কানুনগো ও উপসহকারী সেটেলমেন্ট অফিসারের পদোন্নতির বাধা কাটল

দীর্ঘ ১৬ বছর বন্ধ থাকার পর অবশেষে কানুনগো ও উপসহকারী সেটেলমেন্ট অফিসারের ৮৫ ভাগ শূন্যপদে পদোন্নতির আইনি বাধা কেটেছে। উচ্চ আদালত আগামী ১১ নভেম্বরের মধ্যে এসব শূন্যপদে যোগ্য ব্যক্তিদের পদোন্নতি দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।

ভূমি ব্যবস্থাপনা ও জরিপ বিভাগের কানুনগো ও উপসহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার পদে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে পদোন্নতি বন্ধ রয়েছে। আর পদোন্নতি ও নিয়োগ বন্ধ থাকায় বর্তমানে ৮৫ ভাগ অর্থাৎ এক হাজার ৪১১টি পদের মধ্যে এক হাজার ২০০ পদ শূন্য রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে।

সূত্রটি জানায়, কানুনগো পদের ৫০ শতাংশ সরাসরি নিয়োগ ও ৫০ শতাংশ ফিডার পদধারীদের মধ্য থেকে পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সর্বশেষ ২০০৩ সালে ফিডার পদধারী সার্ভেয়ার, তফসিলদার ও ড্রাফটসম্যান পদ থেকে ২৩৫ জনকে কানুনগো পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। এরপর আর কোনো পদোন্নতি হয়নি। ফলে ২৫ থেকে ৩০ বছর একই পদে কর্মরত পদোন্নতিপ্রত্যাশীরা আদালতের আশ্রয় নেন। পদোন্নতি বঞ্চিতদের হাইকোর্টে রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালে হাইকোর্ট বিভাগ পদোন্নতি কার্যকরের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদানসহ রায় প্রদান করেন। এর পরও ভূমি মন্ত্রণালয় পদোন্নতি প্রদান না করায় ২০১২ সালে আদালত অবমাননা মামলা (কনটেম্পট) হয়। ২০১২ সালে আদালত শূন্যপদ পূরণে দ্রুত পদোন্নতির নির্দেশনা দেয়। এরপর আদালতের আটটি মামলার রায় বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয় থেকে সুপারিশ চেয়ে পিএসসিতে প্রস্তাব পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে পিএসসি দ্রুত নিয়োগের সুপারিশ করে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সুপারিশপ্রাপ্তদের জিও জারির বিষয়ে ভূমিমন্ত্রী গত ২৮ এপ্রিল ৫৭৩ জনের নথি অনুমোদন করেন। কিন্তু জিও জারি নিয়ে কালক্ষেপণ হওয়ায় গত মে মাসে আবারো উচ্চ আদালতে মামলা হয়। ফলে পদোন্নতি আটকে যায়। এরপর সরকার পক্ষ একের পর এক সময় নেয়ায় মামলাটি দীর্ঘসূত্রতার কবলে পড়ে। গত ২৭ অক্টোবর বিচারপতি মামনুর রহমান ও বিচারপতি খিজির হায়াৎ-এর বেঞ্চ ওই মামলার রায়ে শূন্যপদে পদোন্নতি দিয়ে ১১ নভেম্বরের মধ্যে তা আদালতকে জানাতে বলেছে। এই অবস্থায় দ্রুত শূন্যপদ পূরণে মন্ত্রণালয় যথাযথ পদক্ষেপ নেবে বলে তারা আশা করছেন।
এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট রাসেল আহমেদ বলেন, নানা অজুহাতে দীর্ঘ ১৬ বছর পদোন্নতি বা নিয়োগ আটকে রাখা হয়। কিন্তু এখন আর কোনো বাধা নেই। আগে আদালতে মামলার অজুহাত দেখানো হলেও গত ২৭ অক্টোবর আদালত দ্রুত পদোন্নতির নির্দেশ দিয়েছেন। ওই পদে যোগ্য ব্যক্তিদের পদোন্নতি দিতে মন্ত্রণালয় দ্রুত পদক্ষেপ নেবে এমনটাই সবাই আশা করছে।

এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কাজের সুবিধার্থে যোগ্যদের পদোন্নতি দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু ওই পদে পদোন্নতির যোগ্য বিভিন্ন গ্রুপ আদালতে পরস্পরের বিরুদ্ধে মামলা করে। এতে পদোন্নতি প্রক্রিয়াটি আটকে যায়। সার্বিক বিষয়টি পর্যালোচনা শেষে বর্তমানে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ চলছে। আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে। তবে পদোন্নতি নিয়ে এখনো সংশয়ে আছেন ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা সার্ভে ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিএসইবি) চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর তুষার।

তিনি বলেন, দীর্ঘ দিন পদোন্নতি আটকে থাকায় পদোন্নতি প্রত্যাশী সার্ভেয়ারদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। কাজকর্মেও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সারা দেশে ভূমি ব্যবস্থাপনায় ই-নামজারি চালু করা ও অটোমোটেড কমপেনসেশন পেমেন্ট সিস্টেমের (এসিপিএস) মাধ্যমে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ কাজ শুরু হয়েছে। এই কার্যক্রমসহ সামগ্রিক ভূমি ব্যবস্থাপনায় কানুনগো খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদ। এই পদে পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় ভূমি ব্যবস্থাপনায় নানাবিধ জটিলতা তৈরি হয়েছে। সরকার এই জটিলতা দ্রুত নিরসন করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

Share this post

scroll to top