ময়মনসিংহ লাইভ ডেস্ক: বাংলাদেশ ক্রিকেটে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ একজন পার্শ্বনায়কের নাম। ২০১৫ সালটা বদলে দিয়েছে তার ভূমিকা। রিয়াদ এখন নায়ক। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি করেছেন মিডল অর্ডার এই ব্যাটসম্যান। ঘরের মাঠে ভারত সব সময় অপ্রতিরোধ্য। তার ওপরে সফরের ঠিক আগে সাকিব আল হাসানের নিষেধাজ্ঞার দুঃসংবাদ স্তব্ধ করে দিয়েছিল বাংলাদেশকে। ব্যক্তিগত কারণে তামিম ইকবাল আর ইনজুরিতে পড়ে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের অনুপস্থিতির ধাক্কা তো ছিলই। রবিবার দিল্লিতে প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজে নিষেধাজ্ঞায় ছিলেন সাকিব আল হাসান, ছুটিতে তামিম ইকবাল। দুই সিনিয়র ব্যাটসম্যান না থাকলেও ভারত সফরে গিয়ে চমক দেখালো বাংলাদেশ। ভারতের মাটিতে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৩ বল হাতে রেখে ভারতের মাটিতে ভারতকে ৭ উইকেটে বধ করলো ময়মনসিংহের গর্ব মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল।
এর আগে টি-টোয়েন্টিতে ৮ বারের দেখায় ভারতের কাছে প্রত্যেকবার হেরেছিল বাংলাদেশ। ২০১৬ সালের বিশ্বকাপের সুপার টেনে ও গত বছর নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে জয়ের খুব কাছে গিয়েও ব্যর্থ হয় তারা। এবার মুশফিকুর রহিমের অপরাজিত ফিফটিতে প্রথমবার কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে ভারত বধ করে ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশ, তাও আবার ভারতের মাটিতেই।
লক্ষ্যে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি সফরকারীদের। প্রথম ওভারে উইকেট হারায় বাংলাদেশ। লিটন দাস ইনিংসের পঞ্চম বলে দীপক চাহারের শিকার হন। ৪ বলে ৭ রান করে কভার পয়েন্টে লোকেশ রাহুলের হাতে ধরা পড়েন এই ওপেনার।
প্রথম ওভারে লিটন ফিরলেও অভিষেক ম্যাচে মোহাম্মদ নাঈম আশা জাগানিয়া ব্যাট করছিলেন। কিন্তু যুজবেন্দ্র চাহালের প্রথম ওভারে শিখর ধাওয়ানের ক্যাচ হন এই ওপেনার। সৌম্য সরকারের সঙ্গে তার ৪৬ রানের জুটি ভেঙে যায়। ২৮ বলে ২ চার ও ১ ছয়ে ২৬ রান করেন নাঈম।
সৌম্যর সঙ্গে নাঈমের জুটি পঞ্চাশ ছুঁতে পারেনি। তবে তৃতীয় উইকেটে মুশফিকের সঙ্গে সৌম্যর পঞ্চাশ ছাড়ানো জুটিতে লড়াই চালিয়ে যায় বাংলাদেশ। উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানের সঙ্গে ৬০ রানের জুটি গড়ে বিদায় নেন সৌম্য। ৩৫ বলে ১ চার ও ২ ছয়ে ৩৯ রান করে খলিল আহমেদের কাছে বোল্ড হন বাংলাদেশি ওপেনার।
সৌম্যর বিদায়ের ধাক্কা বাংলাদেশ কাটিয়ে ওঠে মুশফিকের ব্যাটিংয়ে। শেষ ৩ ওভারে ৩৫ রান দরকার ছিল তাদের। ১৮তম ওভারের তৃতীয় বলে মুশফিক জীবন পাওয়াই ছিল ম্যাচের মোমেন্টাম। ৩৯ রানে ডিপ মিড উইকেটে ক্রুনাল পান্ডিয়ার হাতে জীবন পান তিনি। চাহালের ওই ওভারে উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানের বল হাতে রাখতে পারেননি পান্ডিয়া, হয় বাউন্ডারি। শেষ বলে মাহমুদউল্লাহ চার মেরে ব্যবধান কমান।
৪১ বলে ৬ চার ও ১ ছয়ে ফিফটি করেন মুশফিক। ১৯তম ওভারের শেষ চার বলে টানা ৪টি বাউন্ডারিতে বাংলাদেশকে জয়ের কাছে নিয়ে যান তিনি। শেষ ওভারের তৃতীয় বলে ডিপ মিড উইকেটে ৬ মেরে জয় নিশ্চিত করেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। ৪৩ বলে ৮ চার ও ১ ছয়ে ৬০ রানে অপরাজিত ছিলেন মুশফিক। ৭ বলে ১টি করে চার ও ছয়ে ১৫ রানে খেলছিলেন মাহমুদউল্লাহ। মাত্র ১৫ বলে ৪০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন তারা। ভারতের পক্ষে একটি করে উইকেট নেন চাহার, চাহাল ও খলিল। ম্যাচসেরা হয়েছেন মুশফিক। এর আগে ভারতের বিপক্ষে টস জিতে ফিল্ডিং নেয় বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহর এই সিদ্ধান্তে সুফল পায় সফরকারীরা। ৬ উইকেটে ১৪৮ রানে ভারতকে থামিয়েছে বাংলাদেশ। ১৪৯ রানের টার্গেট তাদের।
আমিনুল ইসলাম ও শফিউল ইসলাম দুটি করে উইকেট নিয়ে ভারতের রানের লাগাম টেনে ধরেন। আল আমিন হোসেনও ছিলেন প্রথম তিন ওভারে বেশ মিতব্যয়ী। কিন্তু শেষ দুই ওভারে স্বাগতিকরা ৩০ রান আদায় করে। তাতে চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে তারা। শিখর ধাওয়ান সর্বোচ্চ ৪১ রান করেন ৪২ বল খেলে। শেষ দিকে ওয়াশিংটন সুন্দর ও ক্রুনাল পান্ডিয়া ছোটখাটো ঝড় তোলেন। ক্রুনাল ১৪ ও ওয়াশিংটন ১৫ রানে অপরাজিত ছিলেন।
শফিউল ও আমিনুল সর্বোচ্চ দুটি করে উইকেট নেন। তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে থেকে আগামী বৃহস্পতিবার রাজকোটে দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।