মাদকের মূল ব্যবসায় দেখি অন্য লোক : বেনজীর আহমেদ

র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ বলেছেন, মাদকবিরোধী অভিযানে নেমে আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। মাদকের একটা ভিন্ন জগৎ আবিষ্কার করলাম। গডফাদার নামে যে দু’এক জন নিয়ে মিডিয়াতে মাতামাতি চলে, কিন্তু মূল ব্যবসায় দেখি অন্য লোক। অনেক আননোন লোকজন এ ব্যবসা করছে। অভিনব সব কায়দায় তারা ইয়াবা পাচার করছে।

শনিবার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (এফডিসি) মিলনায়তনে ‘মাদক নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক সদিচ্ছা’ শীর্ষক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি ও আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে এ ছায়া সংসদের আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। ছায়া সংসদে বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি সরকারি দল ও আহসান উল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয় বেসরকারি দল হিসেবে অংশ নেয়।

মে মাস থেকে মাদকবিরোধী অভিযানে ১৭ হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানিয়ে বেনজীর আহমেদ বলেন, প্রথমে আমরা খুচরা বিক্রেতার কাছে গেছি, এরপর ডিলারদের কাছে। পর্যায়ক্রমে ক্যারিয়ার, যারা ইনভেস্ট করছে তাদের কাছে গেছি। এখন যারা আমদানি করছে তাদের দিকে যাচ্ছি। কাট অব পদ্ধতিতে মাদক ব্যবসা চলে।

বেনজীর আহমেদ বলেন, অপরাধীরা অপরাধ করে মানে তারা শক্তিশালী নয়। শিক্ষক, পুলিশ থেকে শুরু করে এমন কোনো পেশা নেই, যে পেশার লোক মাদকের সঙ্গে জড়িত নেই। এ সমাজ থেকেই তো বিভিন্ন পেশাতে রিক্রুট করা হয়, তাদেরকে তো ফ্যাক্টরিতে তৈরি করা হয় না। তারা কেন মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে গেল? সেজন্য প্রথমে আমাদের নিজেদের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে।

মাদক মামলা নিষ্পত্তি করার জন্য প্রতি জেলায় আলাদা বিশেষ আদালত স্থাপনের প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করে বেনজীর আহমেদ বলেন, এখন যেসব মামলা হচ্ছে দেখা যাবে এই গতিতে চললে বিচার শেষ হতে ২৮ সাল পর্যন্ত সময় লেগে যাবে। অনেক বিচারক অবসরে রয়েছেন। একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ এবং একজন ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে একটি আদালত তৈরি করা হোক। বিচারে আসামি খালাস পাক, কিন্তু তবুও বিচারটা হোক।

ছোট মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, বড় ব্যবসায়ীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে-এমন অভিযোগের বিষয়ে র‌্যাবের মহাপরিচালক বলেন, আমার জানামতে কোনো ছোট ব্যাবসায়ীকে ধরিনি। একজনের সঙ্গে ১০ হাজার পিস ইয়াবা পাওয়া গেছে, প্রতি পিস ইয়াবার দাম যদি ৩০০ টাকা হয় তাহলে ৩০ লাখ টাকার ইয়াবা। এটা কোনো ফকিন্নির কাছে থাকে না।

মাদকবিরোধী অভিযানে নেমে তদবিরের কোনো ফোন পাননি জানিয়ে তিনি বলেন, তদবিরের জন্য ৫ মাসে কোনো ফোন পাইনি। যেখানে জনগণের সহযোগিতা চেয়েছি সেখানেই পেয়েছি। রাজনৈতিক সদিচ্ছার পাশাপাশি জনগণের সদিচ্ছা থাকলে এ যুদ্ধে অবশ্যই জয়ী হব।

ছায়া সংসদে সরকারি দল মাদক নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক সদিচ্ছাই যথেষ্ট বলে মত দেয় এবং এ সংক্রান্ত একটি বিল সংসদে উত্থাপন করেন। তবে বিরোধী দল এর বিরোধিতা করে শুধু রাজনৈতিক সদিচ্ছাতেই মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বলে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন। দুই দলের যুক্তি উত্থাপন শেষে বিচারকরা সরকারি দল অর্থাৎ বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজিকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top