মো. আব্দুল কাইয়ুম : ময়মনসিংহ শহরকে আধুনিকায়ন করতে সদ্য বিদায়ী মেয়র আপ্রাণ চেষ্টা করলেও পরিচ্ছন্ন ও আধুনিক বসবাসযোগ্য শহর হিসেবে একটি শহর উপহার দিতে কতটুকু সফল হয়েছেন সেটা নগরবাসীই জানেন। তবে শম্ভুগঞ্জের ময়লাকান্দায় পরিচ্ছন্ন ও বিশুদ্ধ পরিবেশ এবং শহরের ড্রেনেজ অব্যবস্থাপনার দায় কিছুটা হলেও সদ্য বিদায়ী মেয়র ও বর্তমান সিটি কর্পোরেশন প্রশাসক ইকরামুল হক টিটুর ওপর বর্থায়। ময়লাকান্দার দূষিত পরিবেশের জন্য এখনও আন্ত:বিভাগের কয়েক কোটি মানুষসহ স্থানীয়রা প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সেই সাথে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ছে। শহর আধুনিকায়নের জন্য অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সদ্য বিদায়ী পৌর মেয়র সরকারি খরচে অনেকবার বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ নিলেও শহরবাসীকে ময়লা-আবর্জনা ও দুর্গন্ধমুক্ত শহর উপহার দিতে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুক্ষীন হয়েছেন।
সূত্রে জানা যায়, ময়মনসিংহ শহরে ছয় লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করায় প্রতিদিন গড়ে ১৭০ মেট্টিক টন ময়লা-আবর্জনা তৈরি হয়। আর পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়েই শহরের সমস্ত ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয় শহরতলীর চর ঈশ্বরদিয়া ইউনিয়নের চর কালিবাড়িতে। ১৯৯৫ সালে পৌর কর্তৃপক্ষ ময়লাকান্দার তিন একর জমি কেনেন বাসস্ট্যান্ড স্থানান্তরের উদ্দেশ্যে। যদিওবা অজ্ঞাত কারণে এখনই ময়লাকান্দায় বাসস্ট্যান্ড স্থানান্তরের কোন পরিকল্পনা নেই কর্তৃপক্ষের। আর এই ময়লাকান্দার ময়লা থেকে সৃষ্ট গন্ধে নাজেহাল জীবন যাপন করতে হচ্ছে স্থানীয়দের। মহাসড়ক দিয়ে চলাচলরত যাত্রীরাও ময়লার গন্ধে অতিষ্ট ও বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছেন।
এদিকে, ময়লাকান্দা এলাকার প্রায় ৬ হাজার মানুষ চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। মশা-মাছির উপদ্রুবের সাথে অসহনীয় দুর্গন্ধের কবল থেকে শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত কেউই রেহাই পাচ্ছেন না। পথচারীরা সাময়িকভাবে দমবন্ধ করে চলাচল করলেও সিটি কর্পোরেশনের দেয়া নিত্যদিনের উপহার ‘দুর্গন্ধ’কে সুগন্ধি হিসেবে মেনে নিতে হচ্ছে সবাইকে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, শহরের হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সামনে, বিভিন্ন মোড়সহ বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকাগুলোতে নির্দিষ্ট ময়লা ফেলার স্থান না থাকায় ড্রেন ও রাস্তার উপরেই ফেলা হচ্ছে ময়লা আবর্জনা ও ক্লিনিক্যাল বর্জ্য। নিয়মিত পরিষ্কার না করায় এসব আবর্জনা ও বর্জ্য থেকে বিভিন্ন ধরণের রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। ময়মনসিংহ পৌর এলাকায় গড়ে ওঠা দুই শতাধিক ক্লিনিক ও প্যাথলজি ল্যাবের কারও ক্লিনিক্যাল বর্জ্য পোড়ানোর নিজস্ব কোনো ইনসিনেরেশন মেশিন না থাকায় এসব বর্জ্য ফেলা হচ্ছে শহরের অলিগলির রাস্তাসহ ড্রেনের ওপর। এ কারণেই শহরের অধিকাংশ সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হওয়ার পথে। ময়লায় ড্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় একটু বৃষ্টি হলেই শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও আবাসিক এলাকার গলিগুলোতে কোমর পানি হয়ে যায়।
অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে অল্প বৃষ্টিতেই শহরের প্রাণ কেন্দ্র গাঙ্গিনার পাড়, রামবাবু রোড, দুর্গাবাড়ী রোড, নতুন বাজার, সাহেব আলী রোড, জিলা স্কুল রোড,স্টেশন রোড ও সি,কে ঘোষ রোড, আমলা পাড়া, সেহড়া মুন্সীবাড়ি, পুরোহিত পাড়া, ব্রাম্মপল্লী রোড বাউন্ডারী রোড, কাচিঝুলী, নও মহল, গুলকী বাড়ি সানকি পাড়া, আলীয়া মাদ্রাসা রোড, চরপাড়া-ভাটিকাশর পাটগুদাম, কেওয়াটখালী, জেসি গুহ রোড, স্টেশন রোড, সানকিপাড়া রেলক্রসিং, নতুন বাজার রেলক্রসিংসহ বিভিন্ন পয়েন্টে রেললাইনসহ রাস্তার ওপর ২/৩ ফুট পানি উঠে যায়। এতে করে শুধু জলাবদ্ধতায় সৃষ্টি হয়না সেই সাথে ময়লা আবর্জনা ভেসে বেড়ায় সমস্ত শহরে।
ময়লা আবর্জনার গন্ধে অতিষ্ঠ স্থানীয় ময়লাকান্দার লোকজন যেকোনো সময় আবারো মহাসড়ক অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচিতে যেতে পারেন। আর মহাসড়ক অবরোধের মতো কর্মসূচিতে গেলে ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরের সঙ্গে জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। অপরদিকে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সি.কে ঘোষ রোড ও দূর্গাবাড়ী রোডে ড্রেনেজ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার চেস্টা করা হলেও তা কতটুকু কার্যকরী ভূমিকা রাখবে তা নয়েই শঙ্কিত শহরবাসী।
লেখক : সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী। ইমেইল : kaium.hrd@gmail.com