এক সময় পাট ছিল বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরি ফসল। পাট রফতানি করে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা হতো। কিন্তু সঠিক দাম না পাওয়া, সিন্ডিকেটের হয়রানিতে পাট চাষে কৃষকের আগ্রহ হারানো, উৎপাদিত পাটের ব্যবহার ও বাজারজাতকরণের পরিবেশ না থাকায় হারিয়ে যায় ‘সোনালি আঁশ’খ্যাত এই পণ্য। তবে আওয়ামী লীগ সরকার আবার নজর দেওয়ায় বিভিন্ন এলাকার কৃষক নতুন করে পাট চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি এলাকার পাটচাষি লালচান মিয়া ও পার্শ্ববর্তী বাহাদুরপুরের মুকাইমিনুল ইসলাম বলেন, আগের তুলনায় এখন পাট চাষে লাভবান হচ্ছি। আগে সিন্ডিকেটের কারণে সরকার নির্ধারিত দাম না পাওয়া গেলেও এখন সঠিক দাম পাওয়া যাচ্ছে। এর ব্যাপকতা বাড়াতে অনেকেই বলছেন ধান চাষে যে লোকসান হয়েছে, তা এখন পাটই পুষিয়ে দেবে। তাই অনেকেই পাট চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। সরকার যদি কৃষকদের উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে পাট বীজ ন্যায্য মূল্যে ও সহজে সরবরাহ করত, তাহলে এর ব্যাপকতা বাড়ত।
ময়মনসিংহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের খামার বাড়ি উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আব্দুল মাজেদ বলেন, বিশ্বে পাট উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। আর আমাদের পাট খুবই উন্নতমানের। এছাড়া, এই সরকার প্রথমবার ক্ষমতায় আসার আগে প্রতিমণ পাট বিক্রি হতো ৭ থেকে ৮শ টাকা দরে। সেই পাট এখন মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে, ১৮শ থেকে ২ হাজার টাকা দরে। সে কারণেই পাট চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষক।
তিনি আরও বলেন, গত বছর এ জেলায় ৫ হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল। এই লক্ষ্যমাত্রা প্রায় শতভাগ অর্জিত হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মাঠ পর্যায় থেকে সহযোগিতা দিতে আমরা সর্বাত্মক কাজ করছি। বর্তমান সরকার যে কৃষিবান্ধব নীতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, তারই সুফল পাচ্ছেন কৃষকরা।
জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি বাংলাদেশের (নাসিব) কেন্দ্রীয় সভাপতি মির্জা নূরুল গণী শোভন (সিআইপি) পাটের সম্ভাবনা নিয়ে সরকারের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বলেন, বাংলার গৌরব সোনালি আঁশ আমাদের পাট। সময়ের বির্বতনে কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছিল এই শিল্প। জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি বাংলাদেশের উদ্যোগে দেশের প্রতিটি জেলায় নির্দিষ্ট জনশক্তিকে প্রশিক্ষিণ দিয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে। তবেই ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পকে আবার নতুনরূপে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। আমাদের পাট পণ্য সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার মতো উদ্যোক্তা আমাদের আছে। এসব উদ্যোক্তাদের পণ্যের মান ও বাজারজাতকরণসহ সামগ্রিক উন্নয়নে সরকারকে নজর দিতে হবে।
পাট শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে বর্তমান সরকার আরও সচেষ্ট হবে বলে প্রত্যাশা সবার। সূত্র: সারা বাংলা