ম্যাচ শুরুর আগে ন্যু ক্যাম্পে নিজের ৬ষ্ঠ ব্যালন ডি’অর তুলে ধরেছিলেন বার্সেলোনা অধিনায়ক লিওনেল মেসি। রিয়াল মায়োরকার বিপক্ষে মেসি যেন আবারও জানান দিলেন, কেন ফিফার বর্ষসেরার দৌড়ে সবার চেয়ে এগিয়ে আছেন তিনি। ব্যালন ডি’অর উঁচিয়ে ধরার দিনে আবারও রেকর্ড গড়লেন ‘লা পুলগা’, লা লিগায় ২৮৮ ম্যাচে করা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ৩৪ হ্যাটট্রিকে এই মৌসুমেই ভাগ বসিয়েছিলেন মেসি। লিগে ৪৬২তম ম্যাচে এবার সেটা টপকে গেলেন তিনিই (৩৫)। মেসির ব্যালন ডি’অর উপস্থাপন, হ্যাটট্রিক এবং রেকর্ডের রাতে মায়োরকাকে ৫-২ গোলে হারিয়ে দিয়েছে বার্সেলোনা। ১৫ ম্যাচ শেষে ৩৪ পয়েন্ট নিয়ে লা লিগার শীর্ষে আছে এর্নেস্তো ভালভার্দের দল।
ন্যু ক্যাম্পে ম্যাচের শুরুতেই লিড নেয় বার্সা। ৭ মিনিটে গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগানের বুদ্ধিদীপ্ত লম্বা গোলকিকে মায়োরকা ডিবক্সে গোলরক্ষক মানোলো রেইনাকে একা পেয়ে যান আঁতোয়া গ্রিযমান। এগিয়ে আসা গোলরক্ষককে চমৎকার চিপে পরাস্ত করে ন্যু ক্যাম্পকে উল্লাসে মাতান ফ্রেঞ্চ ফরোয়ার্ড। তবে ন্যু ক্যাম্পে আক্ষরিক অর্থেই কান পাতা দায় হয়ে পড়ে ১৭ মিনিটে। গ্রিযমানের পাসে প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে দুর্দান্ত এক বাঁকানো শটে রেইনাকে পরাস্ত করেন লিও। ন্যু ক্যাম্পে উপস্থিত প্রায় ৯৩ হাজার দর্শক তখন ‘দিওস!’ (ঈশ্বর) চিৎকারে মত্ত। শুরুতেই দুই গোল হজম করে দিশেহারা মায়োরকার পিছিয়ে পড়তে পারত আরও, কিন্তু গোলমুখে দুটি চমৎকার সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি লুইস সুয়ারেজ।
তবে প্রথমার্ধের শুরুর দিকে গোল না পাওয়ার ক্ষেত্রে ভাগ্যকেও দুষতে পারেন সুয়ারেজ, ২৮ মিনিটে তার বাঁকানো শট প্রতিহত হয় বারপোস্টে। বার্সার গোল মিসের সুযোগটা কাজে লাগিয়েছিল মায়োকা। ৩৫ মিনিটে ব্যবধান ২-১ করেন আন্তে বুদিমির। তবে ম্যাচের ফেরার স্বপ্ন বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি মায়োরকার। ৪১ মিনিটে ইভান রাকিটিচের সাথে দুর্দান্ত এক ওয়ান টুয়ের পর মেসির দিকে পাস বাড়ান সুয়ারেজ। প্রথম গোলের মত আবারও বাঁকানো শটে গোল করেন বার্সা অধিনায়ক। প্রথমার্ধের শুরুর দিকে গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেছিলেন, তবে প্রথমার্ধের শেষে শেষ হাসি হেসেছেন সুয়ারেজই। ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংয়ের পাস থেকে অবিশ্বাস্য এক ব্যাকহিলে রেইনাকে পরাস্ত করেন সুয়ারেজ।
৪-১ গোলে পিছিয়ে পড়লেও হাল ছাড়েনি বুদিমির। ৬৪ মিনিটে ডিবক্সে চমৎকার ফিনিশে ব্যবধান কমান তিনি। ম্যাচে সময় যত গড়িয়েছে, মায়োরকার আক্রমণের ধার বেড়েছে তত। তবে টের স্টেগানকে আর পরাস্ত করা হয়নি তাদের। শেষ পর্যন্ত ৮৩ মিনিটে আবারও সুয়ারাজের পাস থেকে গোল করেন মেসি, পূরণ করেন হ্যাটট্রিক। ম্যাচের শেষদিকে গ্রিযমানকে উঠিয়ে কার্লোস পেরেজকে নামিয়ে দেন ভালভার্দে। মাঠ ছাড়ার সময় ন্যু ক্যাম্প সমর্থকদের থেকে দাঁড়ানো অভিবাদন পেয়েছেন তিনি।
উসমান ডেম্বেলের ইনজুরিটা শাপে বরই যেন হয়ে এসেছে বার্সার জন্য, কাতালানদের হয়ে পুরনো গ্রিযমানকে দেখছে ইউরোপ। তবে গ্রিযমান-সুয়ারেজ যতই দুর্দান্ত খেলুক না কেন, ন্যু ক্যাম্পের আরও এক রাত হয়ে থাকল মেসিময়। যে রাতে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের জানান আরও একবার দিলেন তিনি, আবারও ভাঙলেন নতুন কোনো রেকর্ড।
সূত্র : প্যাভিলিয়ন