অপ্রতিরোধ্য মেসির গোলে, বার্সার দুর্দান্ত জয়

বার্সেলোনার হয়ে ৭০০ তম ম্যাচ। বরুশিয়া ডর্টমুন্ডকে হারাতে পারলে নিশ্চিত হবে পরের রাউন্ড। ম্যাচটাও ন্যু ক্যাম্পে। লিওনেল মেসির জন্য মঞ্চ প্রস্তুত ছিল। ঘরের মাঠে মেসি শুধু আরো একটি মেসিসুলভ রাত পার করেছেন। তাকে সঙ্গ দিয়েছেন লুইস সুয়ারেজ আর আন্টোয়ান গ্রিযমান। মেসি এক গোল করিয়েছেন, আরও দুইটি করতে সাহায্য করেছেন আক্রমণভাগের দুই সতীর্থদের দিয়ে। মেসির রাতে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড তাই আর দাঁড়াতে পারেনি বার্সেলোনার সামনে। ৩-১ গোলে জিতে চ্যাম্পিয়নস লিগের পরের রাউন্ড বার্সেলোনা নিশ্চিত করেছে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে।

ঘরের মাঠে ম্যাচের শুরু আর শেষটা অবশ্য নড়বড়ে ছিল বার্সেলোনার। মাঝের সময়টা কাজে লাগিয়ে নিজেদের সঙ্গে ডর্টমুন্ডের দূরত্বটা বাড়িয়ে নিয়েছিলেন মেসিরা। ম্যাচে নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কাজটাও প্রথমার্ধেই সেরে ফেলেছিল এর্নেস্তো ভালভার্দের দল। চার মিনিটের ব্যবধানে দুই গোল করে ফেলেন সুয়ারেজ ও মেসি।

এর আগে একাদশে কিছুটা চমক রেখেই ইভান রাকিটিচ ও উসমান ডেম্বেলেকে একাদশে নামিয়ে দিয়েছিলেন ভালভার্দে। সেই রাকিটিচের একটি ভুল থেকে ডর্টমুন্ড ম্যাচের একেবারে শুরুতে ভড়কে দিতে বসেছিল বার্সাকে। নিকো শুলজ অবশ্য পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি তখন। নিষেধাজ্ঞায় দলে না থাকা জেরার্ড পিকের জায়গায় নামা স্যামুয়েল উমতিত গোললাইন থেকে বল ক্লিয়ার করে বিপদের হাত থেকে বাঁচান বার্সাকে।

শুরু নড়বড় অবস্থা সামাল দিয়ে রাকিটিচ ধীরে ধীরে মানিয়ে নিয়েছেন, বার্সাও সময়ের সঙ্গে ফিরেছে ম্যাচে। মেসি শুরু থেকেই ছন্দ ছিলেন। তার দারুণ এক পাস থেকে ২২ মিনিটে গোল করলেও অফসাইডের কারণে উদযাপন করতে পারেননি। বার্সা আর সুয়ারেজের অপেক্ষা এর পর খুব বেশি দীর্ঘ হয়নি। তবে এর আগেই উসমান ডেম্বেলেকে ইনজুরির কারণে হারিয়ে বসে বার্সা। গ্রিযমান শুরুতে সুযোগ না পেলেও মাঠে নামার জন্য তাই খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি তাকে।

ম্যাচের সময় আধঘন্টা হওয়ার আগেই সেই মেসির পাস থেকে সুয়ারেজ গোল করে এগিয়ে নিয়ে যান বার্সাকে। এ দফায় বক্সের ঠিক ভেতর থেকে মেসির পাস রিসিভ করার সময় কোনোমতে নিজেকে অনসাইডে রেখেছিলেন সুয়ারেজ। গোল পেয়ে আত্মবিশ্বাসী বার্সার জেঁকে বসেছিল ডর্টমুন্ডের ওপর। তখনই একটি ভুল করে বার্সাকে ব্যবধান আরও বাড়িয়ে নেয়ার সুযোগ করে দেন অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার ম্যাটস হামেলস।

ডি ইয়িং মিডফিল্ডে হামেলসের পাস ছিনিয়ে সামনে বাড়ান। মেসি-সুয়ারেজ হয়ে আবার ফিরতি বল বক্সের ভেতর পেয়ে যান মেসি। এর পরের ছবিটা চেনা, নিচু ফিনিশে গোল করে হামেলসকে হতাশায় ডুবিয়ে দুই গোলের লিড নিয়ে নেয় বার্সা। ক্লাবের হয়ে ৭০০ তম ম্যাচ খেলতে নেমে একে অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার রেকর্ডে মেসি এর পর ছাড়িয়ে যান ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে। চ্যাম্পিয়নস লিগে ৩৪ নম্বর প্রতিপক্ষের বিপক্ষে গোল পেয়েছেন মেসি, আর রোনালদো গোল করেছেন ৩৩ প্রতিপক্ষের বিপক্ষে।

