ময়মনসিংহ শহরের অপ্রশস্ত সড়কগুলোতে তীব্র যানজট

দেশের ১২তম সিটি কর্পোরেশন ময়মনসিংহ মহানগরীর অভ্যন্তরে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ)-এর সড়কগুলো অপ্রশস্ত হওয়ার কারণে দিনরাত তীব্র যানজট লেগেই থাকে। যানজটে নাকাল নগরবাসীর কাছে সবচেয়ে দুর্ভোগের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নগরীর ভিতর দিয়ে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের সাথে সংযোগ রক্ষাকারী ওইসব সড়কগুলো এখনো অপ্রশস্ত রয়ে গেছে। অথচ নগরীর বাইরের সড়কগুলো ইতিমধ্যেই চারলেনে প্রশস্ত করা হয়ে গেছে।

আগামী প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য নগরী উপহার দিতে জনস্বার্থে অবিলম্বে সওজ এর অধীন সড়কগুলো কমপক্ষে চাললেন করে প্রশস্তকরণ করা একান্ত জরুরি। ইদানিংকালে নগরীর সওজ এর সড়কগুলো দিয়ে চলাচল অনেক কষ্টসাধ্য, আগামী দিনগুলোতে নগরীতে যান চলাচল অচল হয়ে পড়বে বলে আশংকা করছেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ।

এদিকে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু নগরীর তীব্র জনজট ও নগরবাসীর দুর্ভোগ নিরসনকল্পে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের সাথে সংযোগ রক্ষাকারী ওইসব সড়কগুলোকে প্রশস্তকরণের জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী বরাবরে একটি ডিও লেটার দিয়েছেন।

বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং সচিব মো. নজরুল ইসলাম সওজ এর সড়কগুলোকে অবিলম্বে প্রশস্তকরণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মেয়র ইকরামুল হক টিটু।

মেয়র ইকরামুল হক টিটু আরো জানান, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, রংপুরসহ বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশনে বড় বড় বিল্ডিং ভেঙে বিভিন্ন সড়ক প্রশস্ত করা হয়েছে। এ শহরটিতেও সড়ক বিভাগের রাস্তাগুলো প্রশস্ত না করলে আগামী দিনগুলোতে এ শহরটি দিয়ে যান চলাচল করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে। তাই আগামী প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য শহর উপহার দিতে জনস্বার্থে সওজ-এর রাস্তাগুলো চারলেন করে নির্মাণ এবং নগরীর ভিতর থেকে রেললাইন স্থানান্তর করা এখন সময়ের উপযুক্ত দাবী।

রাস্তা প্রশস্তকরণসহ সব ধরনের উন্নয়নমূলক কাজে নগরবাসীর আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেছেন মেয়র টিটু। মেয়র টিটু জানান, ময়মনসিংহ নগরীর ভিতরে সড়ক বিভাগের ৪টি সড়ক হলো- ঢাকা-নেত্রকোনা সড়কের চরপাড়া হতে পাটগুদাম ব্রিজ পর্যন্ত, নেত্রকোনা-টাঙ্গাইল সড়কের ব্রিজ মোড় হতে স্টেশন রোড-গাঙ্গিনারপাড় নতুনবাজার- ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ রহমতপুর বাইপাস মোড় পর্যন্ত, ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়ক চরপাড়া মোড় হতে নতুন বাজার মোড় পর্যন্ত, ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়ক ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড হতে গাঙ্গিনারপাড় মোড় পর্যন্ত। এছাড়াও ব্রিজ মোড় হতে কালিবাড়ী রোড-কাচারি-টাউন হলো মোড় পর্যন্ত সড়ক বিভাগের রাস্তাসমূহ।

ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন জানান, ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের আয়তন ৯০.১৭৩ বর্গ কিলোমিটার। ৩৩টি ওয়ার্ডে মোট ২৯ হাজার ৭২৪টি হোল্ডিং এ প্রায় সোয়া ৮ লাখ লোকের বসবাস। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের জাতীয় মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কের প্রায় ৫০ কি.মি সড়ক রয়েছে। এছাড়া শহরে মোট সড়কের পরিমাণ এক হাজার ৪৬০ কি.মি. তন্মধ্যে পাকা রাস্তা ৪৮৬.৭৮ কি.মি, কাঁচা সড়ক ৯৪৫.৩৬ কি.মি, এইচবিবি ৫.৪১ কি.মি, আরসিসি ২২.৪৫ কি.মি.। বর্তমানে ময়মনসিংহ নগরীতে ১২ হাজার রিকশা ও ৭ হাজার অটোবাইক, কয়েকশ’ কার, মাইক্রোবাস চলাচল করছে।

