ডব্লিউএইচওর উপাত্তের ভিত্তিতে ২০১৬ সালে যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাতাসে ভাসমান মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কণা দ্রুত কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বিশ্বে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা শহর হলো রাজশাহী। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের যে ১০টি শহরে গত দুই বছরে বাতাসে ভাসমান ক্ষুদ্র ধূলিকণা কমেছে, এর মধ্যে রাজশাহীতে কমার হার সবচেয়ে বেশি। এর পরিমাণ ৬৭ শতাংশ।
এর আগে ২০১২ সালের ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে পরিবেশ পদক গ্রহণ করেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র খায়রুজ্জামান। একই বছর বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে জাতীয় পুরস্কার লাভ করে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। ২০০৯ সালেও বৃক্ষরোপণে জাতীয় পুরস্কার লাভ করে রাজশাহী সিটি করপোরেশন।
সাম্প্রতিক পরিবেশ বিষয়ক একাধিক জরিপে বাংলাদেশের যেসব শহরের বাতাসকে ক্ষতিকর ও ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়েছে সেখানে ময়মনসিংহের নামও রয়েছে। ময়মনসিংহ বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
এদিকে শহরের ময়লাকান্দার দূষিত পরিবেশের জন্য এখনও আন্ত:বিভাগের কয়েক কোটি মানুষসহ স্থানীয়রা প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সেই সাথে জনস্বাস্থ্যও হুমকির মুখে পড়ছে। ময়লাকান্দার দূষিত বাতাস থেকে রেহাই পাচ্ছেনা শহরবাসী। বিশেষ করে ময়লাকান্দার দূষিত বায়ু ময়মনসিংহ শহরসহ চরাঞ্চলের মানুষের জন্য এক ধরণের অভিশাপ। ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ থেকে নেত্রকোনা-জামালপুরের মানুষ যারা নিত্যদিন ময়মনসিংহ শহরমুখী হচ্ছেন তারাও রেহাই পাচ্ছেনা এ অসহায়ত্ব থেকে।
সূত্রে জানা যায়, ময়মনসিংহ শহরে ছয় লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করায় প্রতিদিন গড়ে ১৮০ মেট্টিক টন ময়লা-আবর্জনা তৈরি হয়। আর পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়েই শহরের সমস্ত ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয় শহরতলীর চর ঈশ্বরদিয়া ইউনিয়নের চর কালিবাড়িতে। ১৯৯৫ সালে বর্তমান নগর কর্তৃপক্ষ ময়লাকান্দার তিন একর জমি কেনেন বাসস্ট্যান্ড স্থানান্তরের উদ্দেশ্যে। যদিওবা অজ্ঞাত কারণে এখনই ময়লাকান্দায় বাসস্ট্যান্ড স্থানান্তরের কোন পরিকল্পনা নেই কর্তৃপক্ষের। আর এই ময়লাকান্দার ময়লা থেকে সৃষ্ট বায়ু দূষণে নাজেহাল জীবন যাপন করতে হচ্ছে স্থানীয়দের। বায়ু দূষণের কারণে ময়লাকান্দা এলাকার প্রায় ৬ হাজার মানুষ চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। মশা-মাছির উপদ্রুবের সাথে অসহনীয় দুর্গন্ধের কবল থেকে শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত কেউই রেহাই পাচ্ছেন না। পথচারীরা সাময়িকভাবে দমবন্ধ করে চলাচল করলেও সিটি কর্পোরেশনের দেয়া নিত্যদিনের উপহার ‘দুর্গন্ধ’কে সুগন্ধি হিসেবে মেনে নিতে হচ্ছে সবাইকে। যদিওবা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ এই ময়লাকান্দা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বলে জনগণকে আশ্বস্ত করেছেন। তবে কবে নাগাদ এই ময়লাকান্দা বদলে যাবে তা নিয়ে সন্দিহান শহরবাসী। আপাতত ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে হলেও দুর্গন্ধ থেকে কিছুটা রক্ষা দিতে পারে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন।
চিকিৎসকরাও বলছেন যে, বাতাসে ভারি ধাতু ও সূক্ষ্ম বস্তকণা বেড়ে গেলে ক্যান্সার, শ্বাসকষ্ট, স্নায়ুজনিত সমস্যা বেড়ে যায়, বুদ্ধিমত্তা কমে যায়। দেশের বায়ু দূষণের অবস্থা একদিকে দিন দিন খারাপ হচ্ছে, অন্যদিকে বায়ুদূষণের উৎস দিন দিন বাড়ছে। ধুলা আর যানবাহনের কালো ধোঁয়াতে বেশি বায়ুদূষণ হচ্ছে শহরের পাটগুদাম ব্রিজ মোড় এলাকায়। বায়ুদূষণ রোধে মূল দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের। যানবাহনের কালো ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণেও কার্যকর উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। সেই সাথে ময়মনসিংহ শহরসহ আশপাশের উপজেলাগুলোতে বাতাসে ধূলির সূক্ষ্ম বস্তকণা বেড়ে যাচ্ছে যা এই জড়িপ থেকে বুঝা যায়। দূষণ ঠেকাতে শহরের আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার জরুরি। সেই সাথে শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় ধূলাবালি নিবারণে কর্তৃপক্ষের স্থায়ী উদ্যোগ নেয়া জরুরী।