ময়মনসিংহে সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান‌্য করে চলছেই কোচিং সেন্টার

জেএসসি পরীক্ষা চলাকালীন কোচিং বন্ধ রাখার সরকারের নির্দেশনার পরও ময়মনসিংহে অধিকাংশ কোচিং সেন্টার বন্ধ করা হয়নি। কোচিং পরিচালকরা বলছেন, শিক্ষার্থী ধরে রাখতে তারা কোচিং চালিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে, প্রশাসন বলছে কোচিং বন্ধে সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি মনিটরিং টিম কাজ করছে।

জেএসসি পরীক্ষা চলাকালীন আজ শনিবার ময়মনসিংহ নগরীর কোচিং সেন্টারখ্যাত বাউন্ডারী রোড, নাহা রোড, জিলা স্কুল রোড এবং সাহেব আলী রোডে গিয়ে দেখা যায় অধিকাংশ কোচিং সেন্টার চালু রয়েছে।

তবে কয়েক দিন আগে কণিকা ক্যাডেট কোচিংয়ের পরিচালক মাহবুবুল আলমকে ভ্রাম‌্যমাণ আদালত সাত দিন কারাদণ্ড, কয়েকটি কোচিং সেন্টার সিলগালা ও জরিমানা করায় অনেকেই কোচিং বন্ধ রেখেছেন।

সাড়া বাংলা বিদ্যা কোচিং সেন্টারের পরিচালক মোখলেছুর রহমান সকালে বলেন, ‘‘স্কুলে ভালো পড়াশোনা হয় না। আমার কোচিং সেন্টারে জিলা স্কুল এবং বিদ্যাময়ী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। সকালে কয়েকটি ব্যাচের মডেল টেস্ট পরীক্ষা নেয়া হয়েছে।’’

তিনি বলেন, ‘‘আমি দীর্ঘদিন ধরে কোচিংয়ের সঙ্গে জড়িত। সাম্প্রতিক সময়ে কোচিং বাণিজ্যে অনেক শিক্ষক জড়িয়ে পড়েছেন। অনেক শিক্ষার্থী ভালো-মন্দ না বুঝে অনেক শিক্ষকের কাছে চলে যাচ্ছে। তাই কোচিং সেন্টার বন্ধে সরকারের নিষেধাজ্ঞার পরেও শিক্ষার্থী ধরে রাখতে রিস্ক নিয়ে পড়াচ্ছি।’’

বিদ্যাময়ী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সুমাইয়া তাবাসুম, আবা আরিফিন তিমা এবং মাহমুদা সুলতানা রিয়া বলেন, ‘‘আমাদের ফাইনাল পরীক্ষা ২৭ নভেম্বর থেকে। কোর্স শেষ না হওয়ায় মোখলেছ স্যার বলছেন- কোচিংয়ে আসার জন্য, তাই এসেছি। স্যার বললে আমাদের বাধ্য হয়ে আসতে হয়। কোচিং বন্ধ করে দিলে আমরা আসবো না।’’

শিক্ষার্থীদের অভিভাবক আশরাফ জামান এবং সুরাইয়া শারমিন বলেন, ‘‘আমরা সরকারের নির্দেশনার উপর শ্রদ্ধাশীল। কোচিং খোলা রাখলে আমার মেয়ে না আসলে অন্যের মেয়ে আসবে। তখন আমার মেয়ে ওই বিষয়ে পিছিয়ে পড়বে। তাই বাধ্য হয়ে মেয়েকে নিয়ে আসতে হয়েছে। স্যার না করে দিলে আর আসবো না।’’

বাউন্ডারী রোডে নিজ বাসায় কোচিং করাচ্ছেন আনন্দ মোহন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ কে এম মাকসুদুল আলম। তিনি বলেন, ‘‘সামনে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা। তাই তাদের কথা চিন্তা করে আমি কোচিং করাচ্ছি। এতে অন্যায়ের কিছু দেখছি না। আমি কোচিং করায় সেটা আমার কর্তৃপক্ষও জানে।’’

বাউন্ডারী রোডে অগ্রণী কিন্ডারগার্টেনের আড়ালে চলছে রমরমা কোচিং বাণিজ্য। শনিবার সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় জিলা স্কুল, বিদ্যাময়ী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ কয়েকটি নামকরা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের কোচিং করানো হচ্ছে।

হাসান মেহেদী ও মানিকা আনঞ্জুম নামে এই দুই শিক্ষার্থী বলেন, ‘‘আমরা ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার জন্য এখানে কোচিং করছি। স্যাররা আমাদের বলছেন, কোচিং বিষয়ে কারো সঙ্গে কথা না বলতে।’’

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘‘কোচিং নয়, কিন্ডারগার্টেন হিসেবেই এখানে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা আমাদের প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার পাশাপাশি অন্য প্রতিষ্ঠানে ভর্তির চেষ্টা করছে। তাই এমনটি হয়ত বলেছে।’’

সাহেব আলী রোডে নিজের নামে প্রতিষ্ঠিত হোসেন আলী ক্যাডেট কোচিং সেন্টারের পরিচালক হোসেন আলী বলেন, ‘‘ছাত্র রাজনীতি করার পাশাপাশি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে সুনামের সঙ্গে কোচিং পরিচালনা করে যাচ্ছি। প্রশাসন এবং রাজনৈতিক দলের নেতারা আমাকে এক নামেই চেনেন। তাদের বাচ্চারাও আমার কাছে পড়াশোনা করে। তাই নিউজ করে কোনো লাভ নেই।’’

জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান বলেন, সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কোচিং সেন্টার বন্ধে মাঠ পর্যায়ে মনিটরিং টিম কাজ করছে। ইতিমধ্যে অনিয়মের অভিযোগে কয়েকটি কোচিং সেন্টার সিলগালা, জরিমানা ও একজনকে সাজাও দেয়া হয়েছে। এখনো যদি কেউ সরকারি সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কোচিং পরিচালনা করেন, তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। সূত্রঃ রাইজিং বিডি

Share this post

scroll to top