মসজিদে আরবি পড়ানোর নামে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ওই মসজিদেরই ইমামের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ইমামের নাম মেহেদী হাসান মোল্লা (৪০)। ধর্ষণের ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে তাকে আটক করে পুলিশে সোর্পদ করে এলাকাবাসী। ঘটনাটি ঘটেছে মাদারীপুর সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের কুমড়াখালি এলাকায়।
এদিকে আটককৃত ইমাম মেহেদী হাসান মোল্লার নামে থানায় মামলা দায়ের করা হলে বুধবার সকালে ধর্ষককে আদালতে প্রেরণ করা হয়। অপরদিকে নির্যাতিত স্কুলছাত্রীকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাগেরহাট জেলার রায়েন্দা থানার রাজাপুর গ্রামের আঃ জব্বার মোল্লার ছেলে মেহেদী হাসান মোল্লা ১২ বছর ধরে মাদারীপুর সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের কুমড়াখালি এলাকার জবান খাঁন জামে মসজিদে ইমাম হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। ধর্ষণের শিকার মেয়েটি এলাকার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। স্কুলে যাওয়ার আগে প্রতিদিন সকালে এলাকার অন্য শিশুদের সঙ্গে সে গ্রামের মসজিদে ইমামের কাছে আরবি পড়তে যায়। গত ১২ অক্টোবর সকালে অন্য শিশুদের সঙ্গে মেয়েটিও মসজিদে আরবি পড়তে যায়।
পড়াশেষে সবাইকে ছুটি দিলেও মেয়েটিকে নিজের (ইমামের) থাকার কক্ষ ঝাড়ু দেয়ার কথা বলে ইমাম মেহেদী হাসান তার কক্ষে নিয়ে যায়। পরে কক্ষের দরজা বন্ধ করে জোরপূর্বক ইমাম তাকে ধর্ষণ করে। এসময় মেয়েটি চিৎকার করতে থাকলে তার মুখে কাপড় দিয়ে ধর্ষণ করে মেহেদী। এরপর গত ১৫ অক্টোবর একইভাবে স্কুলছাত্রীকে আবারো ধর্ষণ ইমাম। একপর্যায়ে ধর্ষণের কথা কারো কাছে বললে তাকে মেরে ফেলা হবে বলে ঐ ইমাম মেয়েটিকে শাসিয়ে দেয়। পরে মেয়েটি কাউকে কিছু না জানিয়ে ঘটনাটি চেপে রাখেন।
এরপর মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে মেয়েটি তার স্কুলে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে শিক্ষকেরা তার পরিবারের সদস্যদের খবর দিলে তারা স্কুলে গিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে যায়। বাড়িতে এসে মেয়েটির কাছে তার পরিবারের লোকজন সব কিছু জানতে চায়। পরে সন্ধ্যার দিকে মেয়েটি তার নানীর কাছে ধর্ষণের ঘটনা খুলে বলে। পরে এ ঘটনার কথা এলাকার লোকজন জানতে পেরে ইমাম মেহেদী হাসান মোল্লাকে আটক করে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে ধর্ষক মেহেদী হাসানকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে মঙ্গলবার রাতেই মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। বুধবার সকালে ঐ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ধর্ষক মেহেদী হাসানকে আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ। নির্যাতিতা স্কুলছাত্রীকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে নির্যাতিতা স্কুলছাত্রীর পিতা বলেন, ধর্ষক ইমাম মেহেদী হাসানকে এলাকাবাসী আটক করে চরমুগরিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দিলে পুলিশ এসে তার মেয়েকেসহ ইমামকে থানায় নিয়ে গেছে। আমি মামলা করেছি এবং ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
চরমুগরিয়া পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আবুল কালাম বলেন, মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে এলাকাবাসী আমাদের ঘটনাটি জানালে আমরা সেখান থেকে মেহেদী হাসান নামে একজনকে থানায় নিয়ে আসি।
মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) শশাংক চন্দ্র ঘোষ বলেন, ধর্ষণের শিকার একটি মেয়ে রাতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আমরা মেডিকেল চেকআপের জন্য আলামত সংগ্রহ করেছি। বর্তমানে মেয়েটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এ বিষয়ে মাদারীপুর সদর মডেল থানার ওসি সওগাতুল আলম জানান, এ ঘটনায় মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার আসামিকে গ্রেফতার দেখিয়ে বুধবার সকালে আদালতে পাঠানো হয়েছে। মেয়েটিকে চিকিৎসার জন্য আমরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়েছি।