ‘টোয়াইলাইট’ সিরিজের চরিত্রগুলো ছাড়া। তুমি যদি কোনো পড়ুয়া মেয়েকে খুঁজে পাও, তাকে নিবিড় করে নিও। রাত দুটোয় ঘুম ভেঙে যদি দেখো একটা বই বুকে জড়িয়ে বসে সে কাঁদছে- তাকে এক কাপ চা বানিয়ে দিও, আর জড়িয়ে ধরে রেখো। কয়েক ঘণ্টার জন্য হয়তো তাকে তুমি হারাবে কিন্তু সে শেষমেশ তোমার কাছেই ফিরে আসবে। সে এমনভাবে কথা বলবে যেন বইয়ের চরিত্রগুলো সব বাস্তব- কারণ কিছুক্ষণের জন্য তারা আসলেও তাই হয়ে উঠবে। একটা বেলুনে বসে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিও তুমি। কিংবা কোনো রক কনসার্ট চলার সময়। অথবা এর পরের বার যখন সে অসুস্থ হয়ে পড়বে- তখন খুব সাদাসিধেভাবে বোলো।

তখন তোমরা এত বেশি হাসতে থাকবে- মনে হবে যেন হৃৎপিণ্ডটা কীভাবে যে এখনো ফেটে গিয়ে বুকটাকে রক্তে ভাসিয়ে নিচ্ছে না! তোমরা নিজেদের জীবনের গল্প লিখবে- অদ্ভুত নামের সব বাচ্চা থাকবে তোমাদের, আরও অদ্ভুত হবে তাদের রুচি।

সে তাদের ‘ক্যাট ইন দ্য হ্যাট’ আর ‘আসলান’কে চিনিয়ে দেবে- একই দিনেই হয়তো। বুড়ো বয়সে শীতকালে একসাথে হাঁটতে যাবে তোমরা তার নিচু গলায় কীটসের কবিতা আবৃত্তি শুনতে শুনতে বুট থেকে তুষার ঝেড়ে ফেলবে তুমি। তুমি এমন এক মেয়ের সাথে প্রেম ক’রো যে পড়ে- কারণ তুমি তার যোগ্য।

তোমার জীবনটাকে সবচেয়ে বেশি রাঙিয়ে দিতে পারে এমন মেয়েই পাওয়া উচিত তোমার। তবে তোমার যদি তাকে একঘেয়েমি, বাজে সময় আর আনাড়ি প্রস্তাব ছাড়া আর কিছু না দেওয়ার থাকে- তবে তোমার একলা থাকাই ভালো। তুমি যদি পৃথিবী আর এর বাইরের অন্য সব পৃথিবীকেও পেতে চাও- এমন মেয়ের সাথে প্রেম ক’রো যে পড়ে। আরও ভালো হয়, যদি এমন মেয়ের সাথে প্রেম করতে পারো যে লিখতে ভালোবাসে।
(অনুবাদ)

অনেকে বলে এমন মেয়ে কই পাব? অথচ এমন একটা মেয়ের সাথে পরিচয় ছিল! ভালো থেকো কঙ্কাবতী।

‘ও যে মানে না মানা’- শিরোনামে আমি একটা উপন্যাস লিখা শুরু করেছিলাম। নানা ব্যস্ততায় তা শেষ করা হয়নি। আর সত্যি বলতে আমি আসলে ভেবে পাচ্ছিলাম না উপন্যাসের মতো একটা বড় বই কীভাবে লিখব? কিন্তু ছাপতে এসে দেখি প্রায় এক তৃতীয়াংশ লিখে ফেলেছিলাম। চাইলে কমপ্লিট করা যেত।
উপন্যাসের প্রথম এক তৃতীয়াংশ বইতে উল্লেখ করা হল!
বাকিটুকু অন্য কোনো দিন।

অন্য সবগুলো গল্প লেখার এবং পরবর্তীতে পড়ার সময় আমার বারবার মনে হয়েছে দূরে কোথাও ভ্রমণ করছি, সুদূর পথে।
আশা করি পাঠকরাও সে অনুভূতি পাবেন।

লেখক পরিচিতি:
সায়ফুজ্জামান শিখন ১৯৯৩ সালের ১১ জুন টাংগাইল জেলার মধুপুর থানায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম এবিএম রাশেদী, মাতা জেসমিন সুলতানা। তিন ভাই বোনের মাঝে তিনি মধ্যম। তার বড় এক বোন এবং ছোট এক বোন আছে। ছোট্ট শহর মধুপুরের অবাধ স্বাধীনতার মাঝে তার বেড়ে ওঠা। ২০১০ সালে মধুপুর শহীদ স্মৃতি স্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০১২ সালে হাফ নটরডেম হাফ শহীদ স্মৃতি কলেজ থেকে এইচএসসি শেষ করেন। পরবর্তীকালে ময়মসিংহে অবস্থিত কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ থেকে ২০১৮ সালে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি দীন আই হসপিটালে অপথ্যালমোলজিস্ট হিসেবে কর্মরত আছেন।

লেখালেখির শুরু বাল্যকাল থেকেই। তারুণ্যের প্রথম বই প্রকাশের দীর্ঘদিনের ইচ্ছা থাকে ২০২০ সালের অমর একুশে বইমেলায় লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

‘দিতে পারো একশ ফানুস এনে’ পাওয়া যাবে অমর একুশে গ্রন্থমেলার ৫৮৭ নম্বর স্টলে।

Share this post

scroll to top