রিফাত আহমেদ রাসেল, দুর্গাপুর : রাস্তায় কাঁদা সৃষ্টি করে দুর্ভোগ সৃষ্টিকারী ভারী পরিবহনের চলাচলে মারাত্বক হুমকির মুখে নেত্রকোনার দূর্গাপুর পৌরবাসী। সড়কে ভেজা বালু পরিবহনে নিষিধাজ্ঞা জারি থাকলেও প্রভাবশালীদের চাপে ব্যবস্থা নিতে পারছে না স্থানীয় প্রশাসন। এদিকে প্রভাবশালীরা বেপরোয়া ট্রাক দিয়ে ভেজা বালু পরিবহন করায় পৌর শহরের প্রায় সব রাস্তার অবস্থাই করুন। সরকারীভাবে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ২৪ ঘন্টাই সোমেশ্বরী নদী থেকে ভেজাবালু উত্তোলনের পর ভেজা বালু পরিবহন করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, শীতের এই শুকনা মৌসুমেও শহরের প্রতিটি সড়কে বর্ষা মৌসুমের মতোই জমে আছে পানি আর কাঁদা। সৃষ্টি হয়েছে কানাখন্দের। ফলে পৌর শহরের প্রায় সবসড়কেই কৃষি জমির মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এই সড়ক দিয়ে সাধারণ যানবাহন চলাচলতো দূরের কথা- পায়ে হেঁটে সাধারণ মানুষের চলাচলের কোনো অবস্থা নেই। পৌর শহরের তেরি বাজার ও আত্রাইখালী ঘাট থেকে পৌরশহরের রাস্তা দিয়ে লড়ি ও নিষিদ্ধ ১০ চাকার ট্রাক চলাচল করছে অহরহ। আর এসব গাড়ি থেকে প্রতিনিয়ত পানি ঝড়ায় রাস্তায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। কাঁদা ছড়িয়ে যাচ্ছে সমস্ত রাস্তায়। এতে করে ভালো রাস্তাগুলোও ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ার পথে। আর এতে চরম হুমকীর মুখে পড়ছেন জনগন।
অপর দিকে পৌর শহরের শিক্ষা নগর সাধুপাড়া এলাকার আদর্শবিদ্যাপিঠ দি চাইল্ড লার্নিং হোমস্, সুসঙ্গ আদর্শ বিদ্যানিকেতন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সুসঙ্গ সরকারী মহাবিদ্যালয়, দুর্গাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুর্গাপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ এর শিক্ষার্থীরা দিনের বেলায় বেপরোয়া ট্রাক, ট্রাক্টর ও লড়ি চলাচল এবং নদী থেকে ভেজাবালু পরিবহন বন্ধে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার রাস্তায় মিছিলসহ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে ভূক্তভোগীরা। এছাড়াও মানুষের চলাচল সহজ করতে পৌর শহরের ভিতর দিয়ে দিনের বেলায় লড়িসহ ভারী সকল যানবাহন বন্ধ ও ভিজা বালু পরিবহন বন্ধে স্থানীয় সংসদ সদস্য মানু মজুমদার জেলা প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ডিও লেটার দিলেও এখন পর্যন্ত যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন।
স্থানীয়রা জানান, পৌরশহরের উকিলপাড়া, কলেজ রোড, উপজেলা চত্বর, হাসপাতাল এলাকার রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৪ থেকে ৫ শত ট্রাক্টর চলাচল করায় রাস্তায় ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তা পার হওয়া তো দূরের কথা ঐ রাস্তা দিয়ে পথচারীদের চলাচল করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যাম লেগে থাকে ঐ রাস্তায়। এতে করে মারাত্ক হুমকিতে পড়ছে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা। রাস্তায় ভাঙ্গন ও কাঁদার সৃষ্টি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের জীবন ঝুঁকি নিয়ে স্কুল-কলেজে যাচ্ছেনা শিক্ষার্থীরা। বেলতলী এলাকার অনেক কাপড়ের দোকানী তাদের ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। হাসপাতাল এলাকায় ঐতিহ্যবাহী দি চাইল্ড প্রিপারেটরী স্কুলের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কমে গেছে। মাঝে মধ্যে অবৈধ লড়ি চলাচল বন্ধে উপজেলা প্রশাসন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করলেও তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন সচেতন মহল। প্রানের রাস্তা বাঁচাতে প্রয়োজনে বালু মহলের ইজারা বন্ধ করনসহ এ সমস্যা সমাধানে প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা চান স্থানীয় নাগরিক সমাজ, স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় অভিভাবকবৃন্দ।
খোঁজনিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট চক্র প্রভাবশালী মহলের যোগসাজসে অবৈধ লাইসেন্স বিহীন লড়িগাড়ীর মাধ্যমে অপ্রাপ্তবয়স্ক চালক দিয়ে বালু পরিবহন করাচ্ছে প্রতিনিয়ত। যারফলে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। গত বছর শুধু লড়িগাড়ী দুর্ঘটনায় দুর্গাপুরের ১১জন শিক্ষার্থী মারা গেছে, ট্রাক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১২ জন পথচারী।
এ নিয়ে পৌর মেয়র আলহাজ্ব মাওলানা আব্দুস সালাম ময়মনসিংহ লাইভকে বলেন, দুর্গাপুর পৌরসভাসহ আশপাশের ইজারাকৃত এলাকা থেকে ভেজাবালু পরিবহনে নিষেোজ্ঞা আছে। পৌরবাসীর চলাচলের সুবিধার্থে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত রাস্তায় লড়ি চলাচল বন্ধেরও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবুও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিছু গাড়ী চলাচল করছে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য মানু মজুমদার জানায়, সড়কে ভিজা বালু পরিবহন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ বন্ধ। তার পরও কিছু ট্রাক আইন অমান্য করে ভেজা বালু পরিবহন করছে । এদেরে বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।