ময়মনসিংহ লাইভ ডেস্ক : শুধু গবেষণাগারেই নয়, দেশের যেকোনো এলাকার মানুষ এখন বাস্তবেও শুরু করতে পারে মুক্তা চাষ। তা-ও দেশি সাধারণ ঝিনুকের ভেতরেই। গত বছর এসংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রকল্প শেষ হওয়ার মধ্য দিয়ে এমন মুক্তা চাষ উন্মুক্ত হয়ে গেছে দেশের মানুষের কাছে। স্বল্প শিক্ষিত বা অশিক্ষিত মানুষও অল্প সময়ের প্রশিক্ষণে শিখে নিতে পারে মুক্তা চাষ পদ্ধতি। এর মাধ্যমে দেশে কৃত্রিমভাবে মুক্তা চাষের সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে গেছে। ২০১২ সালের জুলাই মাসে ১৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয়ে মুক্তা চাষ প্রযুক্তি উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) অধীনে ময়মনসিংহে চালু করা হয় মুক্তা গবেষণাগার। প্রকল্পটি শেষ হয় গত বছরের জুনে। প্রকল্পের অধীনে ময়মনসিংহ ও কক্সবাজারে দুটি গবেষণাগার তৈরি করা হয়। এখন গবেষণা শেষ হওয়ায় এখান থেকে অর্জিত সাফল্য কাজে লাগিয়ে যে কেউ মুক্তা চাষে এগিয়ে আসতে পারে।
গবেষণা অনুসারে একটি দেশি ঝিনুক থেকে তৈরি হয় সর্বোচ্চ ১২টি মুক্তা। ছয় মাসে সর্বোচ্চ পাঁচ মিলিমিটার এবং গড়ে তিন মিলিমিটার আকারের মুক্তা তৈরি করা যায়। এগুলো সাধারণত সাদা, ছাই, কমলা ও গোলাপি রঙের হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহসিনা বেগম তনু বলেন, ‘আমাদের এখন মুক্তা চাষের নতুন এক সুযোগ তৈরি হয়েছে। দেশে ও দেশের বাইরে এর ভালো মার্কেটও রয়েছে। আর্থিকভাবেও এটি লাভজনক। মাছ চাষের সঙ্গেই কম খরচে বাড়তি উৎপাদন হিসেবে মুক্তা চাষ করা সম্ভব। আমাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেকেই এখন মুক্তা চাষে লেগে যাচ্ছেন। প্রতিদিনই কেউ না কেউ আসছেন মুক্তা চাষ শিখতে। আমরাও তাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দিচ্ছি।’
ওই বিজ্ঞানী বলেন, ‘মুক্তা চাষ এখন আর আমাদের দেশের জন্য কঠিন কোনো প্রযুক্তি নয়। এটি সহজ একটি পদ্ধতি। কেবল মনোযোগ দিয়ে যত্নের সঙ্গে প্রক্রিয়াগুলো অনুসরণ করলেই চলে। এ ক্ষেত্রে দেশি একটি জীবিত ঝিনুকের ভেতরের বিশেষ পর্দা কেটে আরেকটি জীবিত ঝিনুকের ভেতরে বসিয়ে দিলে ওই ঝিনুকের ভেতর এক ধরনের লালা নিঃসরণ হয়ে টিউমারের মতো তৈরি হয়। ঝিনুকের ওই টিউমারটিই আসলে মুক্তা।’
বিশেষজ্ঞরা জানান, মুক্তা চাষের উপজাত হিসেবে ঝিনুকের খোলস থেকে নানা অলংকার, প্রসাধনী, হাঁস-মুরগি ও মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা যায় কিছুটা প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে। মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশের জলবায়ু মুক্তা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। ভারত, চীন, জাপান, ফিলিপাইন, ভিয়েতনামসহ কিছু দেশে আরো আগে থেকেই বিপুল পরিমাণ মুক্তা চাষ হয়ে আসছে।