আশকোনায় চারস্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনীর কোয়ারেন্টাইনে আছেন চীনের উহান ফেরত ছেলে। বাইরে খাবার আর গামছা হাতে অপেক্ষায় আছেন ষাটোর্ধ বাবা। হজক্যাম্পের ভেতরে অস্থায়ীভাবে স্থাপিত উহান ফেরত যাত্রীদের জন্য কোয়ারেন্টাইনে যাওয়ার কোনো অনুমতি নেই কারো। কিছু সময় অপেক্ষার পর কর্তৃপক্ষের অনুমতির পরেই ছেলের জন্য আনা খাবার আর গামছা ভেতরে পাঠাতে পারলেন বাবা মোকাম্মেল হোসাইন। অনেকে আবার উহান ফেরত স্বজনের জন্য নিয়ে এসেছেন লুঙ্গি বা তোয়ালে। কেউ বা এনেছেন বাসায় রান্না করা খাবার।
তবে কাউকেই হজ ক্যাম্পের তৃতীয় তলায় স্থাপিত অস্থায়ী কোয়ারেন্টাইনে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। করোনা ভাইরাসের অতিরিক্ত সতর্কতায় টেলিফোলে কথা বলা ছাড়া সাক্ষাতের কোনো সুযোগ কাউকেই দেয়া হচ্ছে না। রোববার সকাল থেকেই রাজধানীর আশকোনার হজক্যাম্পের বাইরে ছিল উহার ভেতর যাত্রীদের স্বজনদের ভিড়। স্বজনদের জন্য নিয়ে এসেছেন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। বাইরে অপেক্ষা করছেন মা, বাবা, ভাই অথবা অন্য কোনো আপনজন।
এদিকে হজক্যাম্পে অবস্থান করা উহান ফেরত যাত্রীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত মহাখালীস্থ আইইডিসিআর এর পরিচালক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা জানিয়েছেন, চীনের উহান থেকে ফেরত আসা সকল বাংলাদেশিই সুস্থ আছেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিশেষ ফ্লাইটে শনিবার দুপুরে ৩১২ জন বাংলাদেশি নাগরিক চীন থেকে দেশে ফিরে আসেন। ফ্লাইটটি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি জ্বর থাকায় সাতজনকে সরকারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও একজন সন্তানসম্ভবা গৃহবধূকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) পাঠানো হয়েছে। গৃহবধূর সাথে তার স্বামী ও শিশু সন্তান রয়েছে। অবশিষ্ট ৩০২ জনকে আশকোনা হজ ক্যাম্পে কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছে।
উহান ভেরত ভাইয়ের জন্য বাসায় রান্না করা খাবার নিয়ে এসেছেন রানা হোসেন। তাদের বাসা মোহাম্মদপুরে। ছোট ভাই পড়াশোনার জন্য থাকতো চীনের উহানে। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাবের কারণে অন্যদের সাথে তার ভাইকেও জরুরীভাবে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ভেতরে দেয়া খাবার রুচীমতো হচ্ছে না এমন কথা মোবাইলে জানানোর পর তার মা সকালে রান্না করা খাবার পাঠিয়েছেন বড় ভাই রানার মাধ্যমে। হজক্যাম্পের সামনে নয়া দিগন্তের এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় মৎস্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক মোকাম্মেল হোসাইনের সাথে।
তিনি জানান, আমার দুই ছেলে চীনের উহানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে। ছোট ছেলে মাসখানেক আগে ছুটিতে দেশে এসেছে। বড় ছেলে আগামী মাসে আসার কথা ছিল। কিন্তু এর মধ্যে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ায় সরকার উদ্যোগ নিয়ে আমার ছেলেসহ সবাইকে দেশে নিয়ে এসেছেন। এটা সরকারের একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। আমি ছেলের জন্য আজ লুঙ্গী, তোয়ালে আর বাথরুমে ব্যবহারের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে এসেছি।
আমার ছেলে ১২ নং ডরমেটরীতে আছে। আমি যদিও ভেতরে যেতে পারছি না। তাই এখানকার নিয়ম মেনে ডাক্তারদের মাধ্যমেই এগুলো ভেতরে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি।
এদিকে চীন ফেরত বাংলাদেশিদের শারীরিক অবস্থার বিষয়ে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গঠিত বিশেষজ্ঞ দলের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন জানান, কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাতজনের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। আগের চেয়ে একটু উন্নতি হয়েছে। তাদের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া আরেকজন গৃহবধূ (গর্ভবতী) নিজের ইচ্ছেতে সিএমএইচে গেছেন। তার সঙ্গে তার স্বামী ও শিশু সন্তানও রয়েছে। তিনিও ভাল আছেন।
অন্যদিকে আশকোনা হজ ক্যাম্পে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ৩০২ জনও সুস্থ আছেন। জ্বরে বা অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত হওয়ার কথা তাদের কেউ এখনো মেডিকেল টিমের কাছে জানাননি।
উল্লেখ্য, গত ২১ জানুয়ারি থেকে গতকাল সকাল ১০টা পর্যন্ত চীন থেকে মোট পাঁচ হাজার ৫৪৬ চীনা নাগরিক ও বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। এর মধ্যে গত শনিবার চীনের উহান প্রদেশ থেকে বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে দেশে ফিরেছেন ৩১২ বাংলাদেশি।