ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে পৌষের কনকনে শীতের রাতে হাজেরা বেগম (৮০) নামে অভাগা মায়ের স্থান হলো গোয়ালঘরে।
স্থানীয় যুবক কাউসার খান একটি কম্বল দিতে গিয়ে গোয়ালঘরের মেঝেতে হাজেরা বেগমকে শুয়ে থাকতে দেখে প্রতিবাদ করায় হাজেরা বেগমের ছেলে আব্দুস সাত্তার ‘আমার মাকে যেখানে খুশি রাখব তাতে তোর কি’ বলে অপমান করে।
পরে এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য মুখলেছুর রহমান খোকা জিজ্ঞাসা করলে আব্দুস সাত্তার ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। ঘটনাটি ঘটে উপজেলার গফরগাঁও ইউনিয়নের উথুরী গ্রামে। খবর পেয়ে গফরগাঁও থানার এসআই নাজিম উদ্দিন হাজেরা বেগমের বড় ছেলে আব্দুস সাত্তার ও তার ছেলে উজ্জলকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন।
জানা যায়, উপজেলার গফরগাঁও ইউনিয়নের মৃত রেসমত আলী প্রায় ১৬ বছর পূর্বে মারা যাওয়ার সময় ১২ কাঠা জমি স্ত্রী হাজেরা বেগমকে লিখে দিয়ে যান। স্বামী মারা যাওয়ার পর চার ছেলে কিছুদিন হাজেরা বেগমকে ভরণ-পোষণ করেন। পরে গোপনে ছোট ছেলে সাইফুল ইসলাম হাজেরা বেগমের কাছ থেকে জমি লিখে নেয়।
এ খবর পেয়ে অন্য ছেলেরা হাজেরা বেগমের খোঁজখবর নেওয়া বন্ধ করে দেয়। এ অবস্থায় হাজেরা বেগম ছোট ছেলে সাইফুলের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। কিন্তু জমি লিখে নেওয়ার পর থেকে ছোট ছেলে সাইফুলও মায়ের প্রতি উদাসীন ও অবহেলা করতে থাকে। তিনবেলার মধ্যে একবেলা খাবার দেয়। কখনো হাজেরা বেগম ক্ষুধায় কাতরালেও খাবার না দিয়ে উল্টো বকা-ঝকা ও মারধর করত সাইফুল আর তার স্ত্রী। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে বিচার-সালিস হলেও ছেলেদের মনোভাবের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
সর্বশেষ হাজেরা বেগমের আশ্রয় হয় বড় ছেলে আব্দুস সাত্তারের বাড়িতে। কিন্তু নিষ্ঠুর ছেলে কনকনে শীতের মধ্যে মাকে বসতঘরে না রেখে গোয়ালঘরে গরুর সাথে ভেজা থকথকে মেঝেতে খড় বিছিয়ে থাকার ব্যবস্থা করে। এ অবস্থায় স্থানীয় যুবক কাউসার খান বৃদ্ধা হাজেরা বেগমকে একটি কম্বল দিতে গিয়ে প্রতিবাদ করলে হাজেরা বেগমের ছেলে আব্দুস সাত্তার উল্টো গরু চুরির অপবাদ দিয়ে অপমান করে তাড়িয়ে দেয়।
স্থানীয় যুবক কাউসার খান বলেন, অসহায় বৃদ্ধা হাজেরা বেগমকে একটি কম্বল দিতে গিয়ে তাকে গোয়ালঘরে দেখে ছেলে আব্দুস সাত্তারকে জিজ্ঞাসা করতেই সে আমার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ‘আমার মাকে যেখানে খুশি রাখব, তাতে তোর কি’ বলেই আমাকে উল্টো গরু চুরির অপবাদ দিয়ে অপমান করে।