রাজধানীর ধানমন্ডিতে গৃহকর্ত্রী আফরোজা বেগম ও গৃহকর্মী দিতির হত্যা মামলার প্রধান আসামি সন্দেহভাজন ওই নারী গৃহকর্মীকে সুরভীকে আটক করেছে পুলিশ। রোববার রাতে আগারগাঁও থেকে তাকে গ্রেফতার করে শেরেবাংলানগর থানা পুলিশ। রাতে এখবর লেখা পর্যন্ত ওই নারীকে ধানমন্ডি থানায় নেয়া হচ্ছিলো।
এর আগে এ মামলায় আরো পাঁচজন পুলিশ হেফাজতে রয়েছে বলে জানিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এ ঘটনায় নিহত আফরোজার বেগমের মেয়ে অ্যাডভোকেট দিলরুবা সুলতানা রুবা বাদি হয়ে রোববার একটি হত্যা মামলা করেন।
পুলিশ জানায়, ওই ভবনের সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ওই গৃহকর্মীর প্রবেশ ও বাইরে যাওয়ার মাঝে আর কেউ ওই বাসায় প্রবেশ করেনি। গৃহকর্মীকে আটক করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এ হত্যা রহস্যের কিনারা করা যাবে বলে দাবি পুলিশের। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, শুক্রবার দুপুর ৩টার পর বাসায় ঢোকে ওই নারী। টানা তিন ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ৬টায় বেরিয়ে আসে সে। স্বজনরা জানান, নিহত গৃহকর্ত্রী আফরোজা বেগমের মেয়ে জামাইয়ের বডিগার্ড বাচ্চু ওই নারীকে বাসায় নিয়ে আসেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ধানমন্ডি জোনের এডিসি আব্দুল্লাহিল কাফি ওই নারী গৃহকর্মীকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মেয়েটিকে আটক করে ধানমন্ডি থানায় নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে এখনই বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরিবর্তীতে জানানো হবে।
গত শুক্রবার রাতে ধানমন্ডির ফ্ল্যাটে গিয়ে নিহত আফরোজা বেগম ও দিতির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। খবর পেয়ে ওই রাতেই সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে ফ্ল্যাটে আগতদের হাত-পায়ের ছাপসহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে। এ ঘটনায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। তারা হলেন-বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী, নিহত আফরোজার জামাতা কাজী মনির উদ্দিনের বডিগার্ড বাচ্চু এবং ভবনের ইলেকট্রিশিয়ান বেলায়েত।
পরের দিন শনিবার আফরোজা বেগম ও দিতির ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ময়নাতদন্তে গলাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, আফরোজা বেগমের পেটে, বুকে ছুরিকাঘাত করা হয়। এর মধ্যে একটি আঘাত তার কিডনি ভেদ করে। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। এছাড়া গৃহকর্মীকে ছুরিকাঘাত করা হয়, গলা কাটার কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।
পুলিশ জানায়, এক ব্যক্তির মাধ্যমে নতুন গৃহকর্মী নিয়োগ দেয়া হয়। ওই ব্যক্তির মাধ্যমে ও সিসি ফুটেজের মাধ্যমে ওই গৃহকর্মীর ছবি সনাক্ত করা হয়েছে। তাকে গ্রেফতার করতে পারলেই হত্যাকা-ের মোটিভ উদ্ঘাটন হবে।
শেরেবাংলা নগর থানার ওসি জানে আলম মুন্সি বলেন, ধানমন্ডিতে জোড়া খুনের ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন আসামী গৃহকর্মী সুরভীকে রাত সাড়ে ৯টার দিকে শেরেবাংলা নগরের একটি হাসপাতালের সামনে থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে ওই নারীকে ধানমন্ডি থানার কাছে হস্তান্তর করা হয়।
জানা গেছে, ওই বাড়ির চারতলার ফ্ল্যাটে থাকতেন আফরোজা ও গৃহকর্মী দিতি। উপরে পাঁচতলার ফ্ল্যাটে থাকতেন তার মেয়ে দিলরুবা সুলতানা ও জামাই মনির উদ্দিন তারিম। শুক্রবার বিকাল ৩টায় তারিমের পিএস বাচ্চু এক নারীকে নিয়ে বাসায় আসেন। ওই নারী বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করার কথা বলে বাচ্চুর সাথে ওপরে যায়। এরপর ৬টার দিকে বাচ্চু একবার লুঙ্গি পরে নিচে নামে। এর কিছুক্ষণ পর ওই নারী চলে যায়। তারপর বাচ্চুও প্যান্ট-শার্ট পরে চলে যায়। তারপর ওপর থেকে আমাকে একটা ছেলে ফোন দিয়ে জানায় খালাম্মা মারা গেছে। এরপর লোকজন আসেন।