স্টাফ রিপোর্টার : ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান বিশিষ্ট সমাজসেবক ডাঃ আব্দুল মান্নান (৯৬) শনিবার (২৭ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১টায় শহরের নয়াপাড়া এলাকায় নিজ বাসায় ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। আজ রোববার বাদ আছর গৌরীপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রায় লাখো মানুষ অংশ গ্রহন করেন। পরে তাকে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়। মৃত্যুকালে তিনি ৩ ছেলে ও ৩ মেয়েসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। ডাঃ আব্দুল মান্নান দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে ভুগছিলেন।
এদিকে ডাঃ আব্দুল মান্নানের মৃত্যুতে এলাকায় সমগ্র উপজেলায় শোকের ছায়া বিরাজ করছে।
ডা, আব্দুল মান্নান একাধারে জনপ্রতিনিধি, বিশিষ্ট চিকিৎসক, শিক্ষানুরাগী, সমাজসেবক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তবে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়ার কারণে উপজেলা জুড়ে তিনি গরীবের ডাক্তার হিসিবে সকলের কাছে পরিচিতি লাভ করেন। গরীব দু:খী মানুষের পাশে থেকে চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে তিনি ১৯৫৯ সালে ময়মনসিংহ শহরের লিটন মেডিক্যাল স্কুল থেকে চিকিৎসা বিদ্যায় ৪বছর মেয়াদি (এলএমএফ) কোর্স সম্পন্ন করেন। ১৯৭৫ সালে রাজধানীর সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করে ১৯৭৬ সালে গৌরীপুরে স্ত্রী ফিরোজার ওরফে ‘মায়া’ নামে গৌরীপুর পৌর শহরে মধ্যবাজার এলাকায় একটি ক্লিনিক স্থাপন করেন।
ডাঃ আব্দুল মান্নান ১৯৩৬ সনে গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের বীরপুর গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম মরহুম শেখ আব্দুল করিম ও মাতা নেকজান বিবি। ১৯৫৯ সালে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ৫ মেয়ে ও ৩ ছেলের বাবা হন। ইতোমধ্যে তার ৫ মেয়ের মাঝে দু’মেয়ে মারা যান। একসময় তিনি ব্যাবসার সাথে জড়িত হয়ে পৌর শহরের বাহাদুরপুর এলাকায় স্ত্রী ফিরোজার নামে একটি ইটভাটা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরবর্তিতে এখানেই প্রতিষ্ঠা করেন স্ত্রী ফিরোজা নামে বাহাদুরপুর ফিরোজা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়াও তিনি গৌরীপুর সরকারি কলেজ, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠায় অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন।
ডা. আব্দুল মান্নান উপজেলাবাসীকে চিকিৎসা সেবা দেয়ায় পৌরসভার কমিশনার নির্বাচিত হন। জনপ্রিয়তার কারনে পৌরবাসী ১৯৭৭ সালে তাকে গৌরীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করেন। ১৯৭৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৮২ সালে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গৌরীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যানের হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তিতে তিনি রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। তিনি ১৯৮৬ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে তুমুল প্রতিদ্বন্দিতা করে সাবেক স্বাস্থ্য উপ-মন্ত্রী মরহুম নুরুল আমিন খান পাঠানের নিকট হেরে যান। এরপর বাকশালে যোগদান করেন। ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৩ আসনে বাকশালের কাস্তে মার্কা নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহন করেছিলেন। এসময় সাংসদ নির্বাচিত হন আওয়ামীলীগের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম নজরুল ইসলাম সরকার। পরবর্তিতে তিনি বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে গৌরীপুর পৌর বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ ইং সনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন না পেয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন এবং জাতীয় পার্টির মনোনীত এমপি প্রার্থী হিসেবে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন।