এবার রাজাকারের তালিকায় এমপি ফজলে করিমের বাবার নাম

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা এ কে এম ফজলুল কবির চৌধুরীর নাম এসেছে। নাম রয়েছে চট্টগ্রামের আরেক প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বাবা মাহমুদুন নবী চৌধুরীরও।

এ কে এম ফজলুল কবির চৌধুরী সাবেক পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধী দলের নেতা এবং পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক আইন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়া তিনি চট্টগ্রাম পোর্ট-ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট, মেরিন অ্যান্ড মার্কেন্টাইল একাডেমির গভর্নর ও চট্টগ্রাম ডিস্ট্রিক কাউন্সিলের কাউন্সিলর ছিলেন।

রোববার (১৫ ডিসেম্বর) স্বাধীনতাবিরোধীদের (রাজাকার) নাম প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত রাজাকারদের প্রথম তালিকায় ঠাঁয় হয়েছে ১০ হাজার ৭৮৯ জন স্বাধীনতাবিরোধীর নাম। তালিকায় মোট ৬৫৯টি ধাপে স্বাধীনতাবিরোধীর তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।

রাজাকারের তালিকায় চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা এ কে এম ফজলুল কবির চৌধুরীর নামপ্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় ২০৩, ৫৯৫ ও ৬০৭ নম্বর ক্রমিকে এ কে এম ফজলুল কবির চৌধুরীর নাম রয়েছে তিন দফায়। অন্যদিকে ১৯৯ ক্রমিক নম্বরে আছে তার বড় ভাই এ কে এম ফজলুল কাদের চৌধুরীর নাম। ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর যুদ্ধাপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী ট্রাইব্যুনালের রায়ে ফাঁসি হয়েছে।

অপরদিকে, রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামসের সরকারঘোষিত তালিকায় নাম রয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর উত্তর কাট্টলীর বাসিন্দা মাহমুদুন নবী চৌধুরীর নাম। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চট্টগ্রাম জেলা শান্তি কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন মাহমুদুন নবী চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় ২০০ ও ২০৪ নম্বর ক্রমিকে তার নাম রয়েছে।

মাহমুদুন নবী চৌধুরী ১৯৫৪ সালের পূর্ব পাকিস্তানের আইন পরিষদ নির্বাচনে ডবলমুরিং-সীতাকুণ্ড আসন থেকে জয়লাভ করেন। যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন করলে তিনি প্রথমে গণযোগাযোগ মন্ত্রী ও পরে ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রিত্ব লাভ করেন।

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি পিডিপির প্রার্থী হিসেবে এমএনএ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। ১৯৯৫ সালের ৬ আগস্ট চট্টগ্রামে তার মৃত্যু হয়।

মাহমুদুন নবী চৌধুরীর বাবার নাম খাদেম আলী চৌধুরী এবং মায়ের নাম আলফুন নেছা। তিনি বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বাবা।

২০১৩ সালের ৪ জুন বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম জেরায় বলেছিলেন, একাত্তরে চট্টগ্রামে শান্তি কমিটির দুটি শাখা ছিল। এর একটির প্রধান ছিলেন এই মাহমুদুন নবী চৌধুরী।

এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রামে কর্মরত অন্তত ২২৩ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম শনাক্ত করা গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রাজাকার কর্মরত ছিলেন তৎকালীন পাকিস্তান রেলওয়েতে।

রাজাকারের তালিকা প্রসঙ্গে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘তারা নতুন কোনো তালিকা তৈরি করেননি। বরং যারা একাত্তরে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বা স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং যেসব পুরোনো নথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত ছিল সেটুকু প্রকাশ করা হয়েছে।’

এর মধ্যে আলাদা করে চট্টগ্রামের রাজাকারের কোনো তালিকা নেই। তবে তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, শীর্ষ ২৭ জনসহ চট্টগ্রামের অনেক স্বাধীনতাবিরোধীর নাম রয়েছে এই তালিকায়। এর মধ্যে ফজলুল কাদের চৌধুরী, ফজলুল কবির চৌধুরী, মাহামুদুন্নবী চৌধুরীসহ অনেক শীর্ষ রাজাকারের নাম আছে।

Share this post

scroll to top