ময়মনসিংহ লাইভ ডেস্ক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে একের পর এক গুরুতর অভিযোগ উঠছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হল দখল, সিনিয়র নেতাদের মারধোর, সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের উপর হামলা, সাংবাদিকদের ওপর হামলার মতো অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরিপুর পৌর শহরের সরকার পাড়া এলাকায়। তার বাবার নাম সুকুমার । সনজিতের বাবা একসময় পৌর শহরের কালিখলা সোনালী ব্যাংক (সাবেক ঠিকানা) এর পাশেই চা বিক্রি করতেন। সনজিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার পর থেকেই এলাকা ছাড়েন তার পরিবার।
শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস দায়িত্ব নেয়ার এক মাসের মাথায় তার নেতৃত্বে ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতিকে বেধড়ক মারধর করেন তিনি। সেই ঘটনায় তদন্ত কমিটি হলেও তার তদন্তের কোনো অগ্রগতি গত এক বছরে হয়নি। বিষয়টি খোদ আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডকে জানানো হলে উল্টো ছাত্রলীগের মধ্যে সনজিতকে নিয়ে অপপ্রচার বন্ধের নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি তখন বলেছিলেন, এর আগেও ছাত্রলীগে নিজেদের মধ্যে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে এত কথা বলার কিছু নেই। আমি সনজিতকে ডেকে বলে দিয়েছি, এরপর যেন এমনটা আর না হয়। তারপরও যারা সনজিতের বিরুদ্ধে যারা কথা বলছে, তারা ছাত্রলীগের মধ্যেই বিভেদ সৃষ্টি করতে চায়। তাদেরকে এসব বন্ধ করতেই হবে। তা না হলে যারা এসব নোংরামি করছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান ওবায়দুল কাদের। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়াকে কেন্দ্র করে মুকাভিনেতা মীর লোকমানকেও মারধর করেন সনজিত চন্দ্র দাস।
গত ১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) বনাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (ডুজা) প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচে ডাকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুরকে ধাক্কা দেন এবং পরে ফেসবুকে তাকে ‘ডলা’ দিয়ে মারার হুমকি দেন। নিজেকে ‘আজরাইল’ বলে দাবি করেন সনজিত। নুরকে উদ্দেশ্য করে দেওয়া এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তখন সনজিত লেখেন, ‘আমাকে কি ভুলে গেছোস, ওষুধ (ডলা দিলেই বুঝবি)। ‘বানরকে মাথায় নিয়ে নাচলে ওটা নাকি মাথায় মুতে দেয়, হালার ভিপির অবস্থাও সেইম। আমাকে কি ভুলে গেছোস, ওষুধ (ডলা দিলেই বুঝবি) কিন্তু ভিপি চিনে না হালা ছোটলোক। আবার যদি ধরি তাহলে জনপ্রতিনিধির মানেটা বুঝায়ে দিমু।’ সনজিত চন্দ্র দাস পরে অবশ্য স্ট্যটাসটি তুলে নেন।
গত জুলায়ের মাঝামাঝি সময়ে ঢাবি শিক্ষার্থীদের সাত কলেজ বাতিলের দাবিতে মিছিলরত এক শিক্ষার্থীকে চড়-থাপ্পড় দেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ব্যাপক সমালোচনাও হয়েছে। এছাড়া বিতর্ক থাকায় গেল ডাকসু নির্বাচনেও মনোনয়ন পাননি তিনি।
চলতি বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাকিম চত্বরে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা হয়। এতে কমপক্ষে ছাত্রদলের ৩০ নেতা-কর্মী আহত হন। তখন ঘটনাস্থলে থাকা এক সাংবাদিককে মারধর করে তাঁর মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
গত আগস্টে প্রটোকল দেয়াকে কেন্দ্র করে সনজিত চন্দ্র দাস ও তার অনুসারীদের দ্বারা লাঞ্চিত হন সংগঠনটির তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। ওই সময়ে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে উভয় গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। তবে এসব কোনো ঘটনারই সুষ্ঠু সমাধান হয়নি। বহাল তবিয়তেই থেকে গেছেন তিনি।
চলতি মাসে নিজের ও সহযোগীদের ওপর হওয়া হামলার ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনসহ ৩৭ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৪০-৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক। অপরদিকে ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরসহ তার সহযোগীদের ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে হত্যাচেষ্টার আরেকটি মামলা করেছে। গত সোমবার রাতে আটজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত পরিচয় আরও ৩৫ জনের বিরুদ্ধে এ মামলা হয়।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর এজেন্ট বলে দাবি করেছেন ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর। সোমবার সকালে নিজের ফেসবুক পেজে এ দাবি করেন তিনি। এনিয়ে নতুন করে সারাদেশে বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে ছাত্রলীগ। দেশ-বিদেশে আয়ামীলীগ ও সনজিতকে নিয়ে চলছে তুমুল সমালোচনা। শীঘ্রই সনজিতকে বহিস্কার করে আইনের আওতায় আনতে সহযোগীতা করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ এমনটাই প্রত্যাশা করছে দেশবাসী।
শুধু তাই নয়, ক্ষমতা অপব্যবহার করে সনজিত চন্দ্র দাসকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট প্রতিনিধি চূড়ান্ত করা হয়। নিজেরে ক্ষমতার অপব্যবহার শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রকাশ করেননি। তিনি ছাত্রলীগের সিনিয়র নেতাদেরও বিভিন্ন সময় মারধোর করেছেন ও হুমকি দিয়েছেন বলে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।
এছাড়াও তিনি একটি ‘ধর্মীয় গোঁড়াপন্থি’ সংগঠন ‘ইসকন’ এর অন্যতম একজন নেতা বলে জানা গেছে। যে সংগঠনটি ‘বিধর্মী’ মতবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অনেকে মনে করছেন। আর এ বিষয় নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।