ভবিষ্যত বাংলাদেশের এক ঝলক দেখালেন মোহাম্মদ নাঈম

শুরুতেই সাজঘরে ফিরেছিলেন ওপেনার লিটন দাস। মাত্র ৯ রান নিয়ে সাজঘরে ফিরেছিলেন। অপরপ্রান্তে তখন ছিলেন এক তরুণ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবেমাত্র পা রেখেছেন। অভিজ্ঞ লিটন ফিরে যাওয়ায় বিচলিত হওয়ার কথা তার। কিন্তু না, খুবই ধীর-স্থির থাকলেন। পরের বলে ফিরে গেলেন সৌম্য সরকার। পর পর দুটি উইকেটের পতনের পরও মাথা ঠাণ্ডা রেখে খেলে চললেন তিনি। যেখানে যুজবেন্দ্র চাহালের বলে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানরা নাস্তানাবুদ হন সেখানে একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে যাচ্ছিলেন এই তরুণ। ভয়-ডরহীন ক্রিকেট কাকে বলে- সেটা দেখিয়ে দিচ্ছিলেন ২০ বছর বয়সী এই ওপেনার। বলা যায়, ভবিষ্যত বাংলাদেশের এক ঝলক দেখিয়ে দিলেন তিনি। তিনি মোহাম্মদ নাঈম। ভারতের বিপক্ষে টি-২০ সিরিজে অভিষিক্ত ক্রিকেটার।

রোববার সিরিজের তৃতীয় টি-২০ ম্যাচে ৮১ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস খেলেছেন নাঈম। ভারতীয় বোলারদের ইচ্ছে মতো পিটিয়েছেন। তবে শান্ত মেজাজে। হাঁকিয়েছেন ১০টি বাউন্ডারি ও দুটি ছক্কা।

ষষ্ঠ ওভারে চাহাল যখন প্রথম বল হাতে এলেন, তাকে বাউন্ডারির হ্যাটট্রিক করে স্বাগতম জানালেন নাঈম। তার করা ১১ বলে ২৯ রান নিয়েছেন এই যুবক।

নাঈমের ধীরতায় জয়ের স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশ। জয়টা তখন হাতের মুঠোয় বন্দি ছিল। কিন্তু দীপক চাহার যদি একের পর এক আঘাত না হানতেন, বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে ভিড়িয়ে ফেলতেন নাঈম। চাহার হ্যাটট্রিকসহ ছয়টি উইকেট শিকার করেছেন।

খেলার ধরণে দুটি পরিবর্তন এনেছেন নাঈম, যার ফলে তার ইনিংসটি অসাধারণ ছিল। আগের দুটি ম্যাচ- দিল্লি এবং রাজকোটে উঁচু শটে সীমানার দিকেই বল ফেলেছেন তিনি। কিন্তু এবার তৃতীয় ম্যাচে তেমনটা খেলেননি। উঁচু শটের বদলে মিডউইকেট দিয়ে বল ফেলে দুই-এক রান নিয়েছেন।

এছাড়া শুরুতে নাঈম খেলেছেন খুব সহনশীলভাবে ব্যাট করেছেন। তৃতীয় ওভারে পর পর দুটি উইকেটের পতনের ফলে পাওয়ারপ্লে’তে ভারতীয় বোলারদের শাসন করতে পারেননি। কিন্তু লেগস্পিনার চাহাল বল হাতে আসতেই দাপট দেখান তিনি।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নতুন মুখ হলেও দ্রুতই উত্থান হয়ে গেলো নাঈমের। তার জন্ম এবং বেড়ে উঠা ফরিদপুরে। ক্রিকেটের চেয়ে হকি বেশি জনপ্রিয় এই অঞ্চলে।

বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকে নাঈম অনুর্ধ্ব-১৯ এ খেলেন। জেলার নামকরা কোচ মোখলেসুর রহমানের শিষ্য তিনি। তাকে গড়ে তোলায় হাত রয়েছে আরেক কোচ তারভীর আহমেদ রাজীবের।

বছর দুয়েক আগে অনুর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটে অভিষেক হয় নাঈমের। গত বছর নিউজিল্যান্ডে অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেও খেলেছেন তিনি। এ পর্যন্ত আটটি ম্যাচ খেলেছেন।

এছাড়া ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের নবম রাউন্ডের ড্রাফটে লিজেন্ড অব রুপগঞ্জের হয়ে খেলেছেন তিনি। তাকে বদলী ওপেনার হিসেবে দলে নিয়েছিলেন তারা। কিন্তু পরে দলের গুরুত্বপূর্ণ একজন হয়ে যায়। অনুর্ধ্ব-১৯ দলে তার খেলার ধরণ দেখে নেয়া হয় তাকে। ডিপিএলের প্রথম সেশনে ৪৬.৩৩ গড়ে তার সংগ্রহ ৫৫৬ রান।

জুলাইতে আফগানিস্তান এ দলের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছেন নাঈম। পরে অক্টোবরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করেছেন টানা দুটি হাফসেঞ্চুরি করেছেন। তার এই পারফরমেন্সই নির্বাচকদের নজর কেড়েছে।

তবে এ কথা বলা এখনই ঠিক হবে কিনা- যেভাবে নিজেকে উজার করে খেলেন নাঈম, তাতে মনে হয় ক্রিকেট খেলার জন্যই তার জন্ম হয়েছে। ভবিষ্যতে তামিমের মতো দুর্দান্ত ওপেনার হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

– ক্রিকইনফো

Share this post

scroll to top