আল্লাহ মহান। কুরআন মজীদের উল্লেখযোগ্য অংশজুড়ে আছে আল্লাহর নিয়ামতের বর্ণনা। এই নিয়ামত তাঁর পরিচয় প্রকাশ করে। তিনি যে রাববুল আলামীন, তিনি যে বিশ্ব জগতের সৃষ্টিকর্তা ও পালকর্তা-এটা বোঝা যায় তাঁর নিয়ামতরাজির মাধ্যমে। বিভিন্ন সূরায় বিভিন্নভাবে আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে সচেতন করেছেন তাঁর দান ও নেয়ামত সম্পর্কে।
কিছুদিন আগে প্রকৃতিতে শুরু হয়েছে শীতের আবহ। শীতের এই ঋতুতে মহান আল্লাহর অনন্য নিয়ামত নতুন শাকসবজি আর ফলমূলে ভরে যায় গ্রামের মাঠ। মেঠোপথ ধরে চলতে গিয়ে চোখ জুড়িয়ে যায় সবুজের সেই সমারোহ দেখে।
শীতের আরেকটি অন্যতম নিয়ামত হলো খেজুর রস। শীতকালের সঙ্গে খেজুর রস ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যেন একে অন্যের পরম বন্ধু। কনকনে শীতের সকালে এক গ্লাস ঠাণ্ডা রস শরীরে এনে দেয় সজীবতা। গ্রামে শীতকালের সকালটা খেজুর রস ছাড়া যেন জমেই না। স্বাদে আর গন্ধে এককথায় অমৃত। পাখিরাও সে স্বাদ উপভোগ করা থেকে বাদ যায় না। মাটির হাঁড়িতে সরু ঠোঁট লাগিয়ে চুকচুক করে পান করে সুমিষ্ট রস। পবিত্র কোরআনে ২৬ বার খেজুরের কথা বর্ণিত হয়েছে। আবার এই পবিত্র কোরআন প্রথম লেখা হয়েছিল খেজুরের পাতায়
গ্রামের বউ-ঝিরা আতপ চাল গুঁড়া করে খেজুর রস দিয়ে তৈরি করেন নানা স্বাদের পিঠা। সে পিঠা খেয়ে মনটা তৃপ্ত হয়ে যায়। নিমিষেই মুখ থেকে বেরিয়ে আসে শুকরিয়া ধ্বনি ‘আলহামদুলিল্লাহ’।
গ্রামাঞ্চলে এ সময় সন্ধ্যা নামতেই চাল কোটার শব্দে মুখরিত হয় চারদিক। রাতভর চলে পিঠা তৈরির কাজ। অনেকে পিঠা তৈরির সময় গীত গেয়ে রাত পার করে। পিঠার অন্যতম উপাদান চালের গুঁড়া হলেও এর সঙ্গে লাগে গুড়, চিনি, নারকেল, ক্ষীরসহ নানা উপকরণ। সকালবেলা বাড়িতে বাড়িতে খেজুরের রসে ভেজানো পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে। এ সময় গ্রামে বেড়াতে আসেন শহুরে নাইয়র। জামাই-ঝি, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশী সবাই মিলে পিঠা খাওয়ার আসরটা জমজমাট হয়ে ওঠে। হাসি-আনন্দে প্রাণবন্ত হয় চারপাশের পরিবেশ।
শীতের সময়টা কিন্তু ইবাদতের জন্যও অনেক বড় নিয়ামতের। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘শীতকাল মুমিনের জন্য ইবাদতের বসন্তকাল।’ আমের ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘শীতল গনিমত হচ্ছে শীতকালে রোজা রাখা।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৭৯৫) MTnews