দুই গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর খেলার গতি কমিয়ে এনে ডর্টমুন্ডের লাগাম টেনে ধরে বার্সা। দ্বিতীয়ার্ধের একেবারে প্রথম মিনিটেই গ্রিযমানের শট রোমান বুর্কি আটকে না দিলে তৃতীয় গোলটিও আগেই পাওয়া হয়ে যেত বার্সার। ডর্টমুন্ডের ম্যাচে ফিরতে তাই দরকার ছিল এক গোল। হুলিয়ান ব্রান্ডট ভালো একটি আক্রমণ থেকে মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগানকে সেভ করতে বাধ্য করার পর সেই আত্মবিশ্বাসটুকু পুঁজি হয় ডর্টমুন্ডের

কিন্তু এক মেসির কাছেই বার বার হেরে যাচ্ছিল তারা। মোহনীয় ড্রিবলিং আর চোখ ধাঁধানো সব পাস দিয়ে ডর্টমুন্ডকে বারবার নিজেদের অর্ধে ব্যস্ত রাখছিলেন মেসি। ৬৭ মিনিটে তার আরেকটি পাস বুকে শেলের মতো গিয়ে বিঁধেছে ডর্টমুন্ডের। গ্রিযমান সেই পাসের শেষ প্রান্তে গিয়ে বাম পায়ের কোণাকুণি ফিনিশে করে ফেলেন বার্সার হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজের প্রথম গোল। গ্রিযমানের মতো বার্সারও তখন ওই গোলটি দরকার ছিল। এর পর একরকম নিশ্চিত হয়ে যায় ম্যাচের ফল।

মেসি কাটিয়েছেন দারুণ একটি ম্যাচ। ৭১ মিনিটে বক্সের বাম পাশ থেকে পাওয়া ফ্রি-কিকে দুরূহ কোণ থেকে অল্পের জন্য দ্বিতীয় গোলটি পাওয়া হয়নি তার। বারপোস্টের মাথায় লেগে গোলবঞ্চিত হয়েছেন মেসি। তবে বল নিয়ে তার কারিকুরি চলছিলই। কখনই পায়ে, কখনও মাথা দিয়ে- যেভাবে পেরেছেন গোলের চেষ্টা করে গেছেন। এর ভেতর অবশ্য ৫২ মিনিটে একবার চরিত্রের উলটো রূপটাও দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি। ডর্টমুন্ডের কয়েকজন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে বক্সের ভেতর ঢুকে গোলে শট করার আগে পড়ে গিয়েছিলেন মেসি। পেনাল্টির দাবি করেননি মেসি, সঙ্গে সঙ্গে উঠেও দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু রেফারির চোখ এড়ায়নি ঘটনা। কোনোরকম কোনো টাচ ছাড়াই মাটিতে পড়ে গিয়েছিলেন মেসি। হলুদ কার্ডটা তাই দেখতেই হয়েছে তাকে।

শেষ পর্যন্ত সহজভাবে জেতা ম্যাচেও ভালভার্দের দলের ত্রুটি বের করে দিয়ে গেছে ডর্টমুন্ড। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই বদলি নামা জেডন সানচো ৭৭ মিনিটে এক গোল শোধ করেন। দশ মিনিট পর ম্যাচটা পুরোপুরি জমিয়ে তুলতে পারতেন তিনি। বারপোস্টের কারণে দ্বিতীয় গোলটি পাওয়া হয়নি ইংলিশ ফরোয়ার্ডের। নইলে বার্সার জন্য স্নায়ুক্ষয়ী মুহুর্ত অপেক্ষা করছিল এবারও।

গ্রুপে বার্সেলোনার জায়গায় নিশ্চিত হয়ে গেলেও বাকি আরেকটি দল কারা হবে সেটা এখনও অনিশ্চিত। ডর্টমুন্ড ও ইন্টার মিলান দুই ক্লাবেরই পয়েন্ট ৭। নিজেদের ম্যাচে ইন্টার মিলানও স্লাভিয়া প্রাগকে হারিয়েছে ৩-১ ব্যবধানে। লাউতারো মার্টিনেজ করেছেন জোড়া গোল, রোমেলু লুকাকু করেছেন অন্যটি। ইন্টারের শেষ ম্যাচ সান সিরোতে বার্সেলোনার বিপক্ষে। নিজেরা জিতলেই শুধু হবে না, ইন্টারকে প্রার্থনা করতে হবে যেন ডর্টমুন্ড ঘরের মাঠে স্লাভিয়া প্রাগকে হারাতে না পারে। কারণ পয়েন্ট সমান হলেও হেড টু হেডে ইন্টার পিছিয়ে আছে ডর্টমুন্ডের চেয়ে।
সূত্র : প্যাভিলিয়ন

Share this post

scroll to top