অশক্ত শরীর। অনেক দিন হল হাতে উঠেছে লাঠি। চোখে–মুখে বয়সের ছাপ স্পষ্ট। তাই বলে মনের জোর বিন্দুমাত্র কমেনি ওঁদের। স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দিনগুলি আজও স্পষ্ট মনে আছে পূর্ণেন্দুপ্রসাদ ভট্টাচার্যের। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ৭৭ তম বর্ষপূর্তিতে বাংলার এই সংগ্রামীকে সম্মানও জানিয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। সংগ্রামী পূর্ণেন্দুপ্রসাদ ভট্টাচার্য’র জন্মস্থান ময়মনসিংহের গৌরিপুরে।
বয়সের কাছে স্মৃতিশক্তি এখনও হার মানেনি। স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস গড়গড় করে বলে গেলেন পূর্ণেন্দুপ্রসাদ ভট্টাচার্য। ১৯২০ সালের ১০ অক্টোবর ময়মনসিংহে জন্ম। থাকেন বরানগরের মান্নাপাড়া রোডে। আর দু’মাস পরেই শতবর্ষে পা দেবেন। সোমবার পুত্র শঙ্খকে নিয়ে লাঠি হাতে মহাকরণে এসেছিলেন। কিছুদিন আগে মহাকরণের স্বাধীনতা সংগ্রামের দপ্তরে তিনি তাঁর জীবনপঞ্জি জমা দিতে গিয়েছিলেন।
কথা হচ্ছিল পূর্ণেন্দুবাবুর সঙ্গে। বললেন, ‘১০ বছর বয়সে আমাকে স্বাধীনতা আন্দোলনে যুক্ত করেছিলেন সেজো মামা কৃষ্ণলাবণ্য গোস্বামী। কাজ ছিল বিপ্লবীদের রিভলভার, বোমা, বোমার মশলা পৌঁছে দেওয়া। সেজো মামা বহরমপুর সেন্ট্রাল জেলে মাস্টারদা সূর্য সেনের সঙ্গে ছিলেন। ১৯৩৮ সালে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে বন্দিমুক্তি আন্দোলনে শুরু করেছিলাম। দু’দফায় সাড়ে ৮ বছরের জেল হয়। জেলে বসে বিএ পাশ করি।’ স্মৃতি হাতড়ে পূর্ণেন্দুবাবু বললেন, ‘নেতাজি, গান্ধীজি, সরোজিনী নাইডু, ভগৎ সিংকে দেখেছি। পার্ক সার্কাসে অল ইন্ডিয়া কংগ্রেসের অধিবেশন হয়। বিপ্লবীদের সঙ্গে সমন্বয় রাখার জন্য ইন্ডিয়ান রিপাবলিক আর্মি তৈরি করা হয়েছিল। পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান ছিলেন মাস্টারদা। ছিলেন ভগৎ সিং। আমাকে ময়মনসিংহের গৌরীপুরের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেখানে কুস্তি, ব্যায়াম, লাঠি চালানো শেখাতাম। গৌরীপুরের প্রধান ছিলেন বিপ্লবী চিত্ত বিশ্বাস। তিনি রাশিয়ায় চলে যান। পরে ধরা পড়ে আন্দামান জেলে ছিলেন।’
এখনকার রাজনীতি সম্পর্কে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে বলেন, ‘মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে আমার অনেক দিনের পরিচয়। তাঁর প্রতি আমার শুভেচ্ছা রইল। রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, নেতাজি–সহ অন্য মনীষীদের কথা তরুণ প্রজন্মের কাছে বেশি করে ছড়িয়ে দিতে হবে।’ পূর্ণেন্দুপ্রসাদ জানান, তাম্রপত্র পেয়েছেন। রাত দুটো–আড়াইটে পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। বললেন, ‘রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বলব, দেশ আগে, তারপর সব।