নবম ওয়েজবোর্ড সংশোধনে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা হবে : রুহুল আমিন গাজী

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেছেন, এ দেশের গণমাধ্যম এখন ইতিহাসের এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। গণহারে চাকরিচ্যুতি, বেতন-ভাতার অনিশ্চয়তা, নিত্যনতুন কালাকানুন জারি করে মতপ্রকাশের কণ্ঠরোধ, মামলায় জড়িয়ে গ্রেফতার হয়রানি দুর্বিষহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এর বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ করে ঢাকায় সাংবাদিক মহাসমাবেশের মাধ্যমে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। গতকাল শনিবার খুলনায় অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। নগরীর হোটেল রয়্যাল ইন্টারন্যাশনালের কনফারেন্স রুমে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

গণমাধ্যমে বিরাজমান অস্থিরতা নিরসন, গণহারে চাকরিচ্যুতি বন্ধ, প্রতারণা ও প্রবঞ্চনার নবম ওয়েজবোর্ড সংশোধন, সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতনের বিচার, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও বন্ধ মিডিয়া খুলে দেয়ার দাবিতে নগরীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনার সভাপতি মো: আনিসুজ্জামান। ইউনিয়নের সহসভাপতি এহতেশামুল হক শাওনের পরিচালনায় স্বাগত বক্তৃতা করেন সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) আবুল হাসান হিমালয়। এতে প্রধান বক্তা ছিলেন ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ।

কর্মসূচীর সাথে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমীর এজাজ খান, বিজেপি সভাপতি অ্যাডভোকেট লতিফুর রহমান লাবু, বার কাউন্সিলের সাবেক সদস্য ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল মালেক, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা: সেখ আখতার উজ জামান ও ড্যাবের মহানগর সাধারণ সম্পাদক ডা: শওকত আলী লস্কর। অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা দেন এমইউজের সাবেক সহসভাপতি আবদুল খালেক আজীজী ও মো: রাশিদুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এইচ এম আলাউদ্দিন, সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক রফিউল ইসলাম টুটুল, কোষাধ্যক্ষ আবদুর রাজ্জাক রানা, সদস্য কে এম জিয়াউস সাদাত ও সামছুল আলম খোকন।

বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজী আরো বলেন, আওয়ামী লীগ কখনোই সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে ছিল না। স্বাধীনতার পর তারাই ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন দেশের সব পত্রিকা বন্ধ করে মাত্র চারটি দৈনিক পত্রিকা রেখেছিল। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেও দেশের সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তারা আমার দেশ বন্ধ করেছে। দিগন্ত টেলিভিশন, চ্যানেল ওয়ান, ইসলামী টিভি, দৈনিক আমার দেশসহ বহু মিডিয়া বন্ধ করেছে। তাদের এই আমলে মাহমুদুর রহমান-শওকত মাহমুদসহ অসংখ্য সাংবাদিককে মিথ্যা মামলায় দিনের পর দিন কারাগারে বন্দী রাখা হয়েছে। প্রতিনিয়ত সারা দেশে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। অথচ একটি ঘটনারও বিচার হচ্ছে না। একশ্রেণীর সাংবাদিকের অতিমাত্রার দালালির কারণে সাংবাদিক সমাজ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

নবম ওয়েজবোর্ডকে সাংবাকিদের স্বার্থপরিপন্থী আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, নতুন ওয়েজবোর্ডে সাংবাদিকদের পেনশন বাতিল এবং বছরে দু’টি গ্রাচ্যুয়িটির স্থলে একটি করা হয়েছে। আগে সাংবাদিক কর্মচারীদের আয়কর মালিক পক্ষ দিত। এখন তা সাংবাদিকদের পরিশোধ করতে হবে। সবচেয়ে বড় যে প্রতারণা হলো এতে বলা হয়েছে, এই ওয়েজবোর্ড পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। অর্থাৎ মালিকপক্ষ তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী বেতন দেয়ার ক্ষমতা পেয়েছে। এসব ধারায় সংশোধন না এলে সাংবাদিকদের নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

 সমাবেশের প্রধান বক্তা বিএফইউজের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ বলেন, সারা দেশে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাংবাদিক ছাঁটাই করা হচ্ছে। ছাঁটাইকৃত সাংবাদিকরা বিএনপি কিংবা জামায়াত সমর্থক নন। তারা সরকারেরই সমর্থক। অথচ সরকারি দলের তাঁবেদারি করার কারণে স্বাভাবিকভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ জানানোর শক্তিও তারা আজ হারিয়ে ফেলেছেন। মিথ্যাকে সত্য বানিয়ে, সত্যকে ঢেকে রেখে যারা সরকারের তাঁবেদারি করেছেন, সেসব মিডিয়া এখন মাসের পর মাস, বছরের পর বছর তার সাংবাদিক-কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছে না।

Share this post

scroll to top