ময়মনসিংহ লাইভ ডেস্ক : ক্যাপ্টেনসহ অন্য ২৩ জন যাত্রী মারা গেলেও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় রক্ষা পান। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাক সেনাদের কাছে বন্দি থেকে আট ঘন্টা মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েও জীবন ফিরে পেয়েছেন তিনি। ময়মনসিংহে জেলা প্রশাসক থাকাকালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একবার উদ্ধার করেছিলেন বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকদের রোষানল থেকে। বেসরকারি একটি গণমাধ্যমকে এমনি এক তথ্য জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
নাটকীয়ভাবে জীবন ফিরে পাওয়া এম এ মান্নান তাঁর পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে উঠেছে। সারা বিশ্বের পর্যালোচকেরা বলছেন, বাংলাদেশের এই এগিয়ে চলা বিস্ময়কর। পেটে ভাত ছিল না-এমন অবস্থা থেকে আজ খাদ্যে স্বয়ং সম্পুর্ণ বাংলাদেশ। আমরা আমাদের উৎপন্ন করা খাদ্য খেতে পারছি। আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি। সারা দেশে সন্ধ্যার আগেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সড়কপথে চলাচল সম্ভব হচ্ছে। যা আগে দেখতে পাওয়া যেত না। রেলপথ বিস্তৃত হচ্ছে। আকাশপথেও সেবা বাড়ছে।
বাংলাদেশের বাঙালীর উত্থান চমকপ্রদ উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়ে হয়েছে প্রায় ২০০০ ডলার। দেশের উন্নয়নযাত্রা চলছে। এই উন্নয়নের অনুপ্রেরণা ও সাহসের উৎস বঙ্গবন্ধু কণ্যা, প্রধাণমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু দাসজাতি চিহ্নিত করে সাধারণ মানুষকে জেগে উঠার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সাধারন মানুষ প্রায় খালি হাতে ভয়ংকর শাসক গোষ্ঠী, পাকিস্তানী সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। মহাসংগ্রামে স্বাধীনতা অর্জন হয়েছে চমকপ্রদভাবে। তারপর উন্নয়ন ঘটছে আরো চমকপ্রদভাবে।
৫ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত সোয়া আট শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার ধরে রাখতে পারলে বাংলাদেশ আরো সম্মানজনক পর্যায়ে যাবে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সময়মত স্বাধীনতা যুদ্ধের আহ্বান জানিয়েছিলেন বলে আত্মপরিচয় সংকট বা অস্তিত্ব সংকট থেকে আমরা রক্ষা পেয়েছি। প্রগতিশীলতার পথে, অসাম্প্রদায়িকতার পথে একুশ শতকের উপযোগি বাংলাদেশ এগোচ্ছে।
১৯৬৬ হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় অন্য সব যাত্রী ও ক্যাপ্টেন মারা গেলেও তিনি নিজে কীভাবে বেঁচে গেলেন তার বর্ননাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ১৯৬৬ সালে কেয়ার নামের সংস্থায় কাজ করতাম। তারা আমাকে ঢাকা থেকে কুষ্টিয়া পাঠাতে চাইলো হেলিকপ্টারে। ওই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টায় ঢাকা থেকে রওনা দেই। ২০ মিনিট পর ফরিদপুর শহরের আকাশে হেলিকপ্টারটি গেলে আমি দেখলাম-পৃথিবী ঘুরছে। মাটি ও আকাশ দেখছি। ওলট-পালট অবস্থা। কর্কশ শব্দ হচ্ছিল। আমি হেলিকপ্টারের পেছনে বাম দিকে বসা ছিলাম। হেলিকপ্টারে ক্যাপ্টেনসহ ২৪ জন ছিলাম। আওয়াজ বাড়ছিল। কয়েক সেকেন্ড পর ঠাস করে শব্দ হলো। হেলিকপ্টার পড়ে গেল মাটিতে। আমিও মাটিতে। মায়ের নাম স্মরণ করছিলাম, আল্লাহর নাম স্মরণ করছিলাম। আমি হেলিকপ্টারের ভেতর থেকে পা বের করে লাফ দিয়ে বের হই। তখন ব্যাথা অনুভব করছিলাম শরীরে। দুরে কাঁচি হাতে দুইজন কৃষক দাঁড়িয়েছিলেন। তাদের হাত দিয়ে ইশারা করি। তারা দৌড়ে এসে আমাকে পাঁজাকোলা করে ৩০০-৪০০ গজ দুরে নিয়ে যান। আমি বেঁচে গিয়েছিলাম। অন্য সবাই নিহত হন ওই দুর্ঘটনায়। আমি বেঁচে গেলাম, পেছনে তাকিয়ে দেখলাম হেলিকপ্টারটি পুড়ছে, ধোঁয়া উড়ছে।’