এছাড়াও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ বাংলাদেশ (সিবিএমসিবি), নটরডেম কলেজ, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, আনন্দমোহন কলেজ, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বড় বড় শতাধিক বাস শহরের অভ্যন্তরে অপ্রশস্ত রাস্তা দিয়ে চলাচল করছে। এছাড়া শহরের মাঝখানে সিকেঘোষ রোডে পুরাতন ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড হতে প্রতিদিন ৫০টি বাস ত্রিশাল, বালিপাড়া ও ভালুকা রুটে চলাচল করছে। এছাড়াও আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির একাধিক সভায় দিনের বেলায় শহরের অভ্যন্তরে ট্রাক প্রবেশ না করার সিদ্ধান্ত থাকলেও তা রহস্যজনক কারণে কার্যকর হচ্ছেনা।

শহরের ভিতরে অধিক পরিমাণে বাস-ট্রাক চলাচলের কারণে যানজট আরো তীব্র হচ্ছে। যেস এগুলো দেখার কেউ নেই। ময়মনসিংহ রেলওয়ে জংশন স্টেশন সুপার মো. জহুরুল ইসলাম ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের ভিতরে ৯টি সড়কে রেলগেট ব্যারিয়ার ও গেটম্যান আছে। এছাড়াও আরো প্রায় ১০টি সড়কে কোনোটিতে ব্যারিয়ার থাকলেও গেটম্যান নেই এবং আবার অনেক রেলগেটে ব্যারিয়ার ও গেটম্যান কোনাটিই নেই। এসব রেলওয়ে লেভেল ক্রসিং দিয়ে প্রতিদিন ২৯ জোড়া তথা ৫৮টি ট্রেন চলাচল করে।

কম্পিউটারাইজড ইন্টারলকিং সিস্টেমে প্রতিটি ট্রেন যাবার সময় কমপক্ষে ৩টি লেভেল ক্রসিং-এর ব্যারিয়ার বন্ধ না করলে ট্রেনের লাইন ক্লিয়ার পাওয়া যায় না।

সঙ্গত কারণে একটু আগেই লেভেল ক্রসিং এর ব্যারিয়ার দিয়ে রাস্তা বন্ধ করা হয়। এসব লেভেল ক্রসিংএ ৮ থেকে ১০ মিনিট পর্যন্ত সড়কের যান চলাচর বন্ধ রাখা হয়। বাস্তবে ১০ থেকে ২৫ মিনিট পর্যন্ত লেভেল ক্রসিং-এর ব্যারিয়ারগুলো বন্ধ থাকতে দেখা যায়। এতে ৫৮টি ট্রেনে গড়ে ১৫ মিনিট করে হলেও শহরে সর্বমোট প্রায় ১৪ ঘণ্টা সময় বিভিন্ন লেভেল ক্রসিংএ সড়ক পথের যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়।

এতে শহরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ময়মনসিংহ বিভাগ উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি বর্ষিয়ান প্রবীণ রাজণীতিবিদ অ্যাডভোকেট মো. আনিসুর রহমান খান জানান, ময়মনসিংহ শহরে বিগত ৫০ বছর পূর্বে যে পরিমাণ সড়ক ছিলো আজো সেই রকমই রয়ে গেছে। মানুষ বেড়েছে বহুগুণ কিন্তু সড়কের প্রশস্ততা বাড়ানো হয়নি। ফলে শহরটিতে এখনই চলাচলের অনেকটা অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তাই আগামী প্রজন্মে জন্য একটি বাসযোগ্য নগরী গড়ে তুলতে সড়ক বিভাগের রাস্তাগুলো জনস্বার্থেই চারলেন করে নির্মাণ করা এখন সর্বস্তরের মানুষের দাবি। সূত্র: মানব যমীন

Share this post

scroll to top