আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারাকে অব্যাহত রাখতেই আওয়ামী লীগ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জোটের সাথে সংলাপে সম্মত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারাকে অব্যাহত রাখতে এই সংলাপে সম্মত হয়েছি। এ কারণেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ড. কামাল হোসেনকে ১ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এই আলোচনা হবে খোলা মনে।’
ওবায়দুল কাদের মঙ্গলবার সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। সমসাময়িক রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ড. কামাল হোসেন ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে চিঠি দিয়েছেন। এ নিয়ে মন্ত্রিসভায় যে কথা হয়েছে, সেখানে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন- যেহেতু তারা দেখা করতে চেয়েছেন, শেখ হাসিনার দরজা তাদের জন্য খোলা, তারা দেখা করতে পারবেন।
তিনি বলেন, ড. কামাল হোসেনের প্রতি আমাদের আস্থা আছে। প্রধানমন্ত্রী তাকে চাচা বলে সম্বোধন করেন। যদিও তিনি ঐক্যফ্রন্টের বা ওই জোটের শীর্ষ নেতা কি-না আমরা নিশ্চিত নই। এই জোটের নেতৃত্ব কী লন্ডন থেকে দেওয়া হচ্ছে নাকি বাংলাদেশ থেকে দেয়া হচ্ছে তা সংলাপে বসার পর বোঝা যাবে।
কোনো চাপের কারণে এই সংলাপে বসা হচ্ছে না- জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা কোনো চাপে এই সংলাপে বসছি না। সংলাপে বসার অর্থ কারো প্রতি নতি শিকার করা নয়। এমনতো না যে, দেশে মহাআন্দোলন হচ্ছে, সেই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বসছি। শেখ হাসিনা বলেছেন, ঐক্যফ্রন্ট আমার সঙ্গে দেখা করতে চান, আমি কেনো সময় দেবো না।
সংলাপের কোন কোন ইস্যুতে আলোচনা হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্ট চিঠির সঙ্গে উনাদের সাত-দফা দাবি এবং ১১টি লক্ষ্যের কপি সংযুক্ত করে দিয়েছেন। এসব নিয়েই আলোচনা হবে। তবে সাত-দফার মধ্যে কয়েকটি দফা আছে যা সংবিধান সম্পর্কিত। দুয়েকটি আছে আইন-আদালতের সঙ্গে সম্পর্কিত। আর দুয়েকটি আছে নির্বাচন কমিশন সম্পর্কিত। আর তারা যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কথা বলছেন, সেটাতো তারা এখনো পাচ্ছেন, সভা-সমাবেশ করছেন। আর তফসিল ঘোষণা হয়ে গেলে এসব তখন নির্বাচন কমিশন দেখবে। আর বিদেশি পর্যবেক্ষকের যে কথা তারা বলছেন, সেটাও আমাদের গ্রহণ করার বিষয় নয়- এটাও নির্বাচন কমিশনের ব্যাপার।
জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট রয়েছে, এ ক্ষেত্রে বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বিএনপির সঙ্গে সংলাপ করছি না। আমরা সংলাপ করছি ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে। সংলাপে বিএনপির লোকজন থাকবে কি-না আমরা এ ব্যাপারে কোনো শর্ত দেইনি।’
সংলাপের মাধ্যমে সংকটের সমাধান হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, সংলাপের উত্তাপে সংকটের বরফ গলবেই। তারা যেটিকে সংকট বলছে, আমরা সেটিকে সংকট মনে করি না। আলাপ-আলোচনার মধ্যদিয়ে অনেক সংকটই সমাধান হয়ে যায়।
এই সংলাপের পর অন্য কোনো দলের সঙ্গে সংলাপে বসবেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেই সুযোগ নেই। তফসিল ঘোষণার পর আর কারো সঙ্গে সংলাপের সুযোগ নেই।
নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, সংলাপের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। সহায়তা করবে সরকার। সরকারের আকার কেমন হবে এটি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার।
ইভিএম ব্যবহারের জন্য আইন পাস করার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা ডিজিটাল ক্রাইম করবে না, তাদের ভিত হওয়ার কিছু নেই। দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন করবে এই আইন।
গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মিন্টুর সঙ্গে আলাপের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিভিন্ন পত্রিকায় খবর এসেছে আমরা নাকি ১০ জনের নাম প্রস্তাব করতে বলেছি। এটা সত্য নয়। আমি মোস্তফা মহসিন মিন্টুর সঙ্গে বলেছি তারা কয়জন আসতে চান। তিনি বলেছেন, ১৫ জন। আমি বলেছি, ১৫ জন কেনো, চাইলে ২০-২৫ জনও আসতে পারেন।
তিনি বলেন, সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের কতজন থাকবেন সেটা নিয়ে আমাদের পক্ষ থেকে কোনো বাধা নেই। মঙ্গলবার সন্ধ্যার মধ্যে ঐক্যফ্রন্ট তালিকা পাঠাবে। সেটা দেখে আওয়ামী লীগও তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে।
সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়ে গত ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দেয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সেখানে সাত-দফা দাবি এবং ১১টি লক্ষ্য সংবলিত চিঠি দেয় গণফোরাম-বিএনপিসহ কয়েকটি দলের সমন্বয়ে গঠিত এজোট।
এদিকে মঙ্গলবার সকালে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয় আওয়ামী লীগ।