বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া একটায় ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি ফজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলের নেতৃত্বে মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
ছাত্রদলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদল নেতা কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার, ছাত্রদল নেতা জাকিরুল ইসলাম জাকির, হাফিজুর রহমান, লিংকন, পার্থ, আমিনুর রহমান আমিন, তাহের, রুম্মন, জুয়েল, হাসানসহ দুই শতাধিক নেতাকর্মী।
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন আদালতে খারিজ হওয়ার প্রতিবাদে রাজধানীতে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ করেছে বিএনপি ও ছাত্রদল। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতের আদেশের পরপরই বিচ্ছিন্নভাবে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
অবশ্য পুলিশের ধাওয়ায় মিছিল বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। বাংলামটর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। দুপুর দেড়টার দিকে রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। মিছিলে নেতৃত্ব দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, মহানগর পশ্চিম ও মোহাম্মদপুর থানা বিএনপি এবং ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া বিক্ষোভ করেছে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও মহিলা দলের নেতাকর্মীরা। সেইসাথে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
দলের চেয়ারপারসন কারাবন্দি ও অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়ার জামিন না হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে রুহুল কবির রিজভী জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন ও চারবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়ার পরও নির্যাতনের মাত্রা আরো বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকার বেগম জিয়াকে তার ন্যায়সঙ্গত অধিকার জামিন থেকেই কেবল বঞ্চিত করছে না, বরং শারীরিকভাবে ভীষণ অসুস্থ একজন বয়স্কা নারীকে সুচিকিৎসা থেকেও বঞ্চিত করছে। আজকে জনগণের আশা ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল আদালত বেগম জিয়াকে জামিন না দিয়ে জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। আমরা মনে করি সরকারের হস্তক্ষেপেই আদালত তা খারিজ করলেন। প্রকৃত অর্থে এই আদেশের মাধ্যমে একটি খারাপ নজির স্থাপিত হলো। আমি বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাই-এখন আর ঘরে বসে থাকলে চলবে না। গণতন্ত্রের আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে সকল বাধা উপেক্ষা করে রাস্তায় নামতে হবে।
তিনি সরকার প্রধানের একরোখা বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক হিংসাত্মক বক্তব্যের উদ্দেশ্যই ছিল দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন না দিতে বিচার বিভাগ এবং বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষকে প্রভাবিত করা। এরপরও আমাদের বিশ্বাস ছিল- সরকারের সকল নজরদারী ও হুমকি উপেক্ষা করে সর্বোচ্চ আদালত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন দিয়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবেন। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালতের আদেশে দেশের মানুষ হতাশ এবং বাকরুদ্ধ। কেননা এখন দেশে চলছে এক ব্যক্তির ভয়ঙ্কর কর্তৃত্ববাদী শাসন, যেখানে দেশের জনগণ এবং গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বিরোধী পক্ষকে বন্দী করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আর সেই কারণেই বিরোধী দল ও মতের ওপর চলছে অবর্ণনীয় নানামুখী নির্যাতন। সরকারের চরম প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণে এটি স্পষ্ট যে, বেগম জিয়ার কারামুক্তিতে এখন রাজপথই আমাদের একমাত্র সমাধান। তাই জনগণকে সাথে নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামের কোনো বিকল্প নেই। সরকার যদি জনরোষ থেকে বাঁচতে চায় তাহলে অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। নইলে জনরোষের থাবা থেকে রেহাই পাবে না বর্তমান স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী। আমি আবারো অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।