ষাটের দশকের আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম ছাত্রনেতা, ষাটের অন্যতম কবি, স্বাধীনতা-উত্তর কাব্যান্দোলনের পথিকৃৎ, ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি এবং অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি মুশাররাফ করিম শনিবার ময়মনসিংহ জেলার সায়েম হাসপাতালে রাত ৯.৪০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাযিউন)।
মহান এ লেখক এর মৃত্যুতে ময়মনসিংহ বিভাগের সাধারণ মানুষ ও সাহিত্য প্রেমীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অনুশীলন সাহিত্য সংসদ ও পাঠাগার সহ সকল শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে কবির প্রতি শোক জানিয়েছেন।
তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ ডায়েবটিস সহ জটিল রোগে ভুগছিলেন।
রবিবার বাদ জোহর কবির নামাজে জানাযা চরপাড়া জামিয়া ইসলামিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়। তার আগে বেলা ১২ টা থেকে সাড়ে বারোটা পর্যন্ত তাঁর মরদেহ ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদ আঙিনায় রাখা হয় সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য।
এক নজরে কবি মুশাররাফ করিম:
জন্ম : ৯ জানুয়ারি ১৯৪৬, জন্মস্থান : ময়মনসিংহ, পৈত্রিক নিবাস : ঈশ্বরগঞ্জ, ময়মনসিংহ পিতা : এম.এ.করিম, মাতা : আমিনা খাতুন শিক্ষা : এম.এ. (বাংলা) প্রথম পর্ব পেশা : সাংবাদিকতা (দৈনিক দেশ ও দৈনিক দিনকাল) সাবেক পরিচালক, উপজাতীয় কালচারাল একাডেমী বিরিশিরি, নেত্রকোণা। প্রধানত কবি; প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা-২৬ শিশু-কিশোর উপন্যাস-১৫, উপন্যাস : ৩ গল্পগ্রন্থ : ১, সম্পাদনা : তিলোত্তমা, মহুয়া, সৌরভ উচ্চারণ, তুলট কাগজ, অন্বয় প্রভৃতি।
বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার (২০০৩) সহ বহু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন বরেণ্য এ কথা শিল্পী।
বিদেশ ভ্রমণ : জাপান, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর।
সহধর্মিণী : সখিনা আক্তার
কন্যা : নফিসা মাহজাবীন দোলা জামাতা : এনামুল কবীর নাতি : কারিব, নাতনী : নাবিহা। বাংলা কবিতার ঐতিহ্যানুগ চলমানতাকে পুঁজি করেও অভিনবত্ব দেখিয়েছেন কবি মুশাররাফ করিম। পাঠকের বোধের উপর ছেঁড়ে দেন তিনি সকল কবিতাকে।
আত্মজৈবনিক, সামূহিক জীবনের জটিল অন্ত:স্বরূপের উন্মোচন ঘটেছে তাঁর কবিতায়। ঐতিহ্য প্রিয় হয়েও নগর কেন্দ্রিক জীবনধারা তাঁকে আকর্ষণ করে।
হৃদয়ে অন্ধ তমসাচ্ছন্ন রহস্যগুহায় অবতরণ করে মনের নিগূঢ় মূলগুলিকে টেনে বের করে এনে কবি কবিতার নতুন বাতাবরণ তৈরি করেছেন।
সমসাময়িক জীবনসত্য উপলব্ধি ও সামাজিক দায়িত্ববোধের বিবিধ অভিজ্ঞতার অনুভব
মুশাররাফ করিমের কবিতা। পরিবর্তমান সমাজ ও জীবনের সঙ্গে সমান্তরালভাবে চলতে থাকা বিচিত্রতর প্রণোদনায় তাঁর কবিতা পরিপূর্ণ।
মুশাররাফ করিমে নৃতাত্ত্বিক আত্মকেন্দ্রিকতা প্রবল উচ্চমান্যতা নব অস্তিত্ববাদ প্রচারের প্রচেষ্টা প্রখর। তাঁর কবিতা জাতির সর্বলোকের আরাধনা।
মানব অস্তিত্বের অচরিতার্থতা ও শ্রেণী সংগ্রাম তাঁর কবিতার অনিবার্য অনুসঙ্গ ছিল।তাঁর কবিতায় লাঞ্ছিত, ক্লেদাক্ত, অপমানিত জীবন থেকে মুক্তির আকাংক্ষাও প্রাধান্য পায়।
অন্তর্লোক ও বহির্লোকের নিগূঢ় সম্মন্ধকে তিনি দেখিয়েছেন নির্দিষ্ট শব্দ বা বিন্দুর ভিতর গিয়ে।
মুশাররাফ করিম সময় এবং পূর্বজ শ্রোতধারার চেতনা বিদ্যুৎ পরিশোধনের সমীকরণ ঘটিয়েছেন তাঁর নব্যমাত্রিক সৃষ্টির স্বাতন্ত্র্যে।
মহান এ লেখক এর মৃত্যুতে ময়মনসিংহ বিভাগের সাধারণ মানুষ ও সাহিত্য প্রেমীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অনুশীলন সাহিত্য সংসদ ও পাঠাগার সহ সকল শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে কবির প্রতি শোক জানিয়েছেন।