ইকবাল হাসান : নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে যৌতুকের দাবিতে গায়ে কেরোসিন ঢেলে ফাতেমা বেগম (২২) নামে এক গৃহবধূকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার বড়কাশিয়া বিরামপুর ইউনিয়নের পাবই গ্রামে গত মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাতে এই ঘটনা ঘটেছে । এ ঘটনায় স্বামী জুলফিকার আলী (৩২) সহ পরিবারের চার সদস্যকে আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে,নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার বরতলী-বানিয়াহারী ইউনিয়নের করণশ্রী গ্রামের সিরাজুল ইসলাম (সুরুজ) এর ছেলে জুলফিকার আলীর সঙ্গে প্রায় আড়াই বছর আগে একই উপজেলার বিরামপুর ইউনিয়নের পাবই গ্রামের মাওলানা হোসাইন আহম্মেদের মেয়ে ফাতেমা বেগমের বিয়ে হয়।
বিয়ের কয়েক মাস যেতেই স্ত্রীর বাবার বাড়ি থেকে এক লাখ টাকা যৌতুক এনে দেয়ার জন্য চাপ দেয় জুলফিকার আলী। ফাতেমা বেগম তার বাবার বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে আসার অপারগতা জানালে স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে।এই নির্যাতন সইতে না পেরে ফাতেমা প্রায় বছর খানেক আগে বাবার বাড়িতে গিয়ে পরিবারের লোকজন সবাইকে বুঝিয়ে ফ্রিজ-টিভি কেনার কথা বলে ৫০ হাজার টাকা এনে স্বামীকে দেন। টাকা পেয়ে প্রায় দুইমাসের মত যৌতুকলোভী জুলফিকার আলী ও তার পরিবার নীরব ছিল, কোন অত্যাচার করেনি ফাতেমা বেগমকে।
এরপর আরও ৫০ হাজার টাকা এনে দেয়ার জন্য স্ত্রীকে ফের নির্যাতন শুরু করে সে। কিন্তু ফাতেমা আর কোনো টাকা এনে দিতে পারবেন না বলে তাকে সাফ জানিয়ে দেন। এরপর থেকেই তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় জুলফিকার আলী ও তার পরিবার। সেই নির্যাতন সইতে না পেরে প্রায় সাত মাস আগে বাবার বাড়ি চলে আসেন ফাতেমা বেগম এবং সেই সময় থেকে সেখানেই অবস্থান করতে থাকেন।
এরপর মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে শ্বশুরবাড়ি গিয়ে কথা বলার জন্য স্ত্রীকে বাড়ির সামনে ডেকে আনে জুলফিকার আলী। দু’জনের মধ্যে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে জুলফিকারের সঙ্গে থাকা বোতলের কেরোসিন ফাতেমার গায়ে ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। এ সময় ফাতেমার চিৎকার শুনে বাড়ির লোকজন সেখানে এসে তাকে মারাত্মক দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় দ্রæত মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থা আসঙ্কাজনক।
মোহনগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শওকত আলী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ গৃহবধূর খোঁজ খবর নেয়াসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ ওই গৃহবধূর বাবা মাওলানা হোসাইন আহম্মেদ বাদী হয়ে গতকাল বুধবার (২৭ নভেম্বর) সকালে মেয়ের স্বামী জুলফিকার আলীসহ পরিবারের চারজনকে আসামি করে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।