রিফাত আহমেদ রাসেল, দুর্গাপুর (নেত্রকোণা): র্দীঘ কয়েক বছর ধরে চলাচলের একমাত্র সেতুটি ভেঙ্গে পড়ে থাকায় সীমাহীন ভোগান্তিতে দিন পাড় করছে নেত্রকোণার দুর্গাপুরের সীমান্তবর্তী ভাবানীপুর ও ফারংপাড়া হাজারো গ্রামবাসী। স্থানীয়দের অভিযোগ বছরের পর বছর পেরলেও সেতুটি সংস্কারের এখন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ। ফলে শিক্ষার্থীসহ রোগীদের যাতায়াতে হিমসীম খেতে হচ্ছে প্রতিনিয়তই। আর বৃষ্টি হয়েই ছড়ার পানি বেড়ে পুরো গ্রামের সাথে বন্ধ হয়ে উপজেলা সদরের যোগাযোগ ব্যবস্থা। এখন সবার মনে একটাই প্রশ্ন কবে সংস্কার হবে এই ভাঙ্গা ব্রিজ।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা নেত্রকোনার দুর্গাপুরের ছোট একটি গ্রাম ভাবানীপুর। গারো হাজং সহ হিন্দু- মুসলিম বাঙ্গালীর একত্রে বসবাস এই গ্রামে। রয়েছে বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষা বাহিনীর বিজিবি একটি ক্যাম্পও। উপজেলার সদর ইউনিয়নের ছোট এই গ্রামটি মানুষের চলাচলের একমাত্র সড়ক উত্তর ফারংপাড়া বটতলা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পিলার ১১৫৬ নং ৮ সি হয়ে নদী তীরবর্তী একটি রাস্তা। তার উপর ভারতের একটি ছড়ার পানি এসে মিশেছে সোমেশ্বরী নদীতে। স্থানীদের কাছে এই ছাড়াটি দাসাং নামেই পরিচিতি। ভারতের মেঘালয়ের মৌকিরয়াতের দক্ষিণ পশ্চিম খাসি পাহাড়ের একটি প্রাকৃতিক ঝর্ণার পানি বাংলাদেশের দুর্গাপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের ডাহাপাড়া গ্রাম দিয়ে প্রবেশ করে ফারংপাড়ায় এসে সোমেশ্বরী নদীর সাথে মিলিত হয়েছে ছাড়াটি।
বর্ষায় প্রায় সময় এই ছড়ার পানি বেড়ে ঢলে রূপ নেয়। বিগত ২০১৬ সালের বর্ষা মৌসুমে ছড়ার পানি বেড়ে ও তিব্র স্রোতে ভাবানীপুর গ্রামের হাজারো মানুষের চলাচলের একমাত্র সেতুটি উত্তর পাশের দুই পিলারের মাটি সরে ভেঙ্গে পড়ে। ফলে এখাকার স্থানীয় বাসিন্দা সহ সীমান্ত রক্ষার কাজে নিয়জিত বিজিবি সদস্যদের চলাচলে হীমসীম খেতে হচ্ছে প্রতিনিয়তই।
সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় চারিদিকে পাহাড় ও চাষদের জমি থাকায় নেই কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা হাট বাজার। গ্রামের প্রায় সকল শিক্ষার্থী পড়াশুনা ও স্থানীয়দের হাট বাজারের জন্য আসতে হয় উপজেলা সদরে। কিন্তু ব্রিজ ভাঙ্গা থাকায় ছড়ার কখনো হাটু পানি কখনো বা কোমর সমান পানি পেরিয়ে আসতে হয় এপাড়ে। অনেক সময় শিক্ষার্থীরা পায়ে হেটেঁ পানি পাড় হতে গিয়ে পানিতে পরে বই খাতা ভিজে হয়ে যায় একাকার। ফলে আর যাওয়া হয় না বিদ্যালয়ে ভেজা শরীর নিয়ে ফিরে যেতে হয়ে বাড়িতে। আর বৃষ্টি হয়ে ছড়ায় পানি বেড়ে বন্ধ হয় যায় উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থাও।
আর এর প্রভাব পরে শিক্ষার্থীদের পড়া শুনায় ও স্থানীয়দের জীবন যাত্রার উপর। স্থানীয় উত্তর ফারংপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সূত্রে দেখা যায়, বিদ্যালয়টি বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই ভাবানীপুর গ্রামের। ব্রিজ ভাঙ্গা থাকায় নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসা ছেড়ে দিয়েছে অনেক শিক্ষার্থী। ফলে দ্বিতীয় সাময়িক পরিক্ষায় এই বিদ্যালয়ের পাশের হার ছিলো অনেক কম।
তাছাড়া পর্যটন শিল্পের জন্যও এই এলাকায় রয়েছে অপার সম্ভাবনা। প্রতিদিনিই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা আসেন এখানে। কিন্তু ব্রিজ ভাঙ্গা থাকায় সীমান্তের বেশির ভাগ এলাকা দেখের হতাশা নিয়ে ফিরে যায় তারা।
ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা শ্রীমান হাজং জানায়, প্রতিদিনই নদী নিয়ে আমাদের যাতায়াত করতে হয়। দীর্ঘ কয়েক ধরে ব্রিজ ভেঙ্গে পড়ে আছে কিন্তু দেখার যেনো কেউ নাই। প্রতিদিন হাজারো ভোগান্তির শিকার হয়ে চলাচল করতে হচ্ছে আমাদের। একটি রোগী নিয়ে যে হাসপাতালে যাবো তারও কোনো ব্যবস্থা নাই।
তবে ব্রিজটি দ্রুত সময়ের সাথে সংস্কার করা হবে বলে ময়মনসিংহ লাইভকে জানান উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) আব্দুল আলিম লিটন। তিনি বলেন, ব্রিজটি সংস্কারের জন্য আগের কয়েক বার চেষ্টা করা হলেও সিমান্ত এলাকা হওয়ায় কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকায় কাজ করা যায়নি। তবে এখন এডিপির ছোট একটি প্রকল্পে মাধ্যমে স্থানীয়দের চলাচলের জন্য একটি ব্যবস্থা গ্রহন করছি। আর পরবর্তীতে ব্রিজটি স্থায়ী সমাধান করা হবে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি-চেয়ারম্যান শাহিনুর আলম সাজু কথা বলতে রাজি হয়নি।