ময়মনসিংহে শীতের পোশাক কিনতে উপচে পড়া ভিড় মানুষের

ময়মনসিংহসহ সারা দেশে হঠাৎ করেই শীত জেঁকে বসেছে। কুয়াশার সাথে ঠাণ্ডা বাতাসের কারণে সর্বত্র জবুথবু অবস্থা। শীতের হাত থেকে বাঁচতে তাই গরম পোশাক কিনতে মানুষ ছুটছেন মার্কেটে। ফুটপাথ থেকে সব পোশাক মার্কেটেই এখন ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। এ সুযোগে দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা।

গতকাল ছিল ৪ পৌষ। প্রকৃতিতে শীতকাল শুরু হয়েছে। তবে গ্রামে আরো আগে থেকেই শীত পড়তে শুরু করেছে। কিন্তু শহরে শীত এসেও যেন আসছিল না। হালকা শীতের পোশাক পরেই দিন পার করছিল মানুষ। কিন্তু গত মঙ্গলবার রাত থেকে হঠাৎ করেই ময়মনসিংহসহ সারা দেশে শীতের তীব্রতা বেড়ে যায়। গতকাল বৃহস্পতিবার শীতের এ মাত্রা আরো বেড়ে যায়। শৈত্যপ্রবাহ বইতে থাকে। এভাবে হঠাৎ করে শীত পড়ায় প্রস্তুতহীন মানুষ ছুটতে থাকে দোকানে। গরম কাপড় কিনতে মার্কেটগুলোতে ভিড় লেগে যায়। ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয় বিক্রেতাদের। এভাবে বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় খুশি দোকান মালিকরা।

গতকাল ময়মনসিংহের বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, কম্বল, জ্যাকেট, স্যোয়েটার, মাফলার, কার্ডিগান, শাল চাদর, হাতমোজা ও কানটুপিসহ বিভিন্ন ধরনের গরম কাপড় বিক্রি কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। বিশেষ করে মহিলারা তাদের বাচ্চাদের জন্য গরম পোশাক কিনতে ছুটছেন দোকানে। মার্কেটে আসা আসমা খাতুন নামে এক গৃহবধূ জানান, তার ছোট দুই ছেলেমেয়ের জন্য পোশাক কিনতে এসেছেন। কয়েক দোকান ঘুরেও পছন্দমতো পোশাক কিনতে পারেননি তিনি। আসমা খাতুন বলেন, শীত না পড়ায় এ বছর নতুন পোশাক কেনা হয়নি। বাসায় গত বছরের পোশাক পরেই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করে শৈত্যপ্রবাহ হওয়ায় শিশুদের জন্য নতুন পোশাক কিনতে এসেছি। কিন্তু বিক্রেতারা দাম বাড়িয়ে বলছেন। কমাতেও চাচ্ছেন না। এ জন্য কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখছি। এখনো কিনতে পারিনি। তবে না কিনে ফেরার উপায় নেই।

 আরিফ হোসেন নামে অভিভাবক তার ১৩ বছরের ছেলেসন্তানের জন্য জ্যাকেট কিনতে এসেছেন। দোকানদার দেড় হাজার টাকা দাম চাইলে তিনি এক হাজার টাকা দাম বলেন। এ সময় দোকানি এক দাম হলে তার দোকান থেকে নেয়ার অনুরোধ জানান। কিন্তু দামে না পোষায় তিনি কিনতে পারেননি।
রত্না বেগম নামে এক গৃহবধূ বলেন, শীত পড়েছে তাই মার্কেটে আসছি। শিশুদের জন্য গরম পোশাক ও নিজের জন্য একটি শাল কিনলাম। দাম একটু বেশি। তারপরও কিনতে হলো।

শহরের গাঙিনাপাড় সংলগ্ন মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ করা যায়। খুচরা ও পাইকারি দুই ধরনের ক্রেতাই এখানে রয়েছেন। আবার অনেকে এসেছেন দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিতরণের জন্য কম্বল কিনতে।
মার্কেটের পাশাপাশি ফুটপাথেও ক্রেতাদের ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে। নতুন-পুরাতন সব ধরনের পোশাকই পাওয়া যাচ্ছে ফুটপাথের দোকানে। হতদরিদ্র, রিকশা চালকসহ মধ্যবিত্তরাও ফুটপাথ থেকে পোশাক কিনছেন।

বিভিন্ন ধরনের গরম কাপড় বিক্রি কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ায় দোকানিরা বেশ খুশি। মার্কেটের আসলাম হোসেন নামে এক দোকান মালিক বলেন, গত কয়েক দিন ধরে হালকা শীত পড়েছে। এতে কিছু ক্রেতা বাড়লেও কাক্সিক্ষত মানের ছিল না। কিন্তু শীত বেড়ে যাওয়ায় হঠাৎ করেই ক্রেতা বেড়ে গেছে। এতে লাভও ভালো হচ্ছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহসহ সারা দেশে সকালটা ছিল কুয়াশার চাদরে মোড়ানো। সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। আর রাত থেকেই বইতে থাকে কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস। তাপমাত্রা কমেছে তিন থেকে সাত ডিগ্রি পর্যন্ত। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আরো ছয় জেলার তাপমাত্রা সিঙ্গেল ডিজিটে নেমে এসেছে। বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। আবহাওয়া অধিদফতর পূর্বাভাস দিয়েছে, দেশের কোথাও কোথাও আগামী দুই দিনে তাপমাত্রা নেমে যেতে পারে ৬ থেকে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

Share this post

scroll to top