৫ বছরে যতটা অবনতি হলো মুস্তাফিজের

মুস্তাফিজুর রহমান শেষ পাঁচটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন মাত্র একটি। ম্যাচগুলো অবশ্য ছিল ভারত ও পাকিস্তানের মতো বড় প্রতিপক্ষের সাথে। ২০১৫ সালে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেক হয় মুস্তাফিজুর রহমানের, সেবছর তিনি মোট পেয়েছিলেন ৬ উইকেট।

২০১৬ সালে মুস্তাফিজুর রহমান ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা বছর কাটান, সেবার ৩১ ওভার ৫ বল করে মাত্র ১৯৫ রান দেন, ইকোনমি রেট ছিল ৬.১৩। ২০১৬ সালে মুস্তাফিজ ১৬টি উইকেট নেন। ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে খুব বেশি বল করেননি মুস্তাফিজ, তবু ১৪ ওভারে ইকোনমি রেট ছিল ৬.৮৬। এরপর ২০১৮ সালে তিনি এক বছরে ২১টি উইকেট নেন ২১ গড়ে।

২০১৯ সালে মোট ২৪ ওভার ৪ বল করেন মুস্তাফিজ, রান দেন ২১৭, উইকেট মাত্র চারটি। এই বছর মুস্তাফিজের গড় ছিল ৫৪। পাকিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় টি-টোয়েন্টি শুরু হওয়ার আগে মুস্তাফিজ ২০২০ সালে সাত ওভার বল করেছেন রান দিয়েছেন ৬৯। উইকেট নিয়েছেন একটি। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম দুটি টি টোয়েন্টিতে যেখানে দলীয় সংগ্রহ ১৫০ পার করেনি, সেখানে মুস্তাফিজ ওভারে প্রায় ১০ করে রান দিচ্ছেন যেটা কম পুঁজি নিয়ে জয়ের সম্ভাবনা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কমিয়ে দেয়।

বিশ্লেষণ কী বলছে

তালহা জুবায়ের বাংলাদেশের একজন সাবেক ফাস্ট বোলার। তার মতে মুস্তাফিজুর রহমানের ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে ২০১৬ সালের ইনজুরি ও সার্জারি। এরপর আর তার কাটার ঠিক আগের মতো ক্ষুরধার হয়ে ওঠেনি।

তিনি বলেন, যেসব উইকেটে বল গ্রিপ করে না সেখানে মুস্তাফিজের জন্য বল করা কঠিন হয়ে পড়ে। প্রথম যখন এসেছিল অনেকেই ওর বল বুঝতো না। কিন্তু একটা স্কিল নিয়ে আপনি পুরো ক্যারিয়ার খেলে যাবেন সেটা সম্ভব না।

তালহা জুবায়েরের মতে, বাংলাদেশের উইকেটে খেললে একটা দুটা স্কিল দিয়ে কাটানো যায়। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেটা সম্ভব না।

‘টিকে থাকার জন্য বোলাররা নিজেই কাজ করে, নতুবা টিকে থাকা কষ্টকর। মুস্তাফিজের বলে গতি আছে কিন্তু সুইংটা তেমন হচ্ছে না।’

দক্ষতার কাজটা নিজে থেকে না করলে পিছিয়ে যায় ক্রিকেটাররা, যেটা মুস্তাফিজুর রহমানের ক্ষেত্রে হয়েছে বলে মনে করেন তালহা জুবায়ের।

মুস্তাফিজে হতাশ ভক্তরা

ক্রিকেট ভক্তরা মুস্তাফিজের বোলিং নিয়ে যথেষ্ট হতাশ। তার প্রমাণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্রিকেট নিয়ে যেসব গ্রুপে আলোচনা হয় সেখানে বলা হচ্ছে মুস্তাফিজের ওপর বাংলাদেশের ক্রিকেটে যে প্রত্যাশা করা হয় সেটা তিনি পূরণ করতে পারছেন না।

বাংলাদেশের একটি পুরাতন ক্রিকেট সমর্থক গোষ্ঠী ‘দৌড়া বাঘ আইলো’র সহ সভাপতি সাদমান সাজিদ বিষয়টি বলেন এভাবে,‘যে সহজাত প্রতিভা নিয়ে মুস্তাফিজ এসেছিলেন তার ছিটেফোঁটাও এখন তার বোলিংয়ে দেখা যাচ্ছে না।’

‘তার সমসাময়িক বোলাররা যখন দ্যুতি ছড়াচ্ছেন তখন তিনি হয়ে উঠেছেন রানমেশিন। নিষ্প্রাণ কাটার, ভ্যারিয়শনের লাইনলেন্থ ঠিক রেখে বল করতে না পারা তার সাথে যোগ হয়েছে বাজে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ আর ব্যাটসম্যান বুঝে বল করতে না পারার অক্ষমতা।’

সাজিদ মনে করেন মুস্তাফিজ নিজের সামর্থ্য নিয়ে অবগত নন এবং তিনি নিজেকে নিয়ে কাজ করছেন না।

‘তবে যাই করুক না কেন কিছুই যে কাজে লাগছে না তার প্রমাণ তার রিসেন্ট (সাম্প্রতিক) পারফরমেন্স। তাই মুস্তাফিজকে নিয়ে হতাশাটা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে।’

মুস্তাফিজুর রহমান শেষবার টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তিন উইকেট পেয়েছেন ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে। আর শেষবার ছয় বা তার কম রানরেটে বল করেছেন ২০১৮ সালেরই নিদাহাস ট্রফিতে। কিন্তু একটা সময় ভাবা হতো মুস্তাফিজুর রহমান টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বেরই অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার, যে কারণে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে তাকে নিয়েছিল সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ। ২০১৬ সালের আইপিএলে মুস্তাফিজ নিজেকে প্রমাণও করেছেন।

কিন্তু ক্রমশ আইপিএলে ম্যাচ কমে যাওয়া এবং সেখানে আর ডাক না পাওয়া প্রমাণ করে মুস্তাফিজুর রহমান তার প্রতিশ্রুতিশীল শুরুটা ধরে রাখতে পারেননি।

বাংলাদেশের ক্রিকেট পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা রিফাত এমিলের সাথে কথা বলছিলাম, তিনি মুস্তাফিজুর রহমানের পারফরম্যান্স নিয়ে বলেন,‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খুব দ্রুত শিখতে হয়। এখন সব জায়গায় ভিডিও বিশ্লেষণ হয়, সেখানে আপনার শক্তিমত্তা ও দুর্বলতা সহজেই বোঝা যায়। মুস্তাফিজ রানই দিচ্ছেন তা না, তিনি উইকেটও নিতে পারছেন না।’

মি. এমিল মনে করছেন, মুস্তাফিজুর রহমানের শেখার আগ্রহ কম।

রাজশাহীর মাহমুদা মুন্নি নিয়মিত ক্রিকেটের খোঁজ রাখেন, তিনি মনে করেন মুস্তাফিজের পারফরম্যান্সে সবচেয়ে বেশি হতাশ স্বয়ং মুস্তাফিজ।

‘একসময় মুস্তাফিজকে জসপ্রিত বুমরাহ’র সাথে তুলনা করা হতো, সেটা মুস্তাফিজ ধরে রাখতে পারেননি। কিন্তু বুমরাহ পেরেছেন।’ সূত্র : বিবিসি।

Share this post

scroll